ইসমাইল খান শামীম, পেশায় একজন উদ্যোক্তা। কাজ করেন আম চাষিদের জন্য। নিজেও তৈরি করেছেন বিশাল আকৃতির আম বাগান। তাই আম চাষি হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত তিনি। ছোট থেকে তার পছন্দ গাছ পালা। তাই আম ব্যবসার পাশাপাশি নিজের বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন মরুভূমির অ্যাডেনিয়াম বা ডেজার্ট রোজ। তাই ছাদ তার অনন্য কার্যক্রমের একটি অংশ। এখন তার ছাদ বাগানে আছে ৮০ রঙের অ্যাডেনিয়াম ফুল। যা মরু গোলাপ নামে পরিচিত।
বলছিলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাইলিং মোড় এলাকার খান পাড়ার বাসিন্দা ইসমাইল খান শামীমের বাড়ির ছাদ বাগানের কথা।
ইসমাইল খান শামীম বলেন, কয়েক বছর আগে আমি থাইল্যান্ড গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আমি বেশ কিছু স্থানে এই অ্যডেনিয়াম (মরু গোলাপ) দেখে মুগ্ধ হই। তাদের কাছে জানতেও চাইলাম এই মরু গোলাপ কি বাংলাদেশে চাষ করা সম্ভব। কিন্তু তারা বললেন, এটি শুধুমাত্র মরুভূমির ফুল হাওয়ায় বাসায় চাষ করে সফল হওয়া সম্ভব না।
কিছুদিন পরে আমি বাংলাদেশে এসে খোঁজ নিলাম এই মরু গোলাপের। বেশ কিছু ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিলাম। পরে একজন আমার পোস্টে সাড়া দিয়ে মরু গোলাপের চারা দিতে চাইলেন এক ব্যক্তি। তার কাছ থেকে মূলত মরুর গোলাপের চারা নিয়ে ২০১৯ সালে শুরু করেছি।
এখন আমার ছাদ বাগানে প্রায় ৮০ রঙের অ্যাডেনিয়াম ফুলের গাছ রয়েছে। আমার কিছু কিছু গাছ আছে যা এখন বিক্রি হবে ১০ হাজার টাকার বেশি দরে। কিন্তু আমি চারা কিনেছিলাম মাত্র ৩০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। তাই আমার মনে এই মরু গোলাপ বাণিজ্যিকভাবেও চাষ করা সম্ভব।
এই উদ্যোগটা আরও বলেন, আমার গাছগুলোতে লাল, মেরুন, গোলাপি, ঘিয়ে, সাদা, হলদে, নীলাভ,কালোসহ ৮০ রঙের ফুল ফোটে। যা দেখতে আসেন দূর-দূরান্তের মানুষ। আর এতে আমার খুব ভালো লাগে। আগামীতে ইচ্ছা আছে বাণিজ্যিকভাবে মরু গোলাপ চাষ করার।
তিনি আরও বলেন, এই ফুলটি একটি মরুভূমির উদ্ভিদ। এটি ভার্মি কম্পোস্ট, হাড়ের গুড়া, বেলে দোআঁশ মাটি দিয়ে টবে লাগাতে হয়।
ইসমাইল খানে শামীমের ছাদ বাগান দেখতে এসেছেন পাশের মহল্লার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি অনেকবার শুনেছি শামীম ভাইয়ের ছাদে অনেক সুন্দর ফুলের গাছ আছে। তাই দেখতে এসেছি। দেখে মন ভরে গেল। এত সুন্দর ফুলের গাছ এর আগে আমি কখনো দেখিনি।
ইসমাইল খান শামীমের, পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা আতিকুর রহমান জ্যাকি। তিনি বলেন, শামীমের ছাদ বাগানে মাঝে মাঝেই আশা হয়। দেখতে খুব ভাল লাগে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি তুলে আপলোড দিলেও সাড়া পাওয়া যায়। তাই মাঝে মাঝে আসা হয়।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় অ্যাডেনিয়াম চাষ অনেক কম। এটি মূলত মরুভূমিতে হয়ে থাকে। তবে এখন বাণিজ্যিকভাবেও অনেক স্থানে এ ফুলের চাষ হচ্ছে। তবে উপজেলায় সেটি এখনো হয়ে ওঠেনি। আগামীতে এই মোরু গোলাপ যদি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। তবে অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
১৭৫২ সালে প্রথম কেনিয়াতে এই ফুলের গাছ খুঁজে পাওয়া যায়। এই ফুলটি প্রধানত মরুভূমিতে দেখা যায়। বর্তমান সময়ে পৃথিবীর সর্বত্র এডেনিয়ামের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। এডেনিয়াম বা ডেজার্ট রোজকে বলা যেতে পারে মরু গোলাপ।