Home » বাড়ছে বিষমুক্ত সবজির আবাদ- কমছে উৎপাদন খরচ, লাভবান হচ্ছে কৃষক

বাড়ছে বিষমুক্ত সবজির আবাদ- কমছে উৎপাদন খরচ, লাভবান হচ্ছে কৃষক

by নিউজ ডেস্ক

ফিরোজ আমিন সরকার ॥ ফেরমন ও হলুদ আঠালো বিষমুক্ত ফাঁদ ব্যবহার করে সবজি চাষ হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ে। পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় দিনদিন বাড়ছে এই পদ্ধতিতে সবজির আবাদ, বাড়ছে চাহিদাও। চাষিরা বলছেন, বিষমুক্ত বালাইনাশক ও ফাঁদ ব্যবহার করে কমেছে উৎপাদন খরচ- লাভও হচ্ছে ভাল।
শাকসবজি চাষাবাদে অতিরিক্তমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় একদিকে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, দুষিত হচ্ছে মাটি, পানি ও বায়ু, নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সবজির উৎপাদন খরচও। এসব ক্ষতি থেকে রক্ষায় এগিয়ে এসেছে স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও। সহযোগিতা করছে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন। সংস্থাটি স্থানীয় দশ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু করেছে।
কারও জমির পরিমাণ দশ শতক। কারও এক বিঘা। সর্বোচ্চ এক একরও আছে। কেউ লাগিয়েছেন বেগুন, টমেটো, করলা। কেউবা লাউ, মিষ্টিকুমড়া, শিম। সম্মিলিতভাবে আবাদ থেকে শুরু করে বিপনন ব্যবস্থা পর্যন্ত ১০ হাজার নারী-পুরুষ। পৃথক জমিতে পৃথক শস্যের আবাদ করছেন তারা। তবে সবাই গত এক বছর থেকে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন। এবার ফুলকপি-বাঁধাকপিতে লাভ পেয়ে বেগুন-টমেটো-করলা, মিষ্টিকুমড়া আবাদে মনোযোগী হয়েছেন তাঁরা।
সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের আশিরপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, সাহেব আলী বলেন, বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে একর প্রতি খরচ কমেছে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা। তুলনামূলক ভাবে ফলন কিছুটা কম হলেও উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ায় ভাল লাভ হচ্ছে। আর বিষুক্ত সবজির চাহিদাও বাড়ছে।
লস্করা গ্রামে কৃষক সহিদুল ইসলাম দুলাল, এক জমিতে পাতা কপির সাথে সাথী ফসল হিসেবে ধনিয়া আবাদ করেছি। রাসায়সিক সারের পরিবর্তে জৈব সার এবং কীটনাশকের পরিবর্তে গরুর মুত্র, গোবর, মেহগনীর ফল ব্যবহার করছি। এই পদ্ধতি আগে জানা ছিলনা। এখন আমরা এভাবে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছি।
একই গ্রামের রবিন চন্দ্র বলেন, বিষমুক্ত পদ্ধতিতে এবার ৫০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করে তার ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সিম বিক্রি হয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ হয়েছে প্রায় ৯৫ হাজার টাকা।
সদর উপজেলার নারগুন, গড়েয়া, আকচা, ঢোলারহাট ইউনিয়েনের বেশ ককেটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, জমিতে জৈব সার প্রয়োগের পাশাপাশি আগাছা দমনে মালচিং পদ্ধতি, পোকামাকড় দমনে ফেরোমন ট্র্যাপ, হলুদ আঠালো ফাঁদ বসানো হয়েছে। এখন মাঠ জুড়ে পাতাকপি, ফুলকপি, শিম, লাউ, টমেটো, বেগুন, পিয়াজ, রসুনসহ শীতকালীন সবধরণের শাক-সবজি।
বাজারে বিষমুক্ত সবজির চাহিদা থাকায় আগ্রহ বাড়ছে কৃষদের লাভবানও হচ্ছেন তারা।
গোবর ও ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহারের ফলে রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরতা যেমন কমে আসবে, অন্যদিকে ক্ষতিকরকীটনাশক ব্যবহার কমে গেলে মাটি ফিরে পাবে উর্বরতা। এতে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি ভোক্তারাও থাকবেন নিরাপদ।
রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে ফল ফসল উৎপাদন ভাল হলেও কীটনাশকের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে যায় মানবদেহে। তাই স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে কীটনাশকের ব্যবহার পরিহার করার পরামর্শ দেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম।

 

You may also like

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. সাকের উল্লাহ

স্বত্ব © ২০২৪ দৈনিক লোকায়ন