Home » বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে সৌরবিদ্যুতের ভূমিকা

বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে সৌরবিদ্যুতের ভূমিকা

মোঃ রুপাল মিয়া

by নিউজ ডেস্ক

বিদ্যুৎ ছাড়া মানুষ বড়ো একা। কোনো কারণে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলে এই একাকিত্ব আরও প্রকট হয়ে ওঠে। তথ্যপ্রযুক্তির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে বিদ্যুৎ। প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনি দামও বাড়ছে। বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ে বিদ্যুতের বহুমুখী ব্যবহার কমানোই কি সমাধান? উত্তর ‘না’। বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প উৎস সন্ধান করে মূল্য হ্রাস করাই হলো উত্তম সমাধান। সৌরবিদ্যুৎ তেমনি একটি বিকল্প উৎস।

সৌরবিদ্যুৎ সাশ্রয় ও পরিবেশবান্ধব। এর উৎপাদন খরচ জীবাশ্ম জ্বালানি-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম। তাই বিশ্বের অনেক দেশ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও জার্মানি। বাংলাদেশেও সৌরবিদ্যুতের-অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশে সারা বছর প্রচুর সূর্যের আলো থাকে। এটি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সহায়ক ও অনুকূল। এমন পরিবেশ উচ্চ উৎপাদনশীল সৌরপ্যানেল স্থাপনের বাড়তি সুযোগ-তৈরি করেছে। সৌরবিদ্যুতের এমন সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেই সরকার নানা ধরনের সহায়তা প্রদান করছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে কয়েক বছর থেকে বাসাবাড়ি, সেচকাজ এমনকি ছোটো শিল্পপ্রতিষ্ঠানেও সীমিত পরিসরে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সেচব্যবস্থাকে সৌরবিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ‘সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচপাম্প স্থাপনের মাধ্যমে সেচ’ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ২ হাজার সৌরবিদ্যুৎ চালিত অগভীর সেচপাম্প স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। দেশের সবচেয়ে বড়ো সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র হলো তিস্তা সোলার লিমিটেড। এর উৎপাদন ক্ষমতা ২০০ মেগাওয়াট। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার অনাবাদি ৬৫০ একর জমিতে এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড।

একটি দেশের মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার সে দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা প্রায় ৩০ হাজার মেগাওয়াট। আর মাথাপিছু উৎপাদন ৬০২ কিলোওয়াট ঘণ্টা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে বিদ্যুৎ। তাই বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধির অপরিহার্যতা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় শুধু জীবাশ্ম জ্বালানি-ভিত্তিক বিদ্যুতের উপর নির্ভর না করে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর জোর দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের মধ্যে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি। তাই সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে শহরাঞ্চলের প্রত্যেকটি ভবনে সৌরপ্যানেল স্থাপনে ভবনমালিকদের উৎসাহিত করতে হবে। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে নিজস্ব অর্থায়নে কিংবা সহজশর্তে মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে সৌরবিদ্যুতের প্রসার ঘটানো সম্ভব হবে। দেশের সকল স্ট্রিট বাল্ব, দোকানপাটসহ ছোটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সৌরবিদ্যুতের আওতায় আনলে গ্রিডলানের বিদ্যুতের উপর চাপ কমবে। এ ছাড়া সেচকাজে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আরও জোরদার করতে হবে। তবেই দেশের জ্বালানি-ভিত্তিক বিদ্যুতের উপর নির্ভরতা কমে আসবে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। (পিআইডি ফিচার)

লেখক : সহকারী তথ্য অফিসার, আঞ্চলিক তথ্য অফিস, রংপুর

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. সাকের উল্লাহ

স্বত্ব © ২০২৪ দৈনিক লোকায়ন