৫৪
লোকায়ন রিপোর্ট:সকাল হতেই শোনা যায় তাদের হাঁক-ডাক। ছোট ছোট মাইক হাতে বলতে থাকেন, ‘মা-বোনদের কার লাগবে কানের দুল, গলার চেইন, হাতের চুঁড়ি, মাথা আঁচড়ানো চিরুনি, চুল বাঁধার ফিতা, চুলের ক্লিপ, মাথার ব্যান ও নখের নেইলপলিশ। চলে আসুন। রাখবেন হরেক মাল।’ এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ঘুরে ঘুরে ফেরি করে সংসার চালানোর প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করেন তারা। এজন্য তাদের ডাকা হয় ‘ফেরিওয়ালা’ আবার কেউ বলে ‘হরেক মাল বিক্রেতা’। এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছেন ঠাঁকুরগাওয়ের কয়েকশ মানুষ।
বিক্রেতারা পলিথিনের মধ্যে বিভিন্ন রকমের পণ্য সেফটিপিন দিয়ে আটকে কাঁধে নিয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করে থাকেন। বিশেষ করে, গ্রামাঞ্চলের নারী ও শিশুদের কাছে কানের দুল, গলার চেইন, চুড়ি, চিরুনি, চুল বাঁধার ফিতা, ক্লিপ, মাথার ব্যান্ডসহ বিভিন্ন কসমেটিকস পণ্যের বেশ চাহিদা রয়েছে। আবার অনেকে হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কাপড়ও বিক্রি করে থাকেন।
স্থানীয়রা জানান, শহরের দোকানগুলোর চাইতে হরেক মাল বিক্রেতাদের পণ্যসামগ্রীর দাম কম। আবার পছন্দ মতো যাচাই বাছাই করে কেনা যায়। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বেঁচে যায়। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো কমেনি ‘হরেক মালের’ কদর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আকচা ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের কয়েকজন গৃহবধূ হরেক মালের দোকান থেকে কানের দুল ও চুড়ি, মালা কিনছেন। মধুপর গ্রামে গ্রামের সড়কের পাশে আরেক শিশুকে চুলের ক্লিপ কিনতে দেখা যায়।
সদর উপজেলার আকচা পাল পাড়ার গৃহবধূ দিপালী, সুন্দরী, লক্ষী বলেন, আমরা শহরে কেনাকাটা করতে যাই না। ওসব দোকানের জিনিসের দাম বেশি। সাধারণত হরেক মালের বিক্রেতারা বাড়ির কাছে যখন আসে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নিই।
তারা আরও জানান, শহরের দোকানে যাওয়া-আসায় যে টাকা পরিবহন খরচ হয়, সে টাকা দিয়ে ঘরে বসেই হরেক রকমের মাল কেনা যায়। ৫ম শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম খাতুন বলেন, ‘ফেরিওয়ালাদের কাছে বিভিন্ন রকমের জিনিস পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে টিফিনের টাকা জমিয়ে অল্প দামে পছন্দের জিনিস কিনি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলার দুইশত ব্যবসায়ী বিভিন্ন উপজেলায় হরেক রকম মালামাল বিক্রি করেন। এসব ব্যবসায়ীরা ঢাকা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও শহর থেকে বিভিন্ন সামগ্রী পাইকারি দরে কিনে আনেন। পরে প্রত্যন্ত গ্রামে ঘুরে খুচরা দামে বিক্রি করেন।
হরেক মাল ব্যবসায়ী ইয়াসিন আলী, সিরাজুল হোসেন ও আব্দুল মালেক সাংবাদিক কে বলেন, এক যুগেরও অধিক সময় ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যবসা করছেন তারা। হরেক পদের জিনিস বেঁচে তাদের মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা রোজগার হয়। এতে তাদের সংসার খরচ মিটে যায়।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমানারা বন্যা সাংবাদিকে বলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, কিন্তু হরেক মালের কদর কমেনি। শহরে তাদের খুব একটা দেখা না মিললেও গ্রামীণ জীবনে হরেক মালের কদর আগেও ছিল, এখনও রয়েছে। এটা আমাদের সংস্কৃতিরই অংশ।