হরিপুর প্রতিনিধি ॥ ঠাকুরগাঁয়ের হরিপুর উপজেলায় ভাতুরিয়া ইউনিয়নে গড়ভবানীপুরে অবস্থিত চব্বিশ পরগনা জেলার ভাতুরিয়া রাজা গনেশের বসতভিটা, গড়, পুকুর ও দুটি নদ এসকল নিদর্শন সমূহ সংরক্ষণের অভাবে দিনদিন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তার শাসনকাল ছিল ১৪১৪খ্রিঃ থেকে ১৪১৫খ্রিঃ পর্যন্ত। পরবর্তিতে রাজা গনেশের পুত্র দুদু মিয়া ওরফে জালাল উদ্দিন এর হস্তক্ষেপে চব্বিশ পরগনায় ইসলাম ধর্ম প্রচার ও সম্প্রসারণ ঘটে।
ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে ৬০ কিঃমিঃ দূরত্বে অবস্থিত হরিপুর উপজেলা। এই উপজেলা থেকে প্রায় ৭ কিঃমিঃ দূরত্বে ভাতুরিয়া রাজা গনেশের ঐতিহ্য ও নিদর্শন সমূহ। এখান থেকে মাত্র ২-৩ কিঃমিঃ দূরত্বে ভারত সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়া। তার শাসন আমল থেকে এখন পর্যন্ত ৬০৮ বছর অতিবাহিত হতে চলছে। অথচ এসময়ের মধ্যে সরকারি ভাবে রাজা গনেশের বসতভিটা, গড়, পুকুর ও নদের সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শুধু ইতিহাসের পাতার মধ্যেই এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় এর অবস্থান হওয়ার কারণে এটি সরকারের দৃষ্টি পড়ছে না। প্রায় ৫০ একর জমিতে রয়েছে রাজা গনেশের বাড়ী, নদ ও পুকুর। কালের বিবর্তনের ফলে তার বাড়ীর ভিটারও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে। এখানে একটি বিশাল গড় রয়েছে। এতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছ ও নিদর্শন। গড়ের গাছগুলো এলাকার প্রভাবশালীরা প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করেই প্রতিনিয়ত কেটে কেটে বিক্রয় করে উজার করে দিচ্ছে গড়ের স¤পদ। রাজা গনেশের বাড়ীর দুপাশে দুটি নদ ছিল। এ নদের উৎপত্তি ছিল কুলিক নদী থেকে সেগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এ নদ দুটি সংস্কার করে পূনজ্জিবিত করলে কৃষিখাতে ব্যাপক সাফল্য ঘটবে। গড়ের পাশে রয়েছে ত্বন্নীদিঘী নামে ১০ একরের একটি বিশাল পুকুর। পুকুরটির চতুর পার্শ্বে ৭৫ ফিট প্রস্ত বিশিষ্ট মাটির প্রাচীর দ্বারা ঘেরা ছিল। সংস্কারের অভাবে শুষ্ক মৌসুমে পুকুরে পানি থাকে না। এই পুকুরের চতুর পাশ দিয়ে রাজা ঘোড়া দৌড়ের প্রশিক্ষণ দিত বলে জানা গেছে। পুকুরের মধ্যে এক অংশে অলৌকিক একটি বিশাল শাল কাঠের খুঁটি এখনও বিদ্যামান রয়েছে এর পিছনে অনেক অলৌকিক ঘটনা। পুকুরের পূর্ব পাড়ে রয়েছে একটি পীরের মাজার আছে। ১৯৯০ সালে ঐ পুকুর পাড়ে ৩৮টি পরিবার নিয়ে একটি গুচ্ছগ্রাম তৈরি করে সরকার। এসময় থেকে উক্ত পুকুরটি তাদের দখলেই রয়েছে। ৬নং ভাতুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাজাহান আলী বলেন, রাজা গনেশের ইতিহাস আমরা পাঠ্য বইতে পড়েছি। পড়ে জানতে পারি আমাদের এই গ্রামে তার বাড়ী; এটা আমাদের সবারই গর্ব। রাজা গনেশের প্রাচীনতম ইতিহাস তার বাড়ী ও গড় সহ সব কিছুই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকারের। এখানে অনেক মহামূল্যবান সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু এসকল বিষয়ের দেখভালের কেউ না থাকায় দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আগামী নতুন প্রজন্ম শুধু মুখেই শুনবে কিন্তু বাস্তবে তার চিহ্ন খুঁজে পাবে না। রাজা গনেশের কারণে আমরা ইতিহাসে পরিচিত হয়েছে। তার নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ করা দরকার। এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। এলাকার সর্বস্তরের মানুষ এগুলো রক্ষনাবেক্ষনের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
রাজা গনেশের নিদর্শন বিলুপ্তির পথে
২৮৮