৭৯
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার কাতিহার এলাকা। আরবিবি ইটভাটার মাটির স্তুপ দিনরাত খুঁড়ছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। কিন্তু কেনো এই মাটি খননের প্রতিযোগিতা ? ইটভাটাটির মাটির স্তুপে স্বর্ণ পাওয়া যাচ্ছে, এমন খবরেই মাটি খননে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এসব মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, গভীর রাত থেকে বিভিন্ন বয়সের সহস্রাধিক মানুষ কেউ কোদাল, কেউ বাসিলা, কেউ খুন্তি নিয়ে স্বর্ণের খোঁজে মাটি খনন করতে শুরু করে। ওই ইট ভাটার মাটির স্তুপে ভাগ্য বদলের আশায় দিন-রাত চলছে যেন মাটি খনন প্রতিযোগিতা।
তবে ভাটায় সংবাদকর্মী দেখলেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, এপ্রিল মাসে হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ওঠে রানীশংকৈল উপজেলার কাতিহার আরবিবি ইটভাটা। বলা হচ্ছে, ওই ভাটায় মাটির নিচে পাওয়া যাচ্ছে সোনা। এমন একটি সংবাদ ভাইরাল হওয়ার পর দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসছেন ভাটায়। সোনা পাওয়ার আশায় ইট তৈরির জন্য স্তূপ করে রাখা মাটির ঢিবিতে চালাচ্ছেন ইচ্ছামতো খনন কাজ।
মাটির স্তুপ খুঁড়ে স্বর্ণ পেলে ভাগ্য বদলাবে, তাই যোগ দিয়েছেন আশেপাশের জেলা উপজেলার বাসিন্দারাও। এখানকার মানুষের দাবি, এই ইটভাটার মাটির স্তুপ খুঁড়লেই পাওয়া যাচ্ছে স্বর্ণ! এরইমধ্যে ভাটার মাটি খুঁড়ে স্বর্ণ পেয়েছেন শতশত মানুষ। তাই দিনের পাশাপাশি রাতের আঁধারেও আলো জ্বেলে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি।
রাতের বেলা ইট ভাটায় মাটির স্তূপগুলো স্বর্ণের মতোই জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। রাতের অন্ধকারে মানুষের হাতে থাকা টর্চ, হারিকেন, মোবাইলফোনের আলোতে ইটভাটার মাটির স্তূপ স্বর্ণালী রূপ ধারণ করেছে। দূর থেকে যে কেউ দেখলেই গভীর অন্ধকারে টর্চের আলোয় আলোকিত স্বর্ণালী এক পাহাড়ের দৃশ্য দেখে চমকে উঠবে যেকেউ। এতে মনে হবে এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে অলৌকিকভাবে কোনো সোনার পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে। হাজারো মানুষের বিশ্বাস আর আস্থা এখন কাতিহারের ইট ভাটার সেই মাটির স্তূপ। কেউ ভাগ্য বদলের আশায় আবার কেউ শখের বসে গভীর রাতে খুঁড়ে চলছেন এই অনাকাঙ্ক্ষিত স্বর্ণ।
স্বর্ণ খোঁজার এই কাণ্ড দেখতে আসা
মধ্যবয়স্ক জোতিন্দ্র রায় বলছিলেন, লোকজন দিন ও রাতের বেলায় আসতেছে। এজন্য আমরাও দেখতে এসেছি। কেবল ঠাকুরগাঁও নয়, দিনাজপুর রংপুরসহ নানা জায়গা থেকে স্বর্ণের খুঁজে আসছেন মানুষ। কেউকেউ স্বর্ণ পাচ্ছে বলছে, কিন্তু কাউকে দেখাচ্ছে না। আবার নিরাশ হয়েও ফিরছেন অনেকেই। ইট ভাটার আশপাশ জুড়ে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী অনেক খাবার দোকান।
মাসখানেকের বেশি ধরে চলছে মাটি খুড়ে স্বর্ণের খোঁজে খনন প্রতিযোগিতা। গ্রামের বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ বাড়ি হতে কোদাল-বসিলা খুন্তি নিয়ে ওই ভাটায় আসছেন দলেদলে। আশপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকেও ছোটখাটো যানবাহন নিয়ে স্বর্ণের সন্ধানে ভাগ্য বদলের জন্য ছুটে এসেছেন নানান পেশার মানুষ।
সোনা পেলে নিজেদের ভাগ্য বদল হবে এই আশায় কেউ বসে নেই।
স্থানীয়রা জানায়, মাটি খুঁড়ে বেশ কিছুদিন থেকেই অনেকে সোনা পাচ্ছেন। তাদের দাবি, ওই ভাটার মাটির স্তূপে বেশ কিছুদিন থেকেই সোনা পাচ্ছেন লোকজন। ইতোমধ্যে অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে।
সম্প্রতি সোনা বিক্রি করে অনেকেই মোটরসাইকেল কিনেছেন, ঘরবাড়ি পাকা করেছেন, জমিজমাও কিনেছেন এমন কথাও অনেকের মুখে শোনা গেছে। কিন্তু কে কে সোনা পেয়েছেন এ কথা স্বীকার করছেন না কেউ। তাদের দাবি, অনেকেই সোনা পেয়েছেন তবে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে পারেন এই ভয়ে মুখ খুলছেন না কেউ।
স্থানীয় বাসিন্দা হালিমা, সাদেকুলসহ আরও কয়েকজন বলেন, ভাটার মাটির স্তূপে সোনা পেয়েছেন কয়েকজন। কিন্তু কে পেয়েছেন এ কথা স্বীকার করছেন না কেউ। তাদের দাবি অনেকেই পেয়েছে, তাই আমারাও খুঁড়ে দেখছি।
রাণীশংকৈল উপজেলার বাঁচোর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য উমের আলী বলেন, এখন পর্যন্ত স্বর্ণ কেউ পেয়েছে এরকম আমি দেখিনি। তবে শুনেছি মানুষ নাকি স্বর্ণ পেয়েছে। এজন্য প্রশাসনকে বলা হয়েছিল। প্রশাসন আসছিল কিন্তু হাজার হাজার লোক জায়গাটা ঘিরে রাখায় তারা কিছুই চেক করতে পারেনি।
ইটভাটার ব্যবস্থাপক লিটন আলী বলেন, ‘কাতিহার সামরাই মন্দিরের পাশ থেকে মাটি খনন করে ইটভাটায় স্তূপ করা হয়েছে। গুজব উঠেছে ওই মাটির স্তূপ থেকে নাকি স্বর্ণের জিনিস পাওয়া গেছে। এরপর থেকেই সাধারণ মানুষ দিন রাত ওই মাটির স্তূপ খনন করে স্বর্ণের সন্ধান করছে।’ তবে কেউ স্বর্ণের কোন অংশ পেয়েছে এ মন খবর তারা পায়নি। তবে সাধারণ মানুষদের ভাটা মালিক নিবিত্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। মানুষ দলে দলে আসছেই।
রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, বিষয়টি এর আগেও জেনেছি। বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন ধরে লোকজন আবার একই কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।