আব্দুর রশিদ, (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়ই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ-বৃষ্টি ঝড়ে।
কবি রজনীকান্ত সেনের ‘অমর’ কবিতাটি এখন তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ের পাঠ্য হিসাবে অন্তর্ভূক্ত। শুধুমাত্র পাঠ্য পুস্তকের কবিতা পড়েই শিক্ষার্থীরা বাবুই পাখির নিপুন শিল্পের কথা জানতে পারলেও বাস্তবে তার দেখা মেলা ভার। আগের মত গ্রামগঞ্জে এখন আর চখে পড়ে না বাবুই পাখির দৃষ্টি নন্দন সেই বাসা। বন উজার আর এক শ্রেণির শিকারীর কারণে বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির এই বুনন শিল্পীরা। এক সময় গ্রাম-অ লে সারি সারি উঁচু তাল গাছে বাবুই পাখির দৃষ্টি নন্দন বাসা দেখা যেতো। এখন তা আর সচরাচর চোখে পড়ে না। খড়, তালপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে বাবুই পাখি বাসা বাঁধে। বাসা দেখতে যেমন আকর্ষনীয় তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা পড়ে না। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তোলে বাবুই পাখি আজ আমরা হারাতে বসেছি।
পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ছয়টি বাসা তৈরি করতে পারে। আমন ধান পাঁকার সময় হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। এমসয় সাধারণত তারা তাল ও খেজুর গাছের ডালে বাসা তৈরী করতে ব্যাস্ত থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পরপরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই ক্ষেতে থেকে দুধ ধান সংগ্রহ করে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের আগ্রাসী কার্যকলাপের বিরুপ প্রভাবই আজ বাবুই পাখি ও তার বাসা হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে দেশের গ্রামগঞ্জের কিছু কিছু অ লের তাল ও খেজুর গাছে এখনও চোখে পড়ে বাবুই পাখির বাসা। তবে তাল গাছেই তাদের একমাত্র নিরাপদ জায়গা। সেখানে তারা বাসা বাঁধতে সাচ্ছন্দ বোধ করে। বাবুই পাখি ও তার বাসা টিকিয়ে রাখতে আমরা যদি গ্রামগঞ্জ সহ সারা দেশেই রাস্তার ধারে বা প্রতিত জমিতে সমন্বিত ভাবে তালগাছ রোপনের উদ্ব্যোগ গ্রহণ করি তাহলে আমরা ফিরে পাবো কবি রজনীকান্ত সেনের এই কবিতার বাস্তবতা আর গ্রামগঞ্জের হারিয়ে যাওয়া পূর্বের ঐতিহ্য। নতুন প্রজন্ম আর বাবুই পাখির মধ্যে গড়ে উঠবে দৃষ্টি নন্দন ভালবাসা।