Home » আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী ঠাকুরগাঁও এর মৎস্য চাষিরা 

আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী ঠাকুরগাঁও এর মৎস্য চাষিরা 

by নিউজ ডেস্ক

নবীন হাসান : ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের মাঝঁগাঁও গ্রামের সাকিব চৌধুরী । করোনার
সময় কলেজ টিউশন কিছুই নেই । সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকা আর বই পড়া। কিন্তু সময় কি আর কাটে! করোনাকালে ঘরবন্দি অবস্থায়
বিষন্নতায় ভুগছিলেন তিনি । ঠিক তখন সিদ্ধান্ত নেন মাছ চাষ শুরু করার। পিকেএসএফ এবং ইএসডিও-এর সার্বিক সহযোগিতা ও
প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বাড়ির পাশে পতিত জমিতে মাত্র ৩৫০০০ টাকা পুঁজি নিয়ে প্রথমে ৫০হাজার লিটারের একটি ট্যাংক তৈরি করে
তেলাপিয়া মাছের রেনুপোনা এনে চাষের কার্যক্রম শুরু করেন তিনি ।
সেখান থেকেই তার যাত্রা শুরু। আধুনিক পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় ট্যাংক তৈরি করে অনেক বেশি মাছ চাষ করে লাভের মুখ দেখতে
থাকেন সাকিব। তার পাশাপাশি পুকুরের সেচ দিয়েও করতে থাকেন মাছের চাষ। বর্তমানে তার রয়েছে তিনটি পুকুর ও দুইটি ট্যাংক। যা
থেকে প্রতি মাসে তিনি আয় করছেন এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা।

সাকিব চৌধুরী বলেন, করোনা মহামারিতে সবাই ঘরবন্দী ছিলাম। সবকিছু বন্ধ ছিল। বাড়িতে বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল
না। ঠিক সেই সময় মাথায় চিন্তা আসে মাছ চাষ করার। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করি মাছের চাষ। শুরুতে বাড়ির
পাশে পরিত্যক্ত জমিতে একটি ট্যাংক দিয়ে শুরু করলেও মাছ চাষের পরিধি এখন বৃদ্ধি করেছি। বর্তমানে আমার তিনটি পুকুরও দুটি
ট্যাংক রয়েছে। যা থেকে আমি এখন মাসে আয় করছি লাখ টাকা।

সাকিবের মতোই ট্যাংকে ও পুকুরে  সেচ দিয়ে  মাছ চাষ করে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রায় শতাধিক মৎস্য চাষী মাসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম
করছেন। যেহেতু ঠাকুরগাঁওয়ের  মাটি উঁচু তাই খরা মৌসুমে পুকুরে পানি থাকে না। এ কারণেই ট্যাংক পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ
পদ্ধতিতে স্বল্প জমিতে স্বল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়। আবার অনেক মাছ চাষী পুকুরে সেচ ব্যবস্থা করেও খরা মৌসুমে মাছ চাষ
করছে।

মৎস্য চাষী আনসারুল ইসলাম ছবি  জানান স্বল্প পুঁজি  ও অল্প জায়গায় করা যায় মাছ চাষ। মাত্র তিন থেকে চার মাসেই বিক্রির
উপযোগী হয় মাছ। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে ঝুকি কম ও মুনাফা বেশি। তাই শিক্ষিত বেকাররাও হতে পারেন স্বাবলম্বী। তিনি আরও
বলেন, আমি আগে চাকরি করতাম চাকরি ছেড়ে এখন মৎস্য চাষ করছি। এখন বর্তমানে আমার সাতটি পুকুর রয়েছে যা থেকে আমি
বছরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আয় করি।

আরেক মৎস্য চাষী মো: শাহেদ হোসেন বলেন, আমি ট্যাংকে মাছ চাষ করছি এতে অনেক উপকার আছে। অল্প জায়গায় অধিক মাছ চাষ
করা যায়। পানি শুকানোর কোন ভয় নেই। নির্বিঘ্নে মাছ চাষ করা যায়।

এই ধরণের মৎস্য খামার সৃষ্টি হওয়ায় তৈরি হয়েছে অনেকের কর্মসংস্থানের। যেখানে কাজ করে অনেক বেকার মানুষই জীবিকা নির্বাহ
করছে।

মাছের খামারে কাজ করা যুবক শরিফুল ইসলাম বলেন, আগে বেকার জীবনযাপন করতাম। এই খামার হওয়ার ফলে আমার মত আরও
বেশ কয়েকজন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এখানে কাজ করে নিজের যেমন চাহিদা পূরণ করতে পারছি তেমনি পরিবারের
দেখাশোনাও করতে পারছি ।

এসব মৎস্য চাষীদের সরকারের উন্নয়ন সহযোগী  সংস্থা পিকেএসএফ এবং ইএসডিও থেকে ঋণ ও কারিগরি সহায়তা এবং অনুদান
প্রদান করা হয়েছে বলে জানান ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান। তিনি
বলেন, সমম্বিত কৃষি ইউনিটের মৎস্য খাতের আওতায় ২০১৮
সালের জুলাই থেকে ঠাকুরগাঁও সদরের  শিবগঞ্জ, শান্তিনগর,
সালন্দর, গড়েয়া এবং ফারাবাড়ি সহ পাঁচটি শাখার মাধ্যমে   মৎস্য খাতের উন্নয়নে কাজ করছি। এরই ধারাবাহিকতায়
১৬১৫ জল খামারিকে নানা ধরনের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এই অঞ্চলটি বাংলাদেশের ভৌগোলিক
কারণে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৎস্য চাষের জন্য তেমন উপযোগী ছিল না। তবে মৎস্য খাতে উন্নয়নে আমরা যে
কাজগুলো করেছি এর ধারাবাহিক উদ্যোগ গুলোর কারণে ইতোমধ্যে এই অঞ্চলে মৎস্য চাষে যথেষ্ট সাফল্য অর্জিত
হয়েছে।

সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি ইএসডিও মৎস্য সেক্টর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে। শুষ্ক মৌশুমে পুকুরে সেচের মাধ্যমে
এবং  ট্যাংকে মাছ চাষ করে চাষিরা লাভবান হচ্ছে। এতে এক দিকে যেমন প্রোটিনের চাহিদা মিটছে অন্যদিকে বেকারত্ব দূর হচ্ছে বলে
জানান ঠাকুরগাঁওয়ের ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা মোছা: আয়েশা আক্তার.

You may also like