লোকায়ন ডেস্ক
যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের। মিসরের সঙ্গে রাফাহ বর্ডার ক্রসিং দিয়ে বের হওয়ার জন্য তথাকথিত দালাল নেটওয়ার্ককে হাজার হাজার ডলার দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানে ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর। ইসরায়েল ছাড়া গাজা ছিটমহল থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় মিসর সীমান্তের সঙ্গে রাফাহ বর্ডার ক্রসিং। যুদ্ধ শুরুর পর কায়রো এই ক্রসিং বন্ধ করে দেয়। ফলে গাজার ফিলিস্তিনিদের কোথাও যাওয়ার উপায় থাকে না।
আল জাজিরার সাংবাদিক জেইন বসরাভি জানিয়েছেন, রাফাহ ক্রসিংয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য ইসরায়েল ও মিসর উভয়কেই দায়ী করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের অসহায়ত্ব এক দল ‘যুদ্ধের মুনাফাভোগীদের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসা হয়ে উঠেছে।’
দ্য গার্ডিয়ানের সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধান অনুসারে, গাজা ছাড়তে মরিয়া ফিলিস্তিনিরা দালালদেরকে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এই অর্থের বিনিময়ে দালালরা তাদের মিসর হয়ে গাজা থেকে বেরিয়ে যেতে সহায়তা করবে। অথচ যুদ্ধ শুরুর আগে কায়রোভিত্তিক চক্রটি মাত্র ৫০০ ডলার নিতো।
দালালদের এই ব্যবসার কারণে অল্প সংখ্যক ফিলিস্তিনিরাই রাফাহ বর্ডার ক্রসিং দিয়ে গাজা ছাড়তে পেরেছে। এর সঙ্গে মিসরীয় গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগও ওঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা এক ফিলিস্তিনি দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, তার স্ত্রী ও সন্তানদের বর্ডার ক্রসিং করানোর জন্য ৯ হাজার ডলার গুণতে হয়েছিল। তবে বর্ডার অতিক্রম করানোর দিন তাকে বলা হলো, বর্ডার ক্রসিং পারমিটের দৈনিক তালিকায় তার স্ত্রী-সন্তানের নাম নেই। ওইদিন তাদেরকে গাজা থেকে বের করে আনার জন্য অতিরিক্ত ৩ হাজার ডলার দাবি করেছিল তারা। ওই ব্যক্তি বলছিলেন, দালালরা গাজাবাসীর রক্ত চুষে ব্যবসা করার চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘের মতে, গাজার জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ এখন বাস্তুচ্যুত। ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলার কারণে বেশিরভাগ মানুষ দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
রাফাহ ক্রসিং নিয়ে খবর প্রকাশ করে এমন ফেসবুক পেজগুলো ফিলিস্তিনিদের বর্ডার ক্রসিংয়ে সাহায্য চাওয়ার বিষয়ক পোস্টে ভরে গেছে।
দ্য গার্ডিয়ান যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে তাদের প্রত্যেকেই বলেছেন, পরোক্ষভাবে দালালদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ করানো হয়েছে। তবে অর্থপ্রদান নগদে করা হয়। আবার তা কখনও কখনও ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে থাকা মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমেও করা হয়।
গাজার এক মার্কিন নাগরিক বেলাল। তাকে বলা হয়েছিল, ভূখণ্ডটি থেকে ১১ সদস্যের একটি পরিবারকে বের করে আনতে তাকে ৮৫ হাজার ডলার সংগ্রহ করতে হবে। ওই ১১ সদস্যের মধ্যে পাঁচজনই ছিল তিন বছরেরও কম বয়সী শিশু।
সিনাই উপদ্বীপ বিশেষজ্ঞ মোহান্নাদ সাবরি বলেছেন, দালালরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ টার্গেট করছে। কোনও পরিবারের কেউ যদি আহত বা অসুস্থ থাকেন, তাহলে তাদের পক্ষে অপেক্ষা করার উপায় নেই, এরাই দালালদের উপযুক্ত টার্গেট। তাদেরকে চাপ দিয়ে ইচ্ছেমতো অর্থ আদায় করা সম্ভব হয়। পরিবারগুলোও যেভাবে পারে অর্থের জোগাড় করে। এটি একটি চক্র।