প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৭, ২০২৪, ২:৩০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪, ৩:১৫ পূর্বাহ্ণ
রাণীশংকৈল(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধিঃ ৭২ বছর আগে ভাষা আন্দালনের পথ ধরে স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়েছে দেশ। মাত্র দু'দিন পরেই ২১শে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সেই ভয়াল ইতিহাস প্রতিবছর ঘটা করে সারাদেশে পালন করা হলেও ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় ২৪১ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৪ টিতে শহীদ মিনার নির্মাণ না হওয়ায় ৫২ সালের সেইসব বীর ভাষা শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, শফিক,জব্বারদের যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজার, হাজার শিক্ষার্থী।
এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে পারে না। অনেক প্রতিষ্ঠান
শুধু জাতীয় পতাকা তুলে দায়িত্ব পালন করেন। ওইসব প্রতিষ্ঠানে কোন আলোচনা না করায় মহান ভাষা আন্দোলন কিংবা অমর একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে কিছুই জানে না শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি)
সরেজমিনে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সমগ্র উপজেলায় কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মোট ২৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র
৬৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হলেও বাকী গুলোতে নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ১২ টি কলেজ, ৫৪ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১৯ টি মাদ্রাসা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র ৪ টি কলেজে,১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। কিন্তু ১৯ টি মাদ্রাসার মধ্যে ১ টিতেও নেই শহীদ মিনার।
অপরদিকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে,উপজেলায় ১৫৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এরমধ্যে শুধুমাত্র ৪৫ টি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে শহীদ মিনার।
এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শহীদ মিনার না থাকাে কারণে শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন অমর একুশে ফুল দিয়ে শহীদদের সম্মান জানাতে পারে না, অপরদিকে তারা ভাষা আন্দোলন কিংবা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে তেমন কিছু শিখতে বা জানতে পারছে না। এছাড়াও গ্রামাঞ্চলের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে সেগুলো রয়েছে অযত্ন-অবহেলায়।
একুশে ফেব্রুয়ারি আসলেই শুধু একটু আধটু ঘষামাজা করা হয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একুশে ফেব্রুয়ারির দিন তেমন কোনো কর্মসূচি থাকে না।
এছাড়াও সমগ্র উপজেলায় প্রায় ৫০ টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে এগুলোর একটিতেও নেই কোন শহীদ মিনার, থাকেনা বিশেষ কোন কর্মসূচি।
ভিজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র মো. মাসুদ জানান, প্রতিষ্ঠানে থেকে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়। শহীদ মিনার না থাকায় ফুল দিয়ে সম্মান জানাতে পারিনা আমরা। খড়রা মহেষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র শামীম জানায়, ওই ভোরে স্যাররা পতাকা তুলতে বলে। তাই পতাকা তুলে বাড়ি আসি। কোনো আলোচনা কিংবা মিলাদ হয় না। বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকলে ফুল দিয়ে শহীদদের সম্মান জানানো যেত। বনগাঁও দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট হারুন আল রশিদ জানান, আমার প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। আমি শিক্ষক- কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে পাশ্ববর্তী মীরডাঙ্গী স্কুল মাঠে শহীদ মিনারে একুশে প্রভাত ফেরিতে ভাষা শহীদের স্মরণে ফুল দিতে যাই। গাজিরহাট ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ আব্দুল কুদ্দুস জানান,আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের সম্মান জানানোর জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা উচিৎ। এতে করে সবাই শহীদদের প্রতি যেমন সম্মান জানাতে পারে তেমনি শিক্ষার্থীরা এ দিবসটির তাৎপর্য বুঝতে পারবে।
রাণীশংকৈল উপজেলা শিক্ষা অফিসার রাহিমউদ্দিন জানান,শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারিভাবে কোন বরাদ্দ নেই।
আমি এখানে যোগদানের দুই বছরে শিক্ষকদের অনুপ্রাণিত করে ৩৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পেরেছি। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো.তোবারক হোসেন জানান, স্থানীয়ভাবে অর্থব্যয় করে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব না। সরকারি উদ্যোগে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা প্রয়োজন। তার পরও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের উৎসাহিত করে কিছু প্রতিষ্ঠানে নির্মান করা হয়েছে।
এছাড়াও দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পতাকা উত্তোলনসহ আলোচনা সভা করার জন্য অফিস থেকে চিঠি দেওয়া হয়ে থাকে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.রকিবুল হাসান জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো অতি গুরুত্বপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট প্রতিটি শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানদের প্রধান ও স্কুল পরিচালনা কমিটিকে উদ্বুদ্ধ করে উপজেলার সকল প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।