নবীন হাসান: বাঙালির খাদ্য সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্যতম উপাদান পিঠা। যা শুধু খাবারই নয়, অনুপম স্মৃতি ভান্ডারও।এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে এবং ঠাকুরগাঁও জেলা শিল্পকলার ব্যবস্থাপনায় ঠাকুরগাঁওয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী জাতীয় পিঠা উৎসব । প্রথম দিনেই দেখা গিয়েছে দর্শনার্থী সহ পিঠা প্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়।
চারিদিকে হরেক রকমের বাহারি পিঠাপুলির দোকান। ভাপা পিঠা, চিতই, মালপোয়া, পাটিসাপটা, নকশী পিঠা, চন্দনকাঠ পিঠা, বিবিয়ানা সহ নানান পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেছেন পিঠা শিল্পীরা ।বুধবার বিকেলে এই পিঠা উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার পর মুখরিত হয়ে ওঠে জেলা শিল্পকলা প্রাঙ্গণ।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই পিঠা উৎসবে
সুস্বাদু ও মুখরোচক পিঠা খেতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন সব বয়সের মানুষ। জানা অজানা হরেক রকমের পিঠা খেয়ে তাদের দাবি বারবার এরকম আয়োজন করার।
পিঠা উৎসবে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী আশরাফুল আলম শাওন বলেন, পিঠা উৎসব বাঙালিআনার একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। পিঠা তৈরির যে প্রক্রিয়াটা এটা আমাদের ভাতৃত্বের অনেক বড় একটা নিদর্শন। পিঠার মধ্যে লুকিয়ে আছে আমাদের মূল জাতিসত্তার চেতনা। প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে সারাদেশে এই পিঠা উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটা অনেক আনন্দের।নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালি জাতিসত্তার যে রূপটি সেটি তুলে ধরবার জন্য এই প্রয়াস নিঃসন্দেহে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।
পিঠা প্রেমী জনি আহমেদ বলেন, বাঙালির যে ঐতিহ্য সেটা দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। পিঠা উৎসবের মাধ্যমে আমাদের যে নতুন প্রজন্ম আছে তারা বিভিন্ন রকমের পিঠার সাথে পরিচিত হতে পারবে।
কলেজ পাড়া থেকে আসা বাবলি বেগম বলেন, পিঠা উৎসবে এসে আমি খুবই আনন্দিত। ছোটবেলায় মা নানীর কাছে যেসব পিঠা খেয়েছি সেগুলো এখানে দেখতে পেলাম এবং খেলাম। আমি বাড়ির ছোট সদস্যদের নিয়ে এসেছি। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া কিছু নতুন পিঠার সাথে আমি বাচ্চাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। এটা আমার ভীষণভাবে ভালো লাগছে।
নিজেদের তৈরি পিঠা ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরতে পেরে খুশি পিঠা উৎসবে আসা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা পিঠাশিল্পীরা । এবং কাস্টমারদের বেশ সাড়া ছিল বলেও জানান তারা।
পিঠা উৎসবে স্টল দেওয়া নারী উদ্যোক্তা তানিয়া বলেন, এই পিঠা উৎসবে আমরা হারিয়ে যাওয়া পিঠাগুলোকে তুলে আনার চেষ্টা করেছি। এবং আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
নারী উদ্যোক্তা চন্দনা ঘোষ বলেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমিকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এই ধরনের একটি উৎসবের আয়োজন করার জন্য। এবং আমাদের উদ্যোক্তাদের এরকম একটি সুযোগ দেয়ার জন্য। মা নানীর কাছে যে পিঠাগুলো আমরা খেয়েছিলাম সেই পিঠার স্বাদ আমরা সবার মাঝে বিলিয়ে দিতে এসেছি।
পিঠা উৎসবে আসা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মনতোষ কুমার দে বলেন, জীবন শুধু যাপন নয় জীবন উদযাপনও বটে। যাপিত জীবনে আমাদের অনেক ক্লেশ দুঃখ, অনেক প্রাপ্তহিকতার বিড়ম্বনা থাকে। কিন্তু উদযাপনে সেই ক্লেশ থাকেনা দুঃখ থাকে না। আমরা জীবনকে যদি আরেকটু আনন্দময় করে তুলতে চাই, তাহলে আমাদের জীবনটা উদযাপন করতে হবে। শুধু যাপন নয়। এই পিঠা আমাদের উদযাপনের আনন্দ দেয়। ঘরে ঘরে পিঠার আয়োজন আরো যদি হয় তাহলে এই জাতি এত বিষন্ন থাকবে না, এত হতাশা তার মধ্যে থাকবে না। এই জাতি আনন্দে উদ্বেল হয়ে প্রাণশক্তিতে এগিয়ে যাবে।
পিঠা উৎসবের আয়োজক ঠাকুরগাঁও জেলা কালচারাল অফিসার জাকির হোসেন বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে ঐতিহ্যবাহী যে পিঠাগুলো রয়েছে সেগুলো তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে এই পিঠা উৎসবে। সেই সাথে সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের যে ঐতিহ্যবাহী খাদ্য ও পিঠা রয়েছে সেগুলো এখানে স্টল আকারে পরিবেশন করা হচ্ছে।
তিন দিনব্যাপী চলা এ পিঠা উৎসবে পিঠাশশিল্পীদের তৈরি মুখরোচক ও নান্দনিক ঐতিহ্যবাহী পিঠা প্রদর্শন ও বিপণন ছাড়াও উৎসবের অংশ হিসেবে চলছে লোক সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।