
আসাদুজ্জামান শামিম॥ দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম আমানুল্লাহ বলেছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের একটি বড় প্রতিষ্ঠান। প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৪০ লক্ষ শির্ক্ষার্থীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমরা যদি বাংলাদেশের শিক্ষার সংস্কারের কথা বলি তাহলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার করতে হবে। কেন করতে হবে? কারণ একটা মাত্র প্রতিষ্ঠান যার ৭০ শতাংশ উচ্চ শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে।
আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি কমিয়ে জেলা পর্যায়ে আঞ্চলিক অফিস খুলতে চাচ্ছি। তিনি গতকাল শনিবার ঠাকুরগাঁওয়ের স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ ইকো পাঠশালা এন্ড কলেজের রজতজয়ন্তী উৎসবের অনুষ্ঠানে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
তিনি বলেন, যাতে জেলার ভেতর থেকেই প্রতিটা খাতা কালেকশন করবে, খাতা জমা দিবে এবং সমস্ত কিছু হবে। যাতেকরে গাজিপুর যেতে না হয় সেই ব্যবস্থার দিকে আমরা হাটছি। আমরা প্রতিটি জেলায় আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপন করবো। আমরা পরবর্তিতে দিনাজপুরে আঞ্চলিক অফিস চালু করতে যাচ্ছি। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরে এসে যে উদ্দেশ্যে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, লক্ষ লক্ষ মানুষের শহীদের আত্মার বিনিময়ে যে উদ্দেশ্যে দেশকে স্বাধীন করেছিলাম, সে উদ্দেশ্য আমাদের সাধন হয়নি। আজ যে অনুষ্ঠানে এসেছি তার বিষয়ে বলতে হলে বলতে হয়, ড. জামান যে কাজগুলো করেছে আজকে সে কাজগুলো রাষ্ট্র করার কথা ছিল। ইকো পাঠশালা এন্ড কলেজের পথচলায় তারা ইতিমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে জেনেছি। শিক্ষার জন্য বিশ্বে আমরা যে কারনে মানুষকে শিক্ষা দেই, একটা সময় হয়তো শিক্ষা ছিল না। আমরা শিক্ষা নিতাম না। স্কুল ছিল না, কলেজ ছিল না। সিলেবাস ছিল না, বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না, প্লেটো, আইনষ্টাইন, এরিস্টেটল ছিল না, নিউটন ছিল না, কেউ ছিল না। এখন যারা পড়াশোনা করে ডাক্তার হচ্ছে তারা ছিল না। আস্তে আস্তে সব আমরা নিজেরাই নিজেদের প্রয়োজন এ সমস্ত বিষয়গুলো তৈরী করেছি।
শিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষের জন্য কাজ করা এবং মানুষের ভেতরে ঢুকে যাওয়া ও মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করা। এই কাজটা বাংলাদেশের ২/৪ জন মানুষ করেছে তার ভেতরে একজন মানুষ হচ্ছে ড. জামান। তার প্রতিষ্ঠানের জন্য যা যা করা দরকার আমাদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়, জাতীয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা এক পায়ে দাড়িয়ে থাকবো ইনশায়াল্লাহ। আমি জুলাই-আগষ্ট হত্যাকান্ডে যে সমস্ত ছাত্র হত্যা হয়েছে তার নিন্দা জানাচ্ছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত কলেজগুলোতে যারা আহত হয়েছেন তাদেরকে এককালীন অনুদান দেওয়া হয়েছে মীর মুগ্ধ ফাউন্ডেশন থেকে। আমরা তাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, কাজ করবো। কলেজগুলোতে পড়াশুনা হয় কিন্তুু মনিটরিং নাই। কি ইনকাম করছে, কি খরচ করছে তার কোন হিসেব নেই। মনিটরিংয়ে অনেক ঝামেলা। এটাই আমরা শুরু করতে যাচ্ছি।
কলেজগুলো পলিটিক্যাল হাব বানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের কলেজগুলোকে রাজনীতির একটা পাওয়ার হাউজ বানানো হয়েছে আমরা সেটা ভেঙ্গে দিতে চাচ্ছি। আমরা আড়াই হাজার কলেজের গভর্নিং বডি পরিবর্তন করেছি। সমাজের শিক্ষিত মানুষ, তাদেরকে সহযোগিতা করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসকে পরিবর্তন করতে চাচ্ছি। এই সিলেবাস তৈরী করতে গিয়ে আমরা অষ্ট্রেলিয়া, ব্রিটিশ টেকনিক্যাল এসোসিয়েশন বোর্ডের সহযোগিতা নিয়েছি, চাইনিজ সরকারের সহযোগিতা নিয়েছি। টি-ব্যাট, সৌদি আরবের সহযোগিতা নিচ্ছি এবং বাংলাদেশের এটুআই, স্কিল ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন আমাদের হেল্প করার জন্য এগিয়ে আসছে। এই সিলেবাসটি যদি আমরা সংস্কার করতে পারি, তাহলে এই মুহুর্তে বাংলাদেশর যে রেমিটেন্স সেটি বাড়বে। আমরা অনার্স ও গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করা শিক্ষার্থীদের একটি করে ট্রেনিং দিয়ে সনদপত্র ব্যবস্থা করে দিব।
ইকো পাঠশালা এন্ড কলেজের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে সকাল ১০ টায় শহরের গোবিন্দনগরস্থ প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাস থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রদান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। শুরুতেই বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধন করেন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম আমানুল্লাহসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।
উদ্বোধনী অধিবেশন ও রজতজয়ন্তীর বিশেষ প্রকাশনা ”আলোকিত ভুবনের” মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম আমানুল্লাহ, গেষ্ট অব অনার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক মো: লুৎফর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. ইসরাফিল শাহীন, বিশিষ্ট সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মির্জা ফয়সল আমীন প্রমুখ।
দুপুরে জয়নাল আবেদীন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইকো পাঠশালা এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. সেলিমা আখতারের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন প্রধান অতিথি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপচার্য অধ্যাপক মো: লুৎফর রহমান, অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. ইসরাফিল শাহীন, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. কে এম জালাল উদ্দীন আকবর, কারমাইকেল কলেজের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক (অব.) মো. তোফায়ের হোসেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মনতোষ কুমার দে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রংপুর অঞ্চলের (অব.) উপ-পরিচালক মো: আখতারুজ্জামান সাবু, ঢাকার লিটল স্কলারস টিউটোরিয়াল স ্কুল (ক্ষুদ্রে পন্ডিত্বের পাঠশালা)’র ভাইস প্রিন্সিপাল সুরাইয়া আখতার (নাজমা) প্রমুখ।
বিকেলে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান ও প্রাক্তন শিক্ষকদের স্মারক উপহার প্রদানের পর পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা, গেষ্ট অব অনার পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম, পিপিএম।
পরে বিকেলে ইকো পাঠশালা এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।