প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ১১:২২ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ১৬, ২০২৪, ২:৫৭ অপরাহ্ণ
পঞ্চগড় সংবাদদাতা: পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় ঐতিহাসিক বার আউলিয়া মাজারে এক দিনের বার্ষিক উরস অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ উরস কার্যক্রম শুরু হয়ে রাত দশটায় শেষ হয়। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার একদিনের জন্য এই বার্ষিক উরস অনুষ্ঠিত হয়। এবার প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের কারণে এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয় এই বার্ষিক উরস। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সনাতন ধর্মের লোকজনসহ লাখো মানুষের সমাগম হয় এখানে। এ উপলক্ষে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিউল মাজলুবিন রহমান বলেন, একদিনের এই উরস উপলক্ষে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও ১১০ দশ পুলিশ, ৪০ জন আনসার সদস্য ছাড়াও সাদা পোষাকে পুলিশ সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে।
সকাল থেকেই জেলার প্রত্যন্ত এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানতের চাল, মুরগী, কবুতর, গরু-ছাগল ও নগদ টাকা-পয়সাসহ ভক্তরা সমবেত হয়েছেন ঐতিহাসিক বার আউলিয়া মাজার প্রাঙ্গণে।
সেইসঙ্গে বার আউলিয়া মাজার চত্বরে বসে মেলা। এদিকে বার আউলিয়া মাজার ঘুরে দেখা যায়, ভক্তরা মাজারে এসে বিশেষ মোনাজাত এবং ভক্তি প্রদর্শন করেন। কেউ কেউ দান বাক্সে নগদ টাকা, আগরবাতি ও মোমবাতি দেন।
নীলফামারী থেকে আসা মনোয়ারা নামে এক ভক্ত জানান, বিয়ের ৮ বছরেও তার বাচ্চা হয়নি। তাই সন্তান লাভের আশায় ছাগল মানত করেছিলেন বারো আউলিয়া মাজারে। এরপর ছেলে সন্তান হয়েছে। এজন্য তিনি ছাগল দিতে এসেছেন মাজারে।
শ্রী সাধনা রানী নামের এক ভক্ত বলেন বলেন, সব ধর্মের মানুষ এখানে আসেন। আমার স্বামী অসুস্থ ছিলো। এখানে মানত করার পর হয়েছে, তাই আগরবাতি এবং মোমবাতি দিতে এসেছি।
কাচু নামের একজন বলেন, আমার দুটি মেয়ে ছিল। এরপর ছেলে সন্তানের আশায় মাজারে এসে মানত করেছি। এ কারণে আমার ছেলেসন্তান হয়েছে। তাই একটি মোরগ দিতে এসেছি।
এদিকে তরুণরাও মনের বাসনা পূর্ণ করতে এই মাজারে আসেন। তাদের অনেকেই জানান, কেউ পরীক্ষা পাস করার কারণে, আবার কেউ কেউ নিজের পছন্দের মানুষটিকে পাওয়ার জন্য এসেছেন।
স্থানীয় জনশ্রুতি মতে ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রায় কয়েকশ বছর আগে এ এলাকাটি ঘন জঙ্গল ছিল।
সেই সময় বার জন ওলী ও সূফি সাধক চট্টগ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে করতে দেশের সর্ব উত্তরের এ পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে এসে পৌঁছান এবং এখানে আস্তানা গড়ে তোলে এ এলাকায় ইসলাম প্রচার শুরু করেন।
পরবর্তীতে তাদের ওফাতের পর (মৃত্যু) ওই স্থানে তাদের সমাহিত করা হয়। আর এভাবেই গড়ে উঠে বার আউলিয় মাজার শরীফ।
বার জন আউলিয়া হলেন, হেমায়েত আলী শাহ্ (র:), নিয়ামত উল্লাহ শাহ্ (র:), কেরামত শাহ্ (র:), আজহার আলী শাহ্ (র:), হাকিম আলী শাহ্ (র:) , মনসুর আলী শাহ্ (র:), মমিনুল শাহ্ (র:), শেখ গরীবুল্লাহ্ (র:), আমজাদ আলী মোল্লা (র:), ফরিজ উদ্দীন আখতার (র:), শাহ্ মোক্তার আলী (র:) ও শাহ্ অলিউল্লাহ্ (র:)।