Home » শিক্ষার্থী নেই, গল্প করে সময় কাটে শিক্ষক-কর্মচারীর

শিক্ষার্থী নেই, গল্প করে সময় কাটে শিক্ষক-কর্মচারীর

by নিউজ ডেস্ক
মো. নুর হাসান, পঞ্চগড়: প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষই শিক্ষার্থীশূন্য। শ্রেণি কক্ষে শিক্ষকদের জন্য নেই চেয়ার, টেবিল। চোখে পড়েনি কোন ব্ল্যাকবোর্ড। দুইটি শ্রেণিতে দেখা গেলো শিক্ষার্থী জন্য ৩ টি বেঞ্চ, টেবিল। জমেছে ধুলা, দেখলেই বোঝা যায় দীর্ঘদিন কেউ এতে বসেনি। অফিস কক্ষে নেই মাদ্রাসাটির সুপার। সহকারী শিক্ষকরা কর্মচারীদের নিয়ে অফিসে বসে গল্প করছেন। ২/৩ জন ছিলেন দাখিল স্তরের পাঠদানে। তখনও বন্ধ এবতেদায়ি শাখার শ্রেণি কক্ষগুলো। সংবাদকর্মীদের দেখে তরিঘরি করে খোলা হয় কক্ষের তালা।
রবিবার (৯ জুন) দুপুর ১২টায় পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের মুসলিমপুর দাখিল মাদরাসায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিন পুরো মাদ্রাসার উপস্থিতি ছিলো মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থী। ২৫ জনই দাখিল স্তরের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির।
এর আগেও ২৯ মে মাদ্রাসাটিতে গিয়েও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কোন শিক্ষার্থী পাওয়া যায় নাই। তবে হাজিরা খাতায় দেখা গেলো উপস্থিতি সন্তোষজনক লিখে রাখা হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এটি প্রায় প্রতিদিনকার চিত্র। মাদ্রাসাটিতে শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না। শুধু শিক্ষকরাই এসে আড্ডা দিয়ে সময় কাটান। তাদের অভিযোগ, শিক্ষকদের অবহেলার কারণেই বিদ্যালয়টির আজ এ করুণ দশা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, একটি শিক্ষার্থীশূন্য মাদরাসায় চারজন শিক্ষক কীভাবে বেতন-ভাতা তোলেন। এটা কি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেখেন না।
মাদ্রাসাটির সূত্রে জানা গেছে, এমপিওভুক্ত এই মাদ্রাসাটি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে ১৯ জন। এর মধ্যে ইবতেদায়ী শাখায় শিক্ষক রয়েছে চারজন আর এই চারজন শিক্ষকের জন্য কাগজে-কলমে রয়েছে ১১২ শিক্ষার্থী। কিন্তু বাস্তবের চিত্র ভিন্ন।
মাদরাসাটির দাখিল শাখার রিফাত, মৌসুমি, বাদল, সিয়ামসহ শিক্ষার্থীরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এবতেদায়ী শাখায় কোন শিক্ষার্থী আসে না।
জানতে চাইলে মাদ্রাসার এবতেদায়ি শাখার প্রধান আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান কৃষি কাজের মৌসুম এজন্য শিক্ষার্থীরা আসছেনা। আর আশপাশে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, সেগুলোতে উপবৃত্তি সুবিধা থাকায় শিক্ষার্থীরা সেদিকেই যাচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় আসে, কিছুদিন ধরে কম আসছে।’ হাজিরা খাতায় উপস্থিতির বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
মাদ্রাসাটির সহ-সুপার সামছুল আলম পাঠদান করছিলেন দাখিল স্তরের একটি শ্রেণিতে। এবতেদায়ি শাখার এমন বেহাল অবস্থা কেন জানতে চাইলে সবকিছু ঠিকঠাক আছে দাবি করেন। বলেন, তাদের ছুটি হয়ে গেছে, এজন্য কোন শিক্ষার্থী নেই। চ্যালেঞ্জ ছুরলে বলেন, সুপার সাহেব ট্রেইনিং এ আছেন। দুইদিন পরে আসেন, উনার সঙ্গে কথা বলিয়েন।
মাদ্রাসার সুপার মকবুল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসামুখী করতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
বোদা উপজেলা শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার আবু ওয়ারেশ বলেন, মুসলিমপুর দাখিল মাদ্রাসার এবতেদায়ি শাখায় শিক্ষার্থী না থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির বলেন, শিক্ষার্থী ছাড়া প্রতিষ্ঠান তারা (শিক্ষকরা) কিভাবে চালাচ্ছেন! যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট করবো।

You may also like

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. সাকের উল্লাহ

স্বত্ব © ২০২৪ দৈনিক লোকায়ন