নবীন হাসান : ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবা, ছেলে ও ভাই। ভোটের মাঠে কেউ কাউকে একবিন্দুও ছাড় দিতে রাজি নন। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহলের।
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না আওয়ামী লীগের এমপি - মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন ও ছেলেমেয়েরা। দল থেকে এমন নির্দেশনা থাকলেও তার তোয়াক্কা করছে না ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী হওয়া এমপির আত্মীয়-স্বজনরা। দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এই উপজেলায় ঠাকুরগাঁও ২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপির দুই চাচা ও এক চাচাতো ভাই অংশ নিয়েছেন নির্বাচনে। অর্থাৎ ভোটের মাঠে এক পদের জন্যই রয়েছেন বাবা, ছেলে ও ভাই। যা এলাকায় এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
একই উপজেলায় একই পরিবারের তিনজনের লড়াইয়ে ভোটাররা পড়েছেন দ্বিধা দ্বন্দ্বে।
ভোটার রফিকুল ইসলাম বলেন, একই পরিবারের তিনজন নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে। যাকে ভালো মনে হবে তাকেই আমরা বেছে নেব। আমরা চাই আমাদের এলাকার উন্নয়ন। তবে নির্বাচনে আমরা কোন হট্টগোল চাই না সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন চাই। সবাই যেন সুস্থ ভাবে ভোট দিয়ে বাসায় ফিরতে পারে এটাই কাম্য।
আরেক ভোটার মিজানুর রহমান বলেন, যেহেতু তিনজন প্রার্থীই বাবা, ছেলে ও ভাই সেহেতু এখান থেকেই আমাদের একজন প্রার্থীকে বেছে নিতে হবে। যেটা অনেক কঠিন। বালিয়াডাঙ্গীতে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। ভোটের সময় অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু ভোট শেষ হলে সে কথা ভুলে যায়। এবারে আমরা এমন একজন উপজেলা চেয়ারম্যান চাচ্ছি যিনি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন।
এই উপজেলায় বরাবরই লড়াই হয় পরিবার কেন্দ্রিক। গত উপজেলা নির্বাচনেও লড়াই করেছিল চাচা শফিকুল ইসলাম এবং ভাতিজা ও মোহাম্মদ আলীর ছেলে আলি আসলাম জুয়েল । এরপরে গত জাতীয় নির্বাচনে লড়াই করেছে চাচাতো দুই ভাই মাজহারুল ইসলাম সুজন ও আলী ইসলাম জুয়েল । এবারো উপজেলা নির্বাচনে আটঘাট বেঁধে লড়াই করছে এমপি সুজনের চাচা মোহাম্মদ আলী, চাচাতো ভাই আলী আফসার ও আরেক চাচা মোঃ শফিকুল ইসলাম । তারা সবাই বলছেন জয়ী হলে বালিয়াডাঙ্গী কে মডেল উপজেলা হিসেবে তৈরি করবেন। তবে দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বিষয়ে তারা দিচ্ছেন নানা অজুহাত।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন,আমি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। এই আসনটিতে দীর্ঘদিন উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এবার আবারো উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। এবার যদি আমি নির্বাচিত হই তাহলে ইনশাআল্লাহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করব। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কে স্মার্ট উপজেলা হিসেবে পরিণত করব।
দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে আমি যদি নির্বাচন না করি তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনই হবে না। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আমার ভাই ও ছেলে। আমার ভাই প্রতিবারই আমাদের বিপক্ষে নির্বাচনের মাঠে লড়াই করে এটি নতুন কিছু নয়।
এমপির আত্মীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এমপির আত্মীয় যেমন তেমনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বীও এমপির আত্মীয়। তবুও আমি ঢাকায় যোগাযোগ করেছি। তারা আমাকে বলেছে যেহেতু এখানে অন্য কোন প্রার্থী নেই তাহলে আপনি নির্বাচন করেন।
মোহাম্মদ আলীর ছোট ভাই ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য
মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী মাসের ৮ তারিখে জনগণ যদি আমাকে নির্বাচিত করে তাহলে আমি সুন্দর একটি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা উপহার দেয়ার চেষ্টা করব। প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য চেষ্টা করব। ভাই ও ভাতিজার সাথে লড়াই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভাই, ভাতিজা নাই আমি ২০১১ সাল থেকে তাদের সাথে লড়াই করছি। ভাই- ভাতিজা বলতে কিছু নাই আমি আমার প্রতিপক্ষ দলের সাথে লড়াই করছি। আর এতে বিপুল ভোটে তারা আমার কাছ থেকে পরাজিত হবে।
এমপির আত্মীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমপি আমার আত্মীয় নয় এমপি আমার ভাতিজা। পার্লামেন্ট নির্বাচনের সময়ও এমপির চাচাতো ভাই তার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ হয়ে নির্বাচন করেছে। এটা দেখার কোন সুযোগ নাই। দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তিনি বলেন দল আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেনি এবং আমি এরকম কোন নির্দেশনা পাইনি ।
মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য আলী আফসার বলেন, বাবা বাবার মতো নির্বাচন করছে, চাচা চাচার মত নির্বাচন করছে আর আমি আমার মত নির্বাচন করছি। জনগণ যাকে বেছে নেবে সেই নির্বাচিত হবে। আমি জনগণের ভালোবাসা দেখার জন্য নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। জনগণ ফ্রিতে ভোট দেয় নাকি টাকা পয়সা দেখলে উল্টে যায় সেটাও দেখতে চাই। নির্বাচিত হলে মাদকমুক্ত উপজেলা গড়তে চাই।
অন্যদিকে ঠাকুরগাঁও জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার মনজুরুল হাসান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পুরো ঠাকুরগাঁও জেলায় ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। এবং নির্বাচনের চার স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত নই। ইনশাআল্লাহ সুন্দর একটি নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আগামী ৮ ই মে বালিয়াডাঙ্গি উপজেলায় ৫৪ টি ভোট কেন্দ্রে ৪৫৫ টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে । উপজেলাটিতে ভোটার সংখ্যা রয়েছে ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৮৬৩ জন।