স্টাফ রিপোর্টার, পীরগঞ্জ ঃ তীব্র দাবদাহ চলছে। বৃষ্টির দেখা নেই। প্রখর রোদ্রের তাপে শুকিয়ে গেছে দিঘি-পুকুর, খাল, বিল, নদী-নালা। বড় নদী গুলোও বইছে ক্ষীন ধারায়। ভুগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। অনেক টিউবওয়েল ও নলকুপে পানি উঠছে না। বোরো আবাদের সেচ নিয়ে চরম বিপদে আছেন কৃষকরা। চারিদিকে জীবন যাত্রায় যখন হাঁসফাঁস অবস্থা ঠিক সেই সময়ে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে টাঙ্গন নদীর সাগুনী এবং রানীরঘাট রাবার ড্যামের উজানে নদী এখন পানিতে ভরপুর। নদীর এ অংশে লো-লিফট পাম্প এবং স্যালো মেশিন বসিয়ে সেই পানি দিয়েই চলছে সেচ কার্যক্রম। চলতি খড়া মৌসুমে প্রায় দুাই হাজার হেক্টর বোরো ধান খেতে সেচ দেয়া হচ্ছে এ নদীর পানি দিয়েই। এছাড়ও নদীতে প্রচুর পানি থাকায় নদীর দু ধারে ভু-গর্ভস্থ পানির লেয়ার উপরে উঠে এসেছে। আশপাশের গ্রাম গুলোতে টিউবওয়েল বা নলকুপে পানির কোন সমস্যা হচ্ছে না। মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর দেশি প্রজাতির মিঠা পানির মাছ। পরিবর্তন এসেছে জীববৈচিত্রেও। অন্যদিকে রাবার ড্যামের ভাটিতে এখন এর পুরো উল্টো চিত্র। ড্যামের রাবারের ওপর দিয়ে গড়িয়ে পড়া বাড়তি পানিতে নদী বইছে ক্ষীণ ধারায়। দেখে মনে হচ্ছে যেন মরা খাল।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁও জেলার বড় নদী টাঙ্গন। টাঙ্গন নদী ক্রমেই ভরাট হওয়ার কারণে পৌষ-মাঘ মাসেই নদীর পানি শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হতো। ক্ষীণ ধারায় প্রবাহিত নদীর পানি গড়িয়ে চলে যেত ভারতে। নদীর পানি কিভাবে কাজ লাগানো যায় সেই ভাবনা থেকে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন ২০১৫ টাঙ্গন নদীতে পীরগঞ্জ উপজেলার সাগুনি এবং রানীরঘাট এলাকায় দুটি রাবাম ড্যাম নির্মাণ করা হয়। প্রথম দিকে রাবার ড্যাম পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হলেও কয়েক বছর ধরে পুরোদমে চালু হয়েছে। আগে এ সময় নদীটি শুকিয়ে গেলেও বর্তমানে রাবার ড্যামের রাবার ফুলিয়ে পানি আটক রাখার ফলে ড্যামের উজানে নদী ফিরে পেয়েছে ভরা যৌবন। দেখে মনে হয় বর্ষাকাল। রাবার ড্যামের উজানে নদীতে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সাল থেকে লো-লিফট পাম্প স্থাপন করে জমানো পানি কৃষি কাজে লাগানো উদ্যোগ নেয়। সাধারণ কৃষকও স্যালো মেশিন বসিয়ে জমানো পানি দিয়ে নিজ নিজ জমিতে সেচের ব্যবস্থা করে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পীরগঞ্জ ইউনিটের সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর মোহাম্মদ রৃহুল ইসলাম জানান, ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ টাঙ্গন নদীর সাগুনী রাবার ড্যাম উজানে পর্যায়ক্রমে ২০টি এবং রানীরঘাট রাবার ড্যাম এলাকায় ৩৩ টি লো লিফ্ট পাম্প চালু করেছে। নদীতে মজুদ করা পানি দিয়েই নদীর দুই ধারে সাগুনী রাবার ড্যামের আওতায় সাগুনি, বাঁশগাড়া, চাপোড়, মছলন্দপুর, মশালডাঙ্গী, মালঞ্চা, নাকাটি, ফুটকিবাড়ী, ভামদা, সুলতানপুর, সেনিহারি এবং রানীরঘাট রাবার ড্যামের আওতায় বৈরচুনা, আজলাবাদ, শিরাইল, চান্দোহর, জগন্নাথপুর, কাটাবাড়ি সহ ১০/১২ টি গ্রামের বিশাল এলাকাজুড়ে জমিতে চলছে চাষাবাদ। যা আগে পড়ে থাকত অনাবাদি হিসেবে। পাম্পগুলো দিয়েও প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। অন্যান্য সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে আরো প্রায় পাঁচশ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে। প্রায় ৩০ হাজার কৃষক তাদের জমিতে সেচ দিতে পারছে। এদিকে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর দেশি মাছও। ঐ সব গ্রামে ভু গর্ভস্থ পানির লেয়ার উপরে উঠে এসেছে।
সুগুনী এলাকার সাইদুর, বাঁগাড়ার কার্তিক সহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, আগে নদীতে পানি থাকত না। রাবার ড্যাম হওয়ার পর নদীতে পানি থাকছে। কৃষকরা সহজেই সে পানি দিয়ে বোরোসহ নানা ধরনের ফসল আবাদ করতে পারছেন। খরচ কম পড়ছে।
সাগুনী রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিব উদ্দীন বলেন, গত কয়েক বছর থেকে রাবার ড্যামে সুফল পাচ্ছে এলাকার লোকজন। এরই মধ্যে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমি রাবার ড্যামের সেচের আওতায় এসেছে। কৃষকদের খরা মৌসুমে আর পানির কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লায়লা আরজুমান আরা জানান, রাবার ড্যাম স্থাপনে সুফল পাচ্ছে হাজারও কৃষক। সাগুনী রাবার ড্যামের উজানে প্রায় ৪ কিঃ মিঃ এবং রানীরঘাট রাবার ড্যামের উজানে প্রায় ৫ কিঃ মিঃ এলাকায় নদীর দু'ধারের বিশাল পতিত জমি সেচের আওতায় এসেছে। এ ছাড়া ভূগর্ভস্থ পানিতে আয়রন থাকার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু নদীর পানিতে কোনো আয়রন থাকে না এতে ফলন বাড়বে। সেচের খরচও কম হবে।