প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ৬:৪৯ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ৬, ২০২৪, ৪:৪০ অপরাহ্ণ
পঞ্চগড়ে শিক্ষককে রাজকীয় বিদায়, মোটরসাইকেল বহরে পৌঁছে দেয়া হলো বাড়ি
মো. নুর হাসান, পঞ্চগড়:
গলায় পুষ্প মাল্য, সাথে সম্মাননা স্মারক ও নানা ধরনের উপহার নিয়ে পুস্পসজ্জিত সাজানো গাড়িতে বসে বাড়ি আছেন শিক্ষক আর সেই গাড়িতে রশি লাগিয়ে স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে টেনে রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এরপর রাস্তা থেকে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন ওই শিক্ষকের স্কুল কর্তৃপক্ষ।
চাকরি জীবনের শেষ দিনে শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা স্বরূপ এমন বর্ণীল আয়োজন করে ওই স্কুলের কর্তৃপক্ষ।
১৯৯০ সালে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন মাছুমা বেগম। টানা দীর্ঘ ৩৪ বছর শিক্ষকতাকালে ব্যক্তি জীবনে আলোকিত মানুষ হতে প্রেরণা জুগিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের। যাদের মধ্যে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর আজ প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দপ্তরে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
খবর পেয়ে প্রিয় শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা জানাতে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও ছুটে এসেছে প্রিয় বিদ্যাঙ্গন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কাশেম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এর আগে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি হর কুমার বর্মণের সভাপতিত্বে সংবর্ধিত করা হয় বিদায়ী ওই শিক্ষককে।
পরে বিদায়ী শিক্ষক মাছুমা বেগম তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন উপস্থিত সকলের কাছে দোয়া চেয়ে বিদায় নেন।
আলোচনা সভা শেষে বিদায়ী শিক্ষক মাছুমা বেগমকে প্রথমে শিক্ষার্থীরা সংবর্ধনা জানায়, এরপর বিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে পুষ্প মাল্য, সম্মাননা স্মারক এবং উপহার সামগ্রী দিয়ে বিদায়ী সংবর্ধনা জানানো হয়।
শিক্ষক মাছুমা বেগম পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলই শালশিড়ি ইউনিয়নের গ্রামের মকররী পাড়া গ্রামের খাদেমুল ইসলামের স্ত্রী। দাম্পত্য জীবনে স্বামী এবং তিন মেয়ে রয়েছে তার।
শিক্ষার্থীদের এমন আয়োজনে আপ্লুত বিদায়ী শিক্ষক মাছুমা বেগম। তিনি বলেন, ১৭ জানুয়ারি ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদান করি। ৩৪ বছর ৭ মাস ৩২ দিন পর অবসরে যাচ্ছি। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করানো, বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। এলাকার ছাত্রছাত্রীরা, অভিভাবকেরা এবং সংশ্লিষ্ট সবাই আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন, তাতে আমি আনন্দিত।’
ফেরদৌস আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আজ আমাদের স্যারকে বিদায় জানাতে হচ্ছে। তিনি শুধু শিক্ষক ছিলেন না, পিতার মতো স্নেহ করতেন আমাদের। স্যারের বিদায় আমাদের খুব মর্মাহত করছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিন আকতার বলেন, একজন শিক্ষক যখন তাঁর চাকরিজীবন শেষ করে বিদায় নেন, এটা তাঁর জন্য কষ্টের। তখন বিদায় মুহূর্তে এমন রাজকীয় বিদায় তাঁকে সম্মানিত ও আনন্দিত করে।
স্বত্ব © ২০২৪ দৈনিক লোকায়ন