আবু তাহের আনসারী: সড়ক ও জনপদ বিভাগের ভূমি উদ্ধার না করায় এবং সেই ভূমি ইজারা না দেবার কারনে প্রতি বছর সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে ১ লক্ষ ৬৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। পঞ্চগড় সড়ক ও জনপদ বিভাগ এর কোন দায়বদ্ধতা নেই বললেই চলে।
পঞ্চগড় সড়ক ও জনপদ বিভাগের উদাসীনতায় পঞ্চগড় সদর ও বোদা উপজেলার ৪টি মৌজায় ২৯ দশমিক ৮৪ একর জমি হাতছাড়া হয়ে রয়েছে। এগুলো হলো পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার আয়মাঝলই মৌজায় ৬২ শতক, বোয়ালমারী মৌজায় ১৬ দশমিক ১০ একর, সাহেবীজোত মৌজায় ৪ দশমিক ৫৩ একর, বোদা উপজেলার আরাজি কিসমত বাহাদুর নারায়রী মৌজায় ৮ দশমিক ৫৯ একর জমি রয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের।
এসব জমি উদ্ধার করার জন্য পঞ্চগড় সড়ক ও জনপদ বিভাগ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।
হামিদুল ইসলাম ও গ্রামবাসীরা ১০ একর জমি অবৈধ ভাবে জোরপূর্বক ভাবে দখল করে রেখেছে। উক্ত জমি যদি প্রতি বছর ইজারা দেয়া যেত তাহলে প্রতি বছরে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হতো।
এমনকি মনিরুজ্জামান যে জমি ইজারার মাধ্যমে নেন যেটি ৫ শতক জমি। সেই ভূমি যা দখল করে রাখা আছে সেটি যদি ইজারা দেয়া হত তাহলে প্রতি বছর ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৮শ ৫০ টাকা।
হামিদুল ইসলাম কে বার বার মৌখিক ভাবে ও নোটিশ প্রদান করা হলেও তাহার ভূমিতে জোরপূর্বক ভাবে বসবাস করতেছে। উক্ত জমি সার্ভেয়ার দিয়ে জরিপ করে উক্ত মৌজার ১৬ দশমিক ১০ একর জমির মধ্যে ৫ একর জমি ইজারার আওতায় আনার জন্য পঞ্চগড় সড়ক বিভাগ বিজ্ঞাপন প্রদান করে।
হামিদুল হক জানান, যে ১৬ দশমিক ১১ একর জমি রয়েছে, তার মধ্যে রাস্তা আছে ৫ শতক। বাকি ১১ দশমিক ১০ একরের মধ্যে হামিদুল গং এর ৫ একর, বাদল রায় গং এর ২ একর, রেজাউল গং এর ৪ একর। এগুলো আমাদের ক্রয় করা জমি, এ জমি সড়ক ও জনপদ বিভাগের না। আমাদের জমি জোরপূর্বক সড়ক ও জনপদ বিভাগ ইজারা দেয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দেন। তার জন্য আমি স্থানীয় লোকজনদের পক্ষে মানবাধিকারে আবেদন করেছি। সেখান থেকে আমাদের কোন কাগজ পত্র দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, ১১ একর জমির মধ্যে পুকুর আছে ৪ একর। এই ৪ একর পুকুরটিই সড়ক ও জনপথ বিভাগ ইজারা দেয়। এই পুকুর আমাদের দখলে আছে। সেখানে আমি মাছ ও ধান চাষ করেছি।
২০২৩ সালের ১৩ আগষ্ট ভূমি ইজারা কোটেশন আহবান করা হয়। যার কোটেশন বিজ্ঞাপন নম্বর ১/ এস.ডি.ই./পঞ্চ//২০২৩-২০২৪।
২০২৩ সালের ৮ আগষ্ট ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ টুডে ও দৈনিক কালেরকন্ঠ, ৭ আগষ্টের দৈনিক উত্তরা তে বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়। বিজ্ঞাপন ছাপানোর পরে মাহবুব আলম, প্রদীপ কুমার, শাহনেওয়াজ প্রধান ও মনিরুজ্জামান এই ৪ জন ইজারায় অংশ গ্রহন করে। ভূমি ইজারার ৫ হাজার টাকা পে অর্ডার করার পর ভূমি ইজারারদর প্রদানকারীর উপস্থিতি স্বাক্ষর নেয়া হয়। তারপর ৪ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ দর দাতা হিসেবে মনিরুজ্জামান কে বিবেচিত করা হয়।
বিবেচিত হওয়ার পরেও মনিরুজ্জামান কে ভূমি বুঝিয়ে দেয়নি সড়ক বিভাগ। যার কারনে মনিরুজ্জামান ইজারা পেয়েও ভূমিতে যেতে পারছে না।
ভূমি দখলকারী হামিদুল ও গ্রামবাসির কাছে অবৈধ ভাবে যে ভূমি রয়েছে সেটি যদি ইজারা দেয়া যেত তাহলে প্রতি বছর রাজস্ব আয় হতো ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৮শ ৫০ টাকা। যা ৫৩ বছরে ১ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৪ হাজার ১শ টাকা রাজস্ব আদায় হতো।
এত ফাইল ঘুরাঘুরির কারনে ইজারা পাবে কিনা সন্দেহ করছে মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ৫ একর জমি সড়ক ও জনপদ বিভাগ ইজারা দেয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দেন। সে মোতাবেক আমরা ৪ জন নিলাম জমা দেই। সেখানে আমি সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়। কিন্তু কিছু জটিলতার কারনে সড়ক ও জনপদ বিভাগ আমাকে ইজারা নেয়া বুঝে দেয়নি। জায়গাটি ইজারা দেয়া হলে সরকার প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টাকা রাজস্ব পেত।
অন্যদিকে সড়ক ও জনপদ বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলা হয়েছে। উক্ত জমি ইজারা দেয়া হলে উক্ত ভূমি বেখল হবেনা এবং সরকারের রাজস্ব আদায় হবে ও সরকারী জমিও সুরক্ষা থাকবে।
আরও জানা যায়, উক্ত জমি সড়ক ও জনপদের নামে নামজারি হয়নি এবং ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা হয়নি।
পঞ্চগড় সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সুলতান মাহমুদ জানান, কিছু জটিলতার কারনে ইজারা টি বর্তমানে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। সরকারের যখন প্রয়োজন হবে সরকার তখন ইজারা দিবে।
তিনি আরও বলেন, আমরাও চাই উক্ত জমি ইজারা দেয়া হোক আর সরকারের প্রতিবছর রাজস্ব আদায় হোক।