Home » শ্বশুরের টাকায় পড়ালেখা করে পাল্টি খেল ডাক্তার জামাই

শ্বশুরের টাকায় পড়ালেখা করে পাল্টি খেল ডাক্তার জামাই

by নিউজ ডেস্ক

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: মেয়েকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতিতে হবু শ্বশুরের টাকায় পড়ালেখা করে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ডাক্তার হয়েছেন আব্দুস সালাম। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হবু শ^শুরের মেয়েকে বিয়ে করে এক কন্যা সন্তানের পিতাও হয়েছেন তিনি। ডাক্তারি পেশায় সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আর তার সেই স্ত্রীকে ভাল লাগে না। তার সাথে সংসারও করতে চাননা তিনি। তাই বাড়ি ছাড়া করতে নানা অযুহাতে প্রায়ই স্ত্রীর উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে এক তরফা তালাকও দিয়েছেন। বাধ্য হয়েই তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন স্ত্রী। মামলা তদন্ত করে পুলিশ তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীটও দাখিল করেছেন। আব্দুস সালাম ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকল অফিসার। প্রেষণে কর্মরত রয়েছেন পাশ^বর্তী রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ঠিকমত চাকুরীও করেন না তিনি। কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই বেশির ভাগ সময়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। তারপরেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন ওই ডাক্তার।
এসবের প্রতিকার চেয়ে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রী সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তার স্ত্রী বুলবুল আক্তার।
জানা যায়, পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আব্দুস সালামের বাড়ি পাশর্^বর্তী রাণীশংকৈল উপজেলার হাড়িয়া গ্রামে। পিতার নাম ইসমাইল হোসেন। এইচএসসি পাস করে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পান দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে। আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় পীরগঞ্জ উপজেলার বাসন্ডী গ্রামের শাহজাহান আলীর মেয়ে বুলবুল আক্তারকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতিতে হবু শ্বশুরের টাকায় পড়ালেখা চালিয়ে যান তিনি। মেডিকেল কলেজে পড়াকালীন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল বুলবুল আক্তারকে চার লক্ষ নিরানব্বই হাজার টাকা দেনমোহরে কাবিন মুলে বিয়েও করেন। লেখাপড়ার খরচ বাদেও বিয়েতে উপঢৌকন হিসেবে শ্বশুরের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকাও নেন। পড়াশুনা শেষে ৩৯তম বিসিএস এর মাধ্যমে মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। সেখানে স্ত্রী বুলবুলকে নিয়ে সাংসার করতে থাকেন। এরই মধ্যে এক কন্যা সন্তানের জনক হন তিনি। ডাক্তারি পেশায় সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আর তার সেই স্ত্রীকে ভাল লাগে না। আসক্ত হয়ে পড়েন অন্য নারীর প্রতি। তাই স্ত্রীকে বাড়ি ছাড়া করতে নানা অজুহাতে প্রায়ই স্ত্রী বুলবুরের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকেন। স্ত্রী সন্তানকে আলাদা করতে বদলী নেন ঠাকুরগাঁওয়ে। বছর খানেক আগে ঠাকুরগাঁও থেকে মেডিকেল অফিসার হিসেবে বদলী নিয়ে আসেন পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসেন। কয়েকদিন পরেই প্রেষণে আবার চলে যান নিজ উপজেলা রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। নিজ এলাকায় আবার আসার পর থেকে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন স্ত্রীর উপর। গত বছরের ১৮ আগষ্ট স্ত্রী বুলবুল কে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং এক তরফা তালাক প্রদান করে আত্মগোপনে যান। তখন থেকেই বুলবুল শিশু কন্যাকে নিয়ে পিত্রালয়ে অবস্থান করছেন। তবে স্ত্রী বুলবুল তালাকের নোটিশ গ্রহন করেননি। নোটিশ না নিয়ে স্বামীর সাথে বহুবার যোগাযোগ র্কর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পারেনি। স্বামীর সাথে ডোগাযোগ করতে না পারায় এবং স্বামীর বাড়ির লোকজনও বুলবুলকে আশ্রয় না দেয়ায় গত ৪ নভেম্বর পীরগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পুলিশ মামলা তদন্ত শেষে আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
এদিকে রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ডাঃ আব্দুস সালাম গত বছরের ২০ আগষ্ট থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দফায় কর্মস্থলে মাত্র ৫ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। বাকি সময় অনুপস্থিত ছিলেন। এতে বর্তমানে তার বেতন বন্ধ রয়েছে।
পীরগঞ্জ থানার মামলা প্রসঙ্গে ওসি (তদন্ত) বিদ্যুৎ কুমার চৌধুরী বলেন, ডাঃ আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় কিছু ধারা বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
অভিযোগ বিষয়ে ডাঃ আব্দুস সালাম মুঠোফোনে জানান, তিনি কারো টাকা দিয়ে পড়াশুনা করেননি। নিজ যোগ্যতায় ডাক্তার হয়েছেন। নানা সমস্যসার কারণে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। এ গুলো আইন আদালতের বিষয়, আইন আদালত দেখবে। তিনি আরো বলেন, তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সত্য নয়।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ফিরোজ আলম বলেন, ডাঃ আবুস সালাম এখানে প্রেষণে কর্মরত আছেন। নিয়মিত অফিস না করায় বর্তমানে তার বেতন সহ সকল সরকারি সুযোগ সুবিধা বন্ধ আছে।

You may also like