২২৬
লোকায়ন রিপোর্ট: চারদিকে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে সবুজের সমারোহ। জমিতে ফলেছে শীতের নানা রকমের সবজি। তবে এর মধ্যে সবার নজর কেড়েছে বেগুনী রঙের বাঁধাকপি।
স্থানীয়দের পাশাপাশি দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন ভিন্ন রঙের এ বাঁধাকপি দেখতে-কিনতে।
উচ্চ ফলনের পাশাপাশি বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় ‘লালিমা’ নামে নতুন জাতের এ বাঁধাকপি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার কয়েকটি এলাকায় গিয়ে বেগুনী রঙের এ বাঁধাকপির দেখা মেলে। যা কৃষকদের দেখাচ্ছে রঙিন দিনের স্বপ্ন।
চিরাচরিত সবুজ ছাড়িয়ে এবার চাষ হচ্ছে বেগুনি রঙের বাঁধাকপি। সবুজের চেয়ে অল্প পরিচর্যা, আর কম রোগ বালাইয়ের পাশাপাশি অল্প সেচে চাষ করা যায় এই কপি। প্রথমবারের মত রাণীশংকৈল উপজেলায় এক একর জমিতে চাষিরা চাষ করেছেন এই রঙিন বাঁধাকপি।
উপজেলার রাউতনগর এলাকার চাষি সেলিম রেজা জানান, সবুজ জাতের বাঁধাকপির চেয়ে এই কপি চাষে তুলনামূলক অনেক কম পরিচর্যা করতে হয়। অন্যদিকে রোগবালাই তেমন নেই বললেই চলে। অনেক সুবিধা রয়েছে। অন্যান্য ফসলে যেমন প্রতিদিন পরিশ্রম করতে হয়, এই কপি চাষে তার প্রয়োজন হয় না। ফলে এটি চাষ অনেক সহজ। সবুজ জাতের বাঁধাকপিতে রোগবালাই বেশি। আবার পানি সেচ একটু বেশি হলে পচন ধরে যায়। কিন্তু বেগুনি রঙের বাঁধাকপি চাষে এসব অসুবিধা নেই। পচন খুবই কম ফলে সার কিটনাশকও লাগে কম।
তিনি আরও জানান, নতুন জাত হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে চাহিদা ভালো। সবুজ বাঁধাকপি বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রির জন্য বসে থাকতে হয়। কিন্তু এই কপি বাজারে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায়। দামও পাওয়া যায় ভালো।
উপজেলার জওগাঁও এলাকার আরেক কপি চাষি আলমগীর বলেন, সবুজ বাঁধাকপির তুলনায় এই কপি খেতেও স্বাদ বেশি। দেখতেও অনেক সুন্দর। তাই জমি থেকেই কপি বিক্রি হয়ে যায়। আমরা প্রথম চাষ করেছি, দামও বেশ ভালো পেয়েছি। ইচ্ছে আছে আগামীতে আরও বেশি কপি চাষ করার।
রাণীশংকৈল উপজেলার হোসেগাঁও ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. একরামুল করিম বলেন, সব ধরনের রঙিন শাক সবজিতে সবুজগুলোর তুলনায় ভিটামিন বেশি থাকে। ফলে এখন সবুজ শাকসবজির পাশাপাশি এই ধরনের রঙিন সবজি চাষ বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গবেষণায় দেখা গেছে এই কপি ভিটামিন সি ও কে সমৃদ্ধ। এই কপিতে চর্বি নেই বললেই চলে। পাশাপাশি এই কপি ক্যানসার প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী। ফলে এটি খাওয়া মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী।
তিনি আরও জানান, এই কপি চাষে আমরা কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে করে এই কপি চাষ বৃদ্ধি পায়। এই বাঁধাকপি চাষে একদিকে যেমন মানুষের মানবদেহের বাড়তি পুষ্টির চাহিদা মিটবে অন্যদিকে কৃষক অনেক বেশি লাভবান হবে।
রাউতনগর এলাকার কৃষক আইনুল হক জানান, তার জমিতে ভিন্ন কিছু চাষ করার ভাবনা থেকে লাল বাঁধাকপি চাষ করেছেন। রঙিন লাল বাঁধাকপি দেখতে সুন্দর। ভিতরে টুকটুকে লাল ও স্বাদে কিছুটা মিষ্টি হওয়ায় এর চাহিদাও বেশি। এরই মধ্যে বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। এই লাল বাঁধাকপি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন। ৮০-৯০ দিনে কপিগুলো পরিপক্ব হয়ে বিক্রির উপযোগী হয়। অল্প টাকা খরচ করে আমি বেশ লাভ পেয়েছি। আগামীতে আরও বেশি জমিতে এ জাতের কপির চাষ করব।’
উপজেলার ভাণ্ডারা এলাকার আসাদুজ্জামান আসাদ মো. সোহরাব হোসেন , মো. আলাউদ্দিনসহ কয়েকজন জানান, এর আগে এ এলাকায় লাল বাঁধাকপি দেখা যায়নি। বীজ বপনের অল্প সময়েই সারি সারি বাঁধাকপি জমিতে ছেয়ে যায়। ওপরের পাতা ছিঁড়ে ফেললেই বের হয়ে আসে লাল টসটসে বাঁধাকপি। সবুজের ভিতরে বেগুনী কপি এ উপজেলায় প্রথম।
রাণীশংকৈল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, দিনাজপুর অঞ্চলের টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে উপজেলায় প্রথমবারের মতো রঙিন বাঁধাকপির চাষ হয়েছে। প্রথমবার চাষ করেই সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা।
তিনি আরও জানান, প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন সি, ই, কে, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যারোটেনেয়ড সমৃদ্ধ সবজি হচ্ছে বাঁধাকপি। এই সবজি ক্যান্সার ও আলসার প্রতিরোধে কাজ করে।
তিনি আরও বলেন গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নিয়মিত বাঁধাকপি খেলে রক্তচাপ কমে, হজমশক্তি বাড়ায়, প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এবছর রাণীশংকৈল উপজেলায় এক একর জমিতে চাষ হয়েছে এই নতুন সবজিটি।