স্টাফ রিপোর্টার : ট্রাক্টর এবং নসিমন যা অবৈধ যানবাহন হিসেবেই পরিচিত। ফিটনেস বিহীন এসব গাড়ির নেই কোন রেজিস্ট্রেশন। কোনরকম প্রশিক্ষণ এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই এসব গাড়ি চালান অধিকাংশ চালকরা। তবে নির্বাচনের মালামাল আনা নেওয়ার করার সময় বৈধ হয়ে যায় এই ট্রাক্টর ও নসিমন। আজ২১ তারিখে দ্বিতীয় ধাপে ঠাকুরগাঁওয়ে হতে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা ও রাণীশংকৈল উপজেলার নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনি এলাকায় গতকাল পাঠানো হয়েছে নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী। তবে এসব সামগ্রী পাঠানোর ক্ষেত্রে জেলা নির্বাচন অফিসের এখন প্রধান ভরসা অবৈধ যানবাহন ট্রাক্টর এবং নসিমন।আর ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা অবৈধ এইসব যানে রওনা দিয়েছেন নিজ নিজ ভোটকেন্দ্রে। ঠাকুরগাঁও এর দুটি উপজেলার ২৫১টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনের ব্যালট বাক্স থেকে শুরু করে অন্যান্য সরঞ্জামের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ভোটকেন্দ্রে পাঠাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ফিটনেস বিহীন প্রায় ২৫০ টি ট্রাক্টর ও নসিমন।
খোলা এসব বাহনে অস্ত্র ও সরঞ্জাম আনা নেওয়া করাটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন আনসার সদস্যরা।
নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা আসলাম বলেন, নির্বাচনের কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নির্বাচন অফিস যদি আমাদের জন্য ভালো কোন যানবাহনের ব্যবস্থা করত তাহলে আমাদের জন্য নিরাপদ হতো। যেসব গাড়িতে আমরা যাচ্ছি সেসব গাড়ির নেই কোন ফিটনেস নেই কোন লাইসেন্স। সরকারের এরকম গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমাদের পাঠানো হচ্ছে এসব অবৈধ যানে। এসব যানে আমাদের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। ঘটতে পারে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
আরেক আনসার সদস্য রফিক বলেন, আমাদের সাথে নিজস্ব অস্ত্র, ব্যালট বক্স সহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র থাকে।অবৈধ ট্রাক্টর এবং নসিমন পুরো খোলা থাকে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে সাংবাদিক মজিবর রহমান খান বলেন, মহাসড়কে নসিমন করিমন ট্রাক্টর চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু ভোট এলেই আমরা দেখি ভোটের মালামাল পরিবহন করার জন্য এসব যানবাহনই ব্যবহার করা হয়। ভোট এলেই এসব অবৈধ যানবাহন বৈধ হয়ে যায়। এসব যানবাহন যদি অবৈধই হবে সব ক্ষেত্রেই অবৈধ হবে। সরকারি কাজে এসব যানবাহন ব্যবহার করে এসব যানবাহনকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এইসব যানবাহন ঠিকমত ব্রেক হয় না যারা চালাচ্ছে তাদের ঠিকমতো দক্ষতাও নেই। আর চালকদের লাইসেন্স সেটাও নেই। সে ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। যারা দায়িত্বে আছেন তাদের প্রাণহানি ঘটতেই পারে।
লাইসেন্সবিহীন এইসব যান এখানে কেন নিয়ে এসেছেন এমন প্রশ্নে ট্রাক্টর চালক মতি রহমান বলেন , আমাদের গাড়ির লাইসেন্স হয় না আর আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। সরকারি কাজে এমন অবৈধ গাড়ি নিয়ে কেন আপনারা এসেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনের সরঞ্জাম আনা নেওয়ার কাজে আমাদের ব্যবহার করা হয়। প্রশাসন থেকে আমাদের ডাকা হয়েছে তাই আমরা আসতে বাধ্য।
সরকারি কাজে এ ধরনের ‘অবৈধ যান’ ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন অফিসার মনজুরুল হাসান বলেন আমাদের প্রায় ৫০০ এর উপরে গাড়ি লাগবে। ঠাকুরগাঁওয়ে যে বাস ট্রাকসহ অন্যান্য গাড়ি গুলো রয়েছে সেগুলো দিয়ে আমরা নির্বাচন করতে পারব না। তাই বাস্তবতায় আমাদের অনেক কিছু মানতে হয়। এ বিষয়গুলো এখন আমাদের সাবজেক্ট না। এ বিষয়গুলো নিয়ে এখন কথা বলার সুযোগ নেই। একটি ইলেকশনের জন্য তো আমরা গাড়ি সরবরাহ করতে পারব না প্রত্যেকটা সেন্টারের জন্য। এটা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।
উল্লেখ্য ভারী এই ট্রাক্টর এবং নসিমন রাস্তায় চলাচলের ফলে প্রতিনিয়তই ভাঙছে সড়ক।অন্যদিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক, অনভিজ্ঞ চালকদের লাইসেন্সবিহীন বেপরোয়া চলাচলে বাড়ছে দুর্ঘটনা । আর এসব ফিটনেস বিহীন যানই এখন নির্বাচনের কাজে প্রথম পছন্দ নির্বাচন অফিসের।