Home » অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় ইএসডিও- আরএমটিপির সহযোগীতায় ঠাকুরগাঁওয়ে  ভেটেরিনারি ডায়াগনস্টিক ল্যাব 

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় ইএসডিও- আরএমটিপির সহযোগীতায় ঠাকুরগাঁওয়ে  ভেটেরিনারি ডায়াগনস্টিক ল্যাব 

by নিউজ ডেস্ক
নবীন হাসান  : মানুষের অসুখ হলে দেখানো হয় ডাক্তার। রোগ নির্ণয়ে  নানা রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা  করা হয় ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। কিন্তু মানুষের মত পশু পাখিরও হয় নানা রকম রোগ-ব্যাধি। এসব পশু পাখির কথা চিন্তা করেই ঠাকুরগাঁওয়ে  গবাদি পশুর ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করেছে  তরুণ উদ্যোক্তা ডা: মনিরুজ্জামান । তার এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আধুনিকভাবে ল্যাবে পরীক্ষা নিরীক্ষার সাহায্যে রোগ নির্ণয় ও সুচিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় তার অপারেশন থিয়েটারে গবাদি প্রাণীর সার্জিক্যাল অপারেশনও হচ্ছে। তার এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগ প্রশংসা কুড়াচ্ছে  জেলা জুড়ে ।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ি হাট বাজারের ভেটেরিনারি চিকিৎসক  মুহাম্মদ  মনিরুজ্জামান মিলন । পিতা অধ্যাপক  মরহুম ইমদাদুল হক। মনিরুজ্জামান মিলন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন এ গ্রাজুয়েশন এবং ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ এন্ড ফুড হাইজিন এ পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এরপর ল্যাব ডায়োগনোসিস এর উপর পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়ালেখা শেষ করে তিনি সরকারি চাকরির পিছনে না ছুটে বাবার অনুপ্রেরণায় লাহিড়ি হাট বাজারে ২০২১ সালে   প্রফেসর এমদাদুল হক প্রাণী সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। তার এই সেবা কেন্দ্রে গবাদি প্রাণী, মুরগি এবং মাছের পুকুরের বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। যেমন :ব্লাড প্রোটোজোয়া, এনাপ্লাজমা, থেইলেরিয়া, ট্রেপানোসমা, বেবিসিয়া, রক্তের সিরাম ক্যালসিয়াম, সিরাম এল্বুমিন,  গ্লুকোজ , হিমোগ্লোবিন, গোবর পরীক্ষা, কৃমি শনাক্ত, আলট্রা সাউন্ড মেশিনের মাধ্যমে প্রেগনেন্সি টেস্ট, হেমাচুরিয়া, হেমোগ্লোবিন ইউরিয়া।এছাড়াও সার্জিক্যাল অপারেশন ও পোস্টমর্টেম করা হয় ।
মনিরুজ্জামানের এমন উদ্যোগ ঠাকুরগাঁও- পঞ্চগড় জেলার খামারিদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এতে উপকারের পাচ্ছে খামারি ও পশুপ্রেমীরা। মনিরুজ্জামান কে সব ধরণের সহযোগীতা করেছে পিকেএসএফ এর অর্থায়নে ইএসডিও কর্তৃক বাস্তবায়িত আরএমটিপি ‘র আওতায় নিরাপদ মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার উন্নয়ন প্রকল্প।
লাহিড়ীহাট বাজারের গরু খামারি ফেরদৌস বলেন, প্রায় দশ বছর যাবত গরুর খামার করছি । গরুর অসুখ-বিসুখ হলে সঠিক চিকিৎসা পেতাম না। অনেকটা অন্ধকারে ঢিল মারার মত চিকিৎসা করা হতো। কিন্তু এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি হওয়ার পরে আমরা গরুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছি ।
পঞ্চগড় থেকে আসা জয়নাল আবেদীন বলেন, আমার গরু খুবই অসুস্থ ছিল সুস্থ হচ্ছিল না। মুহাম্মদ  মনিরুজ্জামান মিলনের এখানে এসে গরুর রক্ত ও গোবর পরীক্ষা করে সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পেরেছি। এখন আমার গরু অনেকটাই সুস্থ। এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার হওয়ার পরে এই অঞ্চলের পশু পাখির মৃত্যুর হার কমেছে।  এবং খামারিরা লাভবান হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও শহরের মুন্সিপাড়া গ্রামের রাসু হোসেন জানান, আমার পোষা বিড়ালটির পায়ে ইনফেকশন হয়েছিল। ডা. মোঃ মনিরুজ্জামান মিলন ছোট্ট একটি সার্জারি করে ড্রেসিং করে দেয়। এখন আমার বিড়ালটি সুস্থ।
মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিলনের দাবি ব্যক্তিগত পর্যায়ে এ ধরনের সেবা কেন্দ্র দেশে তিনিই প্রথম দিয়েছেন। গবাদি পশু লালন পালন করে মানুষ বা গ্রামীণ সমাজ যাতে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হতে পারে এবং সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা পেতে পারে তাই তার এমন উদ্যোগ।  মিলন বলেন, আমার বাবার ইচ্ছে ছিল আমি যেন এই অঞ্চলের মানুষের সেবা করতে পারি তারই প্রেক্ষিতে  খামারিদের কথা চিন্তা করে প্রত্যন্ত  অঞ্চলে ইএসডিও’র সহযোগীতায় এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি গড়ে তুলেছি। এখানে সব ধরনের পশু পাখির চিকিৎসা করা হয়।এবং  যারা প্রান্তিক পর্যায়ের গরিব কৃষক রয়েছেন তাদের গবাদি পশুর বিনামূল্যে  চিকিৎসা প্রদান করি।  আমি ধন্যবাদ জানাই ইএসডিও ও পিকেএসএফকে ।
মনিরুজ্জামান এর এই উদ্যোগটি চমৎকার উদ্যোগ ।  এর ফলে বিভিন্ন রোগে যে খামারিদের  গবাদি পশু আক্রান্ত হচ্ছে এগুলোকে ডায়াগনোসিস করা সম্ভব হচ্ছে।  তার এই উদ্যোগের ফলে ডেইরি সেক্টর আরো সম্প্রসারিত হবে এবং কৃষকগণ উপকৃত হবে বলে মনে করেন জেলা প্রাণিসম্পদ  কর্মকর্তা ডা: আবুল কালাম আজাদ।
এ বিষয়ে আরএমটিপি প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডা: বাবুল চন্দ্র বর্মন বলেন,ইএসডিও আরএমটিপি প্রকল্পের মধ্যমে গবাদি প্রাণির রোগ নির্নয়ের জন্য  এই ভেটেরিনারী ডায়াগনষ্টিক সেন্টার স্থাপনের জন্য অনুদান প্রদান করা হয়। এখানে ঠাকুরগাঁও জেলা সহ পাশ্ববর্তী জেলা থেকেও খামারীরা নিয়মিত সেবা নিয়ে উপকৃত হচ্ছে এবং নিরাপদ মাংস ও দুধ উৎপাদনে এই  ভেটেরিনারী ডায়াগনষ্টিক সেন্টারটি  বিশাল অগ্রনী ভূমিকা পালন করছে।

You may also like