Home » পঞ্চগড়ে ধুমধাম করে বট-পাকুড়ের বিয়ে

পঞ্চগড়ে ধুমধাম করে বট-পাকুড়ের বিয়ে

by নিউজ ডেস্ক

মো. নুর হাসান, পঞ্চগড়: চারদিকে ঢাক-ঢোল আর সানাইয়ের সুর বাজছে। উলুধ্বনিও দিচ্ছেন অনেকেই। পুরোহিত পাঠ করছেন মন্ত্র। পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে বিয়ের আসর। এক পলক দেখার জন্য ভিড় করছেন অনেকেই। বিয়ের আয়োজনের কোনো কিছুর কমতি নেই। তবে এত কিছু আয়োজন করা হয়েছে শুধু বট আর পাকুড় গাছের বিয়েকে ঘিরে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের মীরগঞ্জ এলাকায় এ বিয়ের আয়োজন করা হয়।
এতে আশেপাশের প্রায় শতাধিক পরিবার অংশ নেন।
এদিন সকাল আটটা থেকে শুরু হয় বিয়ের কার্যক্রম। চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। বটপাকুড়ের বিয়েতে বটগাছকে কনে আর পাকুড় গাছকে বর হিসেবে সাজানো হয়। বিয়েতে কনের বাবা হিসেবে কন্যাদান করেন নুনি রাম বর্মন আর ছেলের বাবা ছিলেন একই এলাকার লক্ষী প্রসাদ বর্মন। বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন পুরোহিত কাজল চক্রবর্তী।
কথা হয় কন্যাদান (বটগাছ) করা নুনি রাম বর্মনের সাথে। তিনি বলেন, আমি এ যাবত শুধু শুনেই আসছি যে বট আর পাকুড় গাছের বিয়ের কথা। কোনো দিনও সেই বিয়ে দেখিনি। আজকে নিজেই কন্যার বাবা হিসেবে বটগাছকে সম্প্রদান করছি। আমাদের পরিবারের সবার মঙ্গল কামনায় এই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।
ছেলের বাবা (পাকুড় গাছ) লক্ষী প্রসাদ বর্মন বলেন, আমার বাবা এই বট ও পাকুড় গাছ দুটির চারা রোপণ করে। তখন বাবা এই গাছগুলোকে বিয়ে দিতে বলেছিলেন আমাদের সুফল হওয়ার জন্য। আজকে সেই গাছেরই বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমাদের সব মঙ্গল হবে। আমাদের পরিবারের ছেলেমেয়েদের বিপদ-আপদ দূর হবে।
বিয়ে দেখতে আসা প্রতিমা রাণী বর্মন বলেন, বট-পাকুড়ের বিয়ে দিলে আমদের ধর্মীয়ভাবেই একটা পুণ্য লাভ হয়। অনেকেই আবার ছেলে বা মেয়ে সন্তান লাভের আশায় এই বিয়ে দেয়। অনেক আগে থেকে এই বিয়ের প্রথা চলে আসছে।
প্রথমবারের মতো বট-পাকুড়ের বিয়ে দেখতে এসেছেন সুর্বণা রাণী। কথা হলে তিনি বলেন, ‘বট-পাকুড়ের বিয়ে হবে এটা শোনার পর থেকেই অনেক কৌতূহল হচ্ছিল মনের মধ্যে। আগে অনেকবার শুনেছি বট-পাকুড়ের বিয়ের কথা। কিন্তু এই প্রথমবার নিজ চোখে বিয়ে দেখলাম। বিয়েতে অনেকের আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা হলো। সবাই মিলে অনেক আনন্দ করলাম। বর-কনের বিয়ের মতোই সব আয়োজন ছিল বিয়েতে। আমার অনেক ভালো লেগেছে বট-পাকুড়ের বিয়েতে আসতে পেরে।
বিয়ের পুরোহিত কাজল চক্রবর্তী বলেন, বট-পাকুড়ের বিয়ে দিলে পরিবারের অমঙ্গল দূর হয়। তাদের পরিবারের ছেলেমেয়েদের কোনো অভাব বা দুঃখ-কষ্ট তাদের জীবনে আসবে না। এজন্য আজকে বট-পাকুড়ের বিয়ে দিচ্ছেন নুনি রাম বর্মন ও লক্ষী প্রসাদ বর্মন।
পাঁচপীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অজয় কুমার বলেন, সনাতন রীতিনীতি মেনেই এই বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর-কনের বিয়ের মতোই সব আয়োজন ছিল বিয়েতে। আজকে কনের বাড়িতে খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। আর আগামীকাল বরের বাড়িতে বৌভাত অনুষ্ঠিত হবে।

You may also like

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. সাকের উল্লাহ

স্বত্ব © ২০২৪ দৈনিক লোকায়ন