Home » কমলা চাষে সফল কৃষক ঠাকুরগাঁওয়ের জুয়েল

কমলা চাষে সফল কৃষক ঠাকুরগাঁওয়ের জুয়েল

এক সিজনে অর্ধ কোটি টাকা আয়ের আশা

by নিউজ ডেস্ক

নবীন হাসান : কমলা চাষ করে এক সিজিনে অর্ধ কোটি টাকা আয়ের আশা করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক আবু জাহিদ ইবনুল ইরাম জুয়েল। তার বাগানে চাষ হচ্ছে দার্জিলিং জাতের কমলা।যেই বাগানের নাম দিয়েছেন তিনি অরেঞ্জ ভ্যালি। থোকায় থোকায় ঝুলছে কমলা রঙের পাকা কমলা। ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে ডাল। দার্জিলিং জাতের এই কমলা মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। সবুজ পাতার ফাঁকে ঝুলে থাকা এই কমলা দেখতে ভিড় করছেন প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী।আর এই দর্শনার্থীদের বাগানের ভিতরে ঢোকার জন্য কাটতে হয় টিকিট। যার মূল্য প্রতি জন ৪০ টাকা।

ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে ২০ কি:মি: দক্ষিণে অবস্থিত পীরগঞ্জ উপজেলার ২নং কোষারানীগঞ্জ ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামের কৃষক জুয়েল। ১১ বছর আগে হর্টিকালচার এর কর্মকর্তার পরামর্শে ৩০০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি । সেই চারা জমিতে রোপণ করার দুই বছরের মাথায় পান ফলন । ভালো ফলনের কারনে বাড়াতে থাকেন বাগানের পরিধি। বর্তমানে ১০ বিঘা জমিতে কমলার গাছ রয়েছে ৭০০টি।এখন তিনি দার্জিলিং জাতের এক বিশাল কমলা বাগানের মালিক।

সেই কমলা বাগানই এখন হয়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী আসছেন এই বাগানে।গাছে ভরা কমলা দেখে খুশি দর্শনার্থীরা। দিনাজপুর জেলা থেকে কমলা বাগান দেখতে আসা দম্পতি ফিরোজ কবির ও লাভলী বেগম জানান , এই কমলা বাগানের অনেক কথা শুনেছি, তাই দিনাজপুর থেকে দেখার জন্য এসেছি। এখানে এসে গাছ ভর্তি এত কমলা দেখে আমরা অভিভূত। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে আমরা বাংলাদেশের কোন বাগানে নেই,মনে হচ্ছে আমরা দার্জিলিং এর কোন একটি কমলার বাগানে রয়েছি।
কথা হয় ঠাকুরগাঁওয়ের মুন্সিহাট থেকে আসা সঞ্চয়ের সাথে, তিনি বলেন আমি ও আমার বন্ধু ফিরোজ দুইজনেই এই কমলা বাগানটি দেখতে এসেছি এর আগে কখনো নিজের চোখে কমলা বাগান দেখা হয়নি।গাছে থোকায় থোকায় কমলা ঝুলছে দেখে খুব ভালো লাগলো।এরপরে আমার পরিবারকে নিয়ে বেড়াতে আসবো এখানে । এবং এখানে কমলা কিনলাম এবং খেলাম, এখানকার কমলা গুলো খুবই সুস্বাদু । আমরা বাইরে যে কমলাগুলো কিনে খাই তার থেকে অনেক বেশি স্বাদ। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো নিজের চোখের সামনে গাছ থেকে ছিঁড়ে কমলা কিনে খেলাম এর আনন্দটাই আলাদা।
বাগানের পাহারাদার হুমায়ুন ইসলাম জানান এই বাগান পাহারা দিয়ে প্রতিদিন ৪০০ টাকা বেতন পাই এতেই আমার সংসার সুন্দরভাবে চলে যাচ্ছে। হুমায়ুনের মতো অনেক নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে।

ইবনুল ইরাম জুয়েল বলেন, গতবারের থেকে এবার ফলন অনেক বেশি এসেছে । গতবার ফলন হয়েছিল ১০ হাজার কেজি এবার আশা করছি ১৫ হাজার কেজি কমলা পাব। এ বছর আমরা ৩৫০ টাকা কেজি দরে কমলা বিক্রি করছি। যা বাগান থেকেই দর্শনার্থীরা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে সাড়ে তিনশ দর্শনার্থী কমলা বাগান দেখতে আসে । আমরা এখানে দর্শনার্থীদের জন্য বসার ব্যবস্থা করেছি, খাবার জন্য রেস্টুরেন্ট করেছি,বিশুদ্ধ পানি ও সেনিটাইজেশনের ব্যবস্থা করেছি। জুয়েল বলেন আমার এই কমলা বাগানের ফলে একদিকে যেমন অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে অন্যদিকে মানুষের বিনোদনের একটা ব্যবস্থা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে মানুষ বেড়াতে আসে খোলামেলা পরিবেশে নিরিবিলি একটু ঘুরতে পারে চা কফি খেতে পারে তাজা ফল খেতে পারে। আমাদের যেহেতু ঘোরাফেরা জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে তাই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আমার মত অনেকেই এরকম বাগান করে লাভবান হতে পারবে। এতে করে আমাদের আমদানি নির্ভরতা কবে আসবে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার, মোছাম্মৎ শামীমা নাজনীন বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলার মাটি বেলে দো-আঁশ ও অম্লীয়। এই মাটি কমলা, মাল্টা ও লেবু জাতীয় ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ইবনুল ইরাম জুয়েলের মতো অনেকেই কমলা বাগানে এগিয়ে আসছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি।

 

 

 

You may also like