বিশেষ প্রতিনিধি
শুরুটা করেছিলেন করোনাকালীন সময়ে ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায়। ওই এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ঘুরে বেড়ানো কিছু ছিন্নমূল শিশুকে পড়ানো শুরু করেন তিনি। তখন তিনি বেকার সময় পার করছেন। পরে চাকরি সূত্রে পঞ্চগড় এসে ২০২৩ সালে নতুন করে ভাবতে শুরু করলেন।নিজের জন্য শুধু নয় নিজের মেধাকে কীভাবে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া যায় এই ভাবনা থেকেই দরিদ্র শিশুদের জন্য ফ্রি স্কুল খোলার উদ্যোগ নেন বাংলাদেশ সড়ক কর্তৃপক্ষের পঞ্চগড় কার্যালয়ের ইন্সপেক্টর রেজওয়ান শাহ।রেজওয়ান শাহ জানান, প্রথম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের পড়ানো হয়। শিশুদের পড়ার প্রতি অনেক আগ্রহ দেখেছি। কিন্তু সুযোগের অভাবে তারা পিছিয়ে যাচ্ছিল। মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্যও ক্লাস শুরু করার ইচ্ছে আছে আমাদের। তিনি জানান, ছুটির অবসরে পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতেই বয়ে বেড়ানো পুরনো সুপ্ত ইচ্ছেটি আবার জেগে ওঠে। রেল স্টেশনের পরিত্যক্ত একটি কক্ষে কয়েক বন্ধু মিলে শুরু করেন ‘ইশকুল’। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়ানো শুরু করেন তারা। প্রতিষ্ঠানটির নামও দেন ‘ইশকুল’।এই স্কুলে প্রতিদিন বিকেল বেলা রেল লাইন ধরে হাটি হাটি পায়ে পায়ে পড়তে আসছে শতাধিক শিশু শিক্ষার্থী। দলবেঁধে কেউ কেউ আসছে রেল স্টেশন ঘেরা রাস্তা দিয়ে। কাঁধে স্কুল ব্যাগ। তাদের দেখেই মনে হবে স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফিরছে তারা। এমন দৃশ্য দেখে কারও মনে শঙ্কাও জাগতে পারে এতো দেরিতে শিশুরা ফিরছে কেন? কিন্তু না, আসলে এই শিক্ষার্থীরা ছুটে আসছে রেজওয়ানের ‘ইশকুলে’।এই স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বাবা মায়েরা শ্রমিক। অর্থের অভাবে সন্তানদেরকে প্রাইভেট বা টিউশনি পড়াতে পারেন না। অভিভাবকরা বলছেন, এই স্কুল গড়ে ওঠার ফলে শিশুরা নিরাপদ থাকার পাশাপাশি পড়াশোনা করছে।পাথর শ্রমিক আলেয়া বেগম জানান, অর্থের অভাবে ভালো স্কুলে সন্তানদের পড়াতে পারি না। প্রাইভেট বা টিউশনির বেতন দিতে পারি না। এখানে প্রতিদিন বিকেল বেলা পড়ালেখা করে শিশুরা। যত্নের সাথে পড়ানো হয়।বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের পঞ্চগড় জেলা অফিসে চাকরি করেন রেজওয়ান। দিনাজপুর পলিটেকনিক থেকে লেখাপড়ার পর অপরাধ বিজ্ঞান বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন তিনি। সারাদিন অফিস আর অফিসিয়াল কাজে ছুটে বেড়ান। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনায় নানা দায়িত্ব পালনের পর বাড়ি ফেরেন। তারপরে একটু বিশ্রামের পর বাইক চালিয়ে চলে আসেন স্কুলে।শুধু পড়ালেখাই নয়। শিশুদের মনন বিকাশে রেজওয়ানের স্কুলে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ছবি আঁকা ও খেলাধুলারও আয়োজন করা হয়।রেল স্টেশনের মাস্টার মাসুদ পারভেজ বলেন, চাকুরীর পাশাপাশি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল খুলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন রেজওয়ান শাহ। আমরা পরিত্যক্ত একটি ভবন ছেড়ে দিয়েছি। তাকে সহযোগিতা দেয়া প্রয়োজন।রেজওয়ানের এমন উদ্যোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানান, এটি একটি দারুণ মানবিক উদ্যোগ। আমরা সব ধরণের সহযোগিতা করবো।