২২৪
শহর সংবাদদাতা:
ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জের গবাদিপশুর খাদ্য নেপিয়ার ঘাস। এ ঘাস থেকে গবাদিপশুর কাঁচা ঘাসের চাহিদা পূরণসহ ঘাস বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেকে নারী। এই ঘাস দেখতে আখের মতো, লম্বা ৪ থেকে ১০ ফুট বা তার চেয়েও বেশি হয়। এ ঘাস দ্রুত বাড়ে, সহজে জন্মে, পুষ্টিকর, সহজপাচ্য ও খরাসহিষ্ণু। একবার রোপণ করলে ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায় । বৃষ্টি বা বর্ষার পানি জমে থাকে না এমন জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করা হয়। সব ধরনের মাটিতে এ ঘাস রোপণ করা হয়। তবে বেলে-দোআঁশ মাটি বেশি উপযোগী।
উপজেলার নেপিয়ার ঘাস চাষি মানিকনগর গ্রামের ইয়াসিন মোল্লা বলেন, প্রথমে তিনি নিজের গবাদিপশুকে খাওয়ানোর জন্য ১০ কাঠা জমিতে ঘাস লাগায়। নিজের গবাদিপশুকে খাওয়ানোর পরে অতিরিক্ত ঘাস বিক্রয় করা শুরু করি এতে আমার চাষের খরচ উঠে আসে। বিষয়টি আমার কাছে লাভ জনক মনে হওয়ায় আমি নিজের জমি সহ লিজ নিয়ে ৫ বিঘা জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ করেছি। এই ঘাস বিক্রয় করে আমি এখন অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি। বর্তমানে নেপিয়ার ঘাস চাষ করে বিক্রয় করাকে পেশা হিসাবে নিয়েছি। আমার মত এলাকার অনেকে এখন এই ঘাস চাষ করে বিক্রয় করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। আমার মত তারাও ঘাস ব্যাবসা কে পেশা হিসাবে নিয়েছে।
নেপিয়ার ঘাস চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্ষার শুরুতে এ ঘাসের শিকড় বা চারা রোপণ করা হয়। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে প্রথম বৃষ্টির পর জমিতে চারা বা শিকড় লাগালে প্রথম বছরেই ৩-৪ বার পর্যন্ত ঘাস কাটা যায়। চারা বা শিকড় লাগানোর পর যদি রোদ হয় বা মাটিতে রস কম থাকে তাহলে চারার গোড়ায় পানি দিতে হয়। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব দুই-তিন ফুট এক চারা থেকে অন্য চারার দূরত্ব দেড় ফুট করে লাগাাতে হয়। মাটিতে রস না থাকলে চারা লাগানোর পর পানি সেচ দিতে হবে। সাধারণত প্রতি একর জমি রোপণের জন্য সাত-আট হাজার চারা বা শিকড় এর প্রয়োজন হয়। ভালো ফলন ও গাছের বৃদ্ধির জন্য সার এবং পানি প্রয়োজন। বর্ষা মৌসুমে পানির প্রয়োজন না হলেও অন্য সময়ে পানির প্রয়োজন হয়। দেড় থেকে দুই টন গোবর প্রতি একরে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারলে ভাল হয়। গোবর সার না দিলে পরিমান মত রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। বিশেষ করে ঘাস কাটার পর বিঘাপ্রতি ২০ কেজি ইউরিয়া ১০ কেজি পটাশ প্রয়োগ করলে এই ঘাস দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
রামনগর গ্রামের গরুচাষি কৌশিকুল ইসলাম রুমি বলেন, বর্তমানে ধানের বিচালির অনেক দাম তার পরেও ঠিক মত পাচ্ছি না। প্রতিনিয়ত দানাদার খাদ্যের দামও বাড়ছে। এসব কারণে খড়ের বিকল্প হিসেবে নিজের ১বিঘা জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ করে অল্প পরিমান বিচালির সাথে মিশিয়ে গবাদিপশুকে খাওয়ায়।
নেপিয়ার ঘাস সম্পর্কে মুজিবনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.কাজী নজরুল ইসলাম ইসলাম বলেন, নেপিয়ার জাতের ঘাস মূলত থাইল্যান্ডে চাষ হয়। থাইল্যান্ড থেকেই এই ঘাস আমাদের দেশে এসেছে। উৎপাদন খরচ কম,গবাদিপশুর জন্য পুষ্টিকর এবং একবার রোপন করলে ৪-৫ বছর ফলন পাওয়া যায়। তাই উপজেলার কৃষক ও খামারিরা নিজেরাই ঘাস উৎপাদনে ঝুঁকেছেন। অন্যান্য ফসলের চেয়ে এখন ঘাস চাষে লাভ বেশি। প্রতিটি উপজেলায় কম-বেশি সব জায়গায় এখন নেপিয়ার ঘাসের চাষ হচ্ছে। অনেকে নেপিয়ার ঘাস বিক্রয়কে পেশা হিসেবে নিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বি হচ্ছে। ধানের বিচালির আনেক দাম হওয়ায় বেশির ভাগ গরুর খামারিরা নেপিয়ার ঘাস দিয়ে গবাদিপশুর খাদ্যের চাহিদা পূরণ করেছে।। শুকনা বিচালি ও খড়ের তুলনায় সবুজ ঘাসে প্রচুর ভিটামিন রয়েছে। গরুর খাবারের চাহিদা পূরণে এই ঘাস উপকারী। এই ঘাস পশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মাংস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সুস্থ-সবল পশু পালনে সবুজ ঘাস হিসাবে নেপিয়ার জাতের ঘাসের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস কৃষক ও খামারীদের নানা ভাবে সহযোগীতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে।