৬৬
বালিয়াডাঙ্গী(ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি :
ভোরবেলা ১২ মিনিটের ভারী বৃষ্টি ও তুমুল ঝড়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ২টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। টিনের চালা উড়ে গেছে কাঁচাবাড়ী ঘরের। গাছ ভেঙ্গে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ী ও দোকানপাট।
ঝড়ের কবলে দুই নারী ও জমে থাকা পানিতে ডুবে মারা গেছে আড়াই বছরের এক শিশু। শনিবার ভোর ৫টার সময় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের শালডাঙ্গা গ্রামের পইনুল ইসলামের স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০), একই গ্রামের দবিরুল ইসলামের স্ত্রী জাহেদা বেগম (৫০) এবং একই উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের লালাপুর নয়াপাড়া গ্রামের নাজমুল ইসলামের আড়াই বছরের শিশু ছেলে সন্তান নাঈয়ুম।
পইনুল ইসলাম জানান, সকালে ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে মসজিদে থাকা অবস্থায় ঝড় শুরু হয়। বাড়ীতে ছুটে এসে স্ত্রীকে খুজে না পেয়ে ডাকাডাকি করি। পরে বাতাসে উড়ে এসে বারান্দায় পড়ে টিন ও ছাউনি সরিয়ে দেখি নিচে চাপা পড়ে আছে আমার স্ত্রী।
উদ্ধার করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
পাড়িয়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশের দফাদার আজিজুর রহমান জানান, ঝড়ের সময় বারান্দা বসে ছিলেন দবিরুল ইসলাম ওরফে বেকার স্ত্রী জাহেদা। মেঘের গর্জন আর ঝড়ে গাছপালা উড়তে দেখে বারান্দাতেই মারা যান তিনি।
দবিরুল ইসলাম ওরফে বেকা জানান, তাঁর স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ঝড়ের সময় ভয়ে স্ট্রোক করেছেন বলে ধারনা করছেন তারা।
এদিকে লালাপুর নয়াপাড়া গ্রামের নাজমুল ইসলাম জানান, বাড়ীর পাশে গর্তে বৃষ্টির পানি জমেছিল। খেলতে গিয়ে ছেলে শিশুটি পড়ে গিয়েছিল। পরে পরিবারের লোকজনের নজরে আসলে তাকে উদ্ধার করে।
শনিবার দুপরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঝড়ে পাড়িয়া ইউনিয়নের তিলকড়া, শালডাঙ্গা, বঙ্গভিটা, লোহাড়া, বামুনিয়া সহ ১২টি গ্রাম, বড়বাড়ী ইউনিয়নের বেলহাড়া, বেলবাড়ী, বটের হাট, হরিপুর, কাটাবাড়ীসহ ৯টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশির ভাগ কাঁচা বাড়ীর টিনের চালা ও টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। অনেক গাছ ভেঙ্গে পড়েছে কাচা ঘরের উপর।
বড়বাড়ী ইউনিয়নের আধারদিঘী বাজারে ৫টি দোকান এবং ২টি হোটেল গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। ঘরের টিন নষ্ট সহ সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী এবং সিমেন্টের ব্যবসায়ীর অন্তত ৫ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে।
আধাদিঘী বাজারের ব্যবসায়ী হাসান আলী জানান, বাজারে শতবর্ষী কিছু আমগাছ ছিল দীর্ঘদিনের। ঝড়ের কারণে সেই গাছের বড় ডাল ভেঙ্গে পড়েছে দোকানগুলোর টিনের ছাউনির উপর। এতে দোকানগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
লোহাড়াগাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান জানান, ঝড়ে তাদের স্কুলের হলরুম টিনের ছাউনি পড়ে মাঠে এসে পড়েছে। বিদ্যালয়টির প্রবেশদ্বারে গাছ ভেঙ্গে পড়েছে বৈদ্যূতিক খুটির উপর। এছাড়াও লোহাড়া থেকে বঙ্গভিটা যাওয়ার রাস্তায় একাধিক গাছ ভেঙ্গে রাস্তায় পড়ে চলাচল বন্ধ হয়ে পথচারীদের।
এদিকে বড়বাড়ী ইউনিয়নের আধারদিঘী থেকে হরিণমারী যাওয়ার রাস্তায় গাছ ভেঙ্গে পড়ে চলাচল বন্ধ আছে। তবে কিছু কাঠমিস্ত্রিকে গাছ কেটে সড়িয়ে রাস্তা চলাচল স্বাভাবিক করতে দেখা গেছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকের মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে গেছে চার্জের অভাবে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বালিয়াডাঙ্গী জোনাল অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম জানান, ঝড়ে ৪০টির বেশি বৈদ্যুতিক খুটি উপড়ে এবং ভেঙ্গে গেছে। এছাড়াও অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক তারের উপর গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। বালিয়াডাঙ্গী বাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে । বাকি সব এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ। সকাল থেকে আমাদের লোকজন মাঠে কাজ করছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সোহেল বলেন, ঝড়ে মরিচ, বোরো ধান, পটলসহ বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিসংখ্যান সংগ্রহে মাঠ পর্যায়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফছানা কাওছার বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান এবং আমাদের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে কাজ করছে।
ঠাকুরগাঁও ২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মাজহারুল ইসলাম সুজন, ঝড়ে ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন।