Home » নতুন সোয়েটার পরে স্কুলে যাওয়া হলো না পলকের

নতুন সোয়েটার পরে স্কুলে যাওয়া হলো না পলকের

বয়লার বিস্ফোরণে একই পরিবারের তিনজন নিহত

by নিউজ ডেস্ক
নবীন হাসান  :  নতুন সোয়েটার পরে স্কুলে যাওয়া হলো না পলক দাসের। পলক দাস ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার দাস পাড়া গ্রামের উমাকান্ত দাসের ছেলে। পলক ওই এলাকার মাদার মেমোরিয়াল স্কুল এর দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। মৃত পলকের চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী কৃষ্ণা রানী জানায়, পলক বেশ কিছুদিন ধরে তার বাবার কাছে নতুন সোয়েটারের আবদার করছিল। অভাবের  সংসারে তার বাবা তাকে তা  কিনে দিতে  পারছিল না।এজন্য একদিন কান্নাকাটি করে রাগ করে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে । কোন উপায় না পেয়ে গত বুধবার রাতে তাকে নতুন একটি জ্যাকেট কিনে দেয় তার বাবা । এই জ্যাকেট  পেয়ে সে মহা খুশি। রাতে নতুন জ্যাকেটটি  পড়ে ঘুমিয়ে ছিল সে। ঘুম থেকে ওঠার পরে স্কুল যাওয়ার জন্য রেডি হয় পলক। মা তৃপ্তি রানী নাস্তা রেডি করছিল। এই ফাঁকে পাশের বাড়ির চাচাতো বোন বর্ষা কে নতুন জ্যাকেট দেখানোর জন্য বাড়ি থেকে বের হয় পলক। এ সময় বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ ফিট দূরে সাইদুরের হাসকিং  মিলের বয়লার বিস্ফোরণ ঘটে। ওই বয়লারটি রকেটের মত ছুটে এসে পলকের উপরে পড়ে। এ সময় সাথে সাথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। এ সময় পাশেই রোদ পোহাচ্ছিলেন তার চাচী দীপ্তি রানী (৪০), তার মেয়ে পূজা (৮)। একইসময় তারাও মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় নিহত দীপ্তি  রাণীর স্বামী সাগর ও প্রতিবেশী নিখিল আহত হয়। তারা বর্তমানে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা  বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে  চিকিৎসাধীন রয়েছে।
 

ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় লক্ষীর ধাম দাসপাড়া নামক স্থানে।এই ঘটনার পরে পরিবারের সদস্যদের কান্না এবং আহাজারিতে পরিবেশ ভারী  হয়ে ওঠে।

ওই এলাকার বাসিন্দা সুবাস  জানান, সাইদুরের হাসকিং   মিলে শ্রমিকরা ধান সিদ্ধ করার জন্য বয়লারের স্টিম তুলেন। এক সময় শ্রমিকরা পাশের হোটেলে নাস্তা খেতে গেলে  অতিরিক্ত চাপে বয়লার বিস্ফোরণ হয়। এতে বয়লারের একটি বড় অংশ উড়ে এসে দীপ্তি রানী, তার মেয়ে পূজা ও পলকের ওপর গিয়ে পড়লে তারা ঘটনাস্থলেই মারা যান।

এ ঘটনার পর থেকে হাসকিং  মিলের মালিক সাইদুর রহমান, মিলের শ্রমিক এবং পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছে ।

আইনুল হক নামে এক মিল ব্যবসায়ী জানান, বয়লারের দুটি ভাল্ব থাকে। ভাল্ব গুলো যদি বন্ধ থাকে ঘটে, তাহলে ভিতরে গ্যাস হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। আমি ধারণা করছি এখানেও তাই হয়েছে। এতে মিলের শ্রমিকদের অবহেলা আছে।

নিহত পলকের বাবা উমাকান্ত দাস বলেন,মিল মালিক এবং  শ্রমিকদের অবহেলার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় আমি আমার ছেলে সহ পরিবারের আরো দুই সদস্যকে হারিয়েছি।আমি সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার চাই।

এই ঘটনার পরে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল  পরিদর্শন করেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন সরকার, দিনাজপুর অঞ্চল ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আমিরুল ইসলাম সরকার।

দিনাজপুর অঞ্চল ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আমিরুল ইসলাম সরকার বলেন, বয়লারের যে ভাল্ব গুলো থাকে এগুলোতে কোন ত্রুটি থাকতে পারে এতে করে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ব্যবস্থাপনায় কোন ত্রুটি ছিল কিনা সেটা আমরা যাচাই-বাছাই করব। পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেব।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন সরকার  বলেন, মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

You may also like

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. সাকের উল্লাহ

স্বত্ব © ২০২৪ দৈনিক লোকায়ন