মোঃ জাহিদ হাসান মিলু: ঈদের মাত্রা দুইদিন বাকি তাই ঠাকুরগাঁওয়ে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট গুলো। জেলায় চাহিদার থেকেও প্রস্তুত করা রয়েছে বেশি পশু। তাই হাট গুলোতে ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের পশুর আমদানিও অনেক। তবে ক্রেতারা বলছেন এবার দাম অনেক চড়া আর বেপারীরাসহ সাধারণ বিক্রেতা ও খামারিরা বলছেন গতবারের তুলনায় এবার গরু দাম কম। এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, পশুর খাদ্য থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বাড়তি ফলে এবার পশুর দামও একটু বেশি।
আসন্ন কোরবানির জন্য এবার এজেলায় ১ লাখ ৩২ হাজার গরু ও ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে। চাহিদা মাত্র ৯০ হাজার। যা চাহিদার তুলনায় ৪০ হাজার বেশি। আর এসব পশু জেলার স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ২৪টি হাটে ক্রয় বিক্রয় করা হচ্ছে। বেপারীরা আবার এই হাট গুলো থেকে ক্রয় করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাচ্ছেন পশু।
পশুর বৃহত্তম হাট লাহিড়ীছাড়াও শহরের সেনুয়া পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভীর। হাট গুলোতে ৭০ হাজার থেকে শুরু করে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে। ২ মণ থেকে ৭ মণ পর্যন্ত ওজনের গুরু উঠেছে হাটে।
মো. ইসমাইল হোসেন, বশির আলী, মো. গিয়াসউদ্দিনসহ আরও অনেক ক্রেতা বলেন, বাজারে এসে দেখি ক্রেতা বিক্রেতাদের অনেক ভীর। গরু ছাগলও আনা হয়েছে অনেক। কিন্তু বিক্রেতারা যা দাম চায়। তাতে ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।গতবছরের তুলনায় এবার গরু প্রতি প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা দাম বেশি। লাখের নিচে তেমন ভালো গরু পাওয়া যায় না। তাই বাজেটের থেকেও বেশি টাকা দিয়ে পশু ক্রয় করতে কষ্ট হয়ে দাড়িয়েছে।
অন্যদিকে বেপারীদের মধ্য মো. আবু তাহের বলেন, বেচা কেনা ভালো হলেও দাম ভালো পাওয়া যায় না। এবার গরু প্রতি ৫-৭ হাজার টাকা দাম কম। তাই তারা গরু বিক্রয় করে তেমন ভালবান হতে পারছি না আমরা।
খামারি জসিম উদ্দিন বলেন, গতবার গরুর দাম ভালো থাকলেও এবার দাম কম। বর্তমানে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে ভালো গরু বিক্রয় হচ্ছে।
মোকলেছুর রহমান নামে এক বেপারী ৭ মণ ওজনের গরু বিক্রয় করতে এসে তিনি বলেন, গরুর দাম রেখেছি ২ লাখ ৫০ হাজার। কিন্তু ক্রেতারা দাম বলে ২ লাখ ৫-১০ হাজার মাত্র।
সাধারণ বিক্রেতা রঞ্জিত কুমার রায় বলেন, আমার গরুটির ওজন প্রায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ মণ হবে। দম চাই ১ লাখ ৭০ হাজার আর মানুষ দাম বলে ১ লাখ ২০-৩০ হাজার। এতোবড় গরু এতোকম দামে তো বিক্রি করা যায় না।
এছাড়াও ছাগলের দাম ভালো থাকলেও ক্রেতা কম থাকায় ও বেশি বিক্রয় না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিক্রতারা অনেক সাধারণ বিক্রেতা।
ছাগল বিক্রেতা মো. নূর আলম হোসেন নূর বলেন, এবার ছাগলের দাম ভালো আছে। রাম জাতের আমার খাসি ছাগলের দাম রেখেছি ৫০ হাজার টাকা। দাম বলতেছে ২৩ হাজার টাকা।
অন্যদিকে কয়েক হাট ঘুরেও ছাগল বিক্রয় করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মো. সহিদুল ইসলাম ও সঞ্চয় বলেন, ভালো দাম পাওয়ার আশায় আমরা গরু ছাগল পালন করি কিন্তু গত কয়েক হাট থেকে ছাগল গুলোকে নিয়ে হাটে ঘুরছি কিন্তু ক্রেতা না পাওয়ায় ও দাম কম বলায় বিক্রিয় করতে পারছি না।
এবার পশুর খাদ্য থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম বেশির ফলে পশুর দামও কিছুটা বাড়তি উল্লেখ্য করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলার চাহিদার তুলনায় এবার ৪০ হাজারেরও বেশি পশু প্রস্তুত করেছে খামারিরাসহ স্থানীয় পশুপালন কারীরা। আমরা তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানসহ তারা যেন পশু মোটাতাজাকরণে কোনো প্রকার ঔষুধ ব্যবহা না করে সে বিষয়ে সর্তক করা হয়েছে।
অনেকে আবার সাধ্যের মধ্যে ও তুলনামূলক কম দামে পশু ক্রয় করতে পেরে খুশি। তারা বলছেন, গতবারের তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা কম। তেমনি মো. রেদোয়ান ইসলাম রাতুল, গত বছর ২ মণ ওজনের মতো একটি গুরু ক্রয় করেছিলাম ৮০-৮৫ হাজার টাকায় এবার প্রায় একই ওজনের গরু নিয়েছি ৭৭ হাজার টাকায়। গতবারের তুলনায় এবার দাম একটু কম।
এছাড়াও মো. রবিউল ইসলাম রুবেল বলেন, এবার একটু দাম ৭২ হাজার টাকায় গুরু ক্রয় করতে পেরেছি। এবার বাজার দর হাতের নাগালের মধ্যেই রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সেনুয়া পশু হাট কমিটির সদস্য হামিদুল ইসলাম উজ্জ্বল বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার হাটে পশু আমদানি অনেক বেশি। লোকসমাগও অনেক বেশি। তবে এবার ঈদের শেষ মুহূর্তে এসে গরুর দাম কিছুটা কমেছে। কিছুদিন আগেও দাম বেশি ছিল। এক দুই দিনে হয়েতো দাম আরও একটু কমতে পারে।