সিদরাতুল মুনতাহা
বিশ্বায়নের যুগে আমাদের জীবনে নানান বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। ডিজিটাল এই যুগে তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের কাজকে করেছে সহজ থেকে সহজতর। সহজলভ্য ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের সুবাদে এখন হাতের মুঠোয় বিশ্ব নিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা। অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এগিয়ে চলেছে। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির জয়জয়কার যখনই আমাদের চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে ঠিক তখনই এর অপব্যবহারও মাথাচড়া দিয়ে উঠেছে, সৃষ্টি হয়েছে নানারকম বিড়ম্বনা, অস্থিরতা ও বুলিংয়ের মতো আতঙ্ক। এই বুলিং বর্তমানে একটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। অপরাধ জগতে অন্যতম একটি অপরাধমূলক কাজ হিসেবে সমাজে অস্থিরতা ছড়িয়ে রেখেছে এই বুলিং।
সাধারণত কাউকে হেয় বা ছোট করার উদ্দেশ্যে সচেতন বা অবচেতনভাবে শারীরিক বা মানসিকভাবে আক্রমণ করাকেই আমরা বুলিং বলে থাকি। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসি-এর মতে, বুলিং হলো এক ধরনের অপ্রত্যাশিত ও আক্রমণাত্মক আচরণ। বুলিং কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। যেমন শারীরিক, মানসিক, মৌখিক কিংবা সাইবার। বর্তমানে দেশে সাইবার বুলিং অতিমাত্রায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায় এই সব বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা।
তারুণ্যের চোখে স্বাধীনতা: ছবিতে বলা গল্প
স্কুল পড়ুয়া শিশুদের মধ্যে ‘স্বাস্থ্য আচরণ’ শীর্ষক সমীক্ষা অনুসারে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ১৫ শতাংশ ছেলে এবং ১৬ শতাংশ মেয়ে অন্ততপক্ষে একবার সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছে এবং প্রতি ৬ জনে ১ জন শিশু বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। শুধু তাই নয়, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৭৬ শতাংশ নারী একবার হলেও সাইবার বুলিং এর শিকার হয়েছে বলে জানা যায় যা অতিমাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তাদের উপর।
বুলিংয়ের ফলে ভিক্টিম হীনম্মন্যতায় ভোগে, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, সৃজনশীল চিন্তার বিকাশ ঘটাতে পারেনা, এমনকি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। অতি সাম্প্রতিক ঘটনা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা এই বুলিংইয়ের স্বীকার হয়েই এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে আত্মহত্যা করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বুলিংয়ের সর্বোচ্চ আক্রমণের শিকার হচ্ছে নারীরা যা তাদের জীবনের জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বুলিং নামক এই অপরাধমূলক কাজ রোধে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। ২০১২ সাল থেকে শুরু করে প্রতিবছর ‘স্টপ সাইবার বুলিং ডে’ উদযাপন সহ নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। সাইবার বুলিং প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বুলিংয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির জন্য জেল, জরিমানা সহ শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
সেই সঙ্গে বুলিংয়ের শিকার হলে আইনি সহায়তা পেতে ক্রাইম ইউনিট, সাইবার পুলিশ সেন্টার সহ ৯৯৯ এ অভিযোগ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সরকারের যথোপযুক্ত পদক্ষেপের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টির ও কোনো বিকল্প নেই। এজন্য দেশে সর্বপ্রকার বুলিং প্রতিরোধে এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়