প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৬, ২০২৪, ১০:৪৬ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জানুয়ারি ১৫, ২০২৪, ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ
মোঃ জাহিদ হাসান মিলু: উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিবছর শীতের প্রকোপ বেশি হয়ে থাকে কিন্তু অন্যান্য বারের তুলনায় এবার শুরুতে শীতের প্রকোপ কম থাকলেও ৫-৬ দিন ধরে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় কাঁপছে জনজীবনসহ প্রাণীকুল। রোববার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ৬ টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এতে বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ গুলো।
দেখা যায়, জেলায় এবার অক্টোবরের শেষ দিকে হালকা করে শীত পড়া শুরু হলেও ডিসেম্বরে শীতের মাত্রা বাড়তে থাকে এবং জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে পৌষের শেষে এসে হঠাৎ করে বেড়ে যায় শীত ও কুয়াশা। ক্রমেই কমছে বাতাসের আর্দ্রতা আর বাড়ছে হিমেল হাওয়ার ঠাণ্ডা পরশ। জেলায় ৫-৬ দিন ধরে সূর্য্যের দেখা নেই বললেই চলে। তবে দুপুরের পরে একটু আধটু দেখা মিললেও তাপমাত্রা থাকে খুবই কম। দুপুরেও মাঠ ঘাট কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকলেও সন্ধ্যা থেকে বাড়তে শুরু করে কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাশ। রাত যত গভীর হয় কুয়শার ঘনত্ব ও ঠান্ডার দাপট ততো বাড়তে থাকে। গাড়ির লাইটও কুয়াশা ভেদ করে বেশি দূর যেতে পারে না।
সন্ধ্যা থেকে থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা থাকছে রাস্তা ও ফসলের মাঠসহ চার দিক। দুঘর্টনা এড়াতে রাস্তায় চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। ফুটপাতে ও রাস্তার ধায়ে খড়কুটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে। এছাড়াও শীতের কারণে গৃহপালিত গরু ছাগলের গায়ে পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কাপড় ও চটের বস্তা। অন্যদিকে হাসপাতাল গুলোতে শীতজনিত কারণে সর্দি, কাশি, ডায়রিয়ার জন্য শিশুদের নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, তীব্র শীতের কারণে তারা ঠিকভাবে কাজকাম করতে পারছেন না। শীতে কাজ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে তাদের। তাই শীত নিবারণের জন্য সরকারের কাছে শীত বস্ত্রের আকুতি জানান তারা।
আব্দুল রহিম নামে সদর উপজেলার আরাজীকৃষ্ঠপুর গ্রামের অটোচালক বলেন, রাস্তা ঘাটে এতো কুয়াশা পড়ছে যে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শীতের জন্য অটোরিক্সায় কেউ উঠতে চাচ্ছে না। আয় রোজকার খুবই কমে গেছে।
পশ্চিম নারগুণ গ্রামের আব্দুর রহমান নামে এক কৃষক বলেন, এইদিকে এবার সূর্য্যের আলো দেখায় যায় না। এতো ঠান্ডা পড়েছে যা বলার মতো না। ক্ষেতখামারে লোকজন কাজ করতে চায় না। তাই ক্ষেতের পরিচর্যা ব্যহত হচ্ছে।
নারগুন কহরপাড়া গ্রামের মো. কুদ্দুস বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে এবার প্রথম দিকে শীত কম ছিল কিন্তু হঠাৎ করে ৫-৬ দিন ধরে শীত ও ঠান্ডা অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। এতে চরম কষ্টে পরেছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের জন্য সরকার যদি গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করতো তাহলে খুব উপহার হতো।
অন্যদিকে দূরপাল্লার গাড়ি চালকরা বলছেন, প্রচন্ড শীত ও কুয়াশার কারণে গাড়ি চালাতে তাদের খুব কষ্টকর হয়ে গেছে।
শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার মো. পারভেজ। তিনি পেশায় একজন ট্রাক চালক। তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে কুয়াশার জন্য গাড়ি চালাইতে পারছি না। এক সপ্তাহ পরে গাড়ি বেড় করলাম। তাও আবার কোন ভাড়া নেই। ঠান্ডার জন্য গাড়ির লেভার গুলো কাজ করতে চায় না। এভাবে আয় রোজকার একদমি নেই বললে চলে। ঠান্ডায় পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে পড়েছে।
ট্রাক চালক মাহফুজ বলেন, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে গাড়ি নিয়ে আসতে হয় চরম ঝুঁকি নিয়ে। বিশেষ করে রাতে রাস্তায় গাড়ির হেডলাইটেও কিছুই দেখা যায় না্। খুব ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে আমাদের। কখন কিভাবে দুর্ঘটনা ঘটবে তা বলা যায় না।
এদিকে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ঠান্ডার কারণে শিশুরা বিশেষ করে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি
হচ্ছেন অনেকে।
রাণীশংকৈল থেকে সোহেল রানা তার ছোট ছেলেকে ভর্তি করেছেন শিশু ওয়ার্ডে। তিনি বলেন ঠান্ডার কারণে হঠাৎ করে ছেলেটার কফ সর্দিতে বুক ঘেরঘের করছে তাই কালকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। একই কথা জানান সদর উপজেলার পূর্ব বেগুন বাড়ি গ্রামের রুমি আক্তার। তিনিও তার সন্তানের নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া সমস্যা নিয়ে দুই দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে, হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২৫০ হলেও রোববার (১৪ জানুয়ারি) হাসপাতালে মোট ৪৪৫ জন রোগী ভর্তিছিল। আর শিশু ওয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা ৪৫ শয্যা হলেও ১৪৫ জন রোগী ভর্তি আছে।
ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. রকিবুল আলম চয়ন বলেন, শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও এখনো শীতজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা তেমন বাড়েনি। তবে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আগমীতে বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। এর জন্য সকল ধরণের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আলমগীর কবির জানান, রোববার সকাল ৬ টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ ২৬.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এতে কৃষকদের বোরো ধানের বীজ তলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়ার ও সকালে ডিপটিউবয়েল দিয়ে পানির সেচ দেওয়ার এবং সেই পানি আবার বিকালে অপসারণ করে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়াও তিনি শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে কৃষকরা যাতে বোরো ধানের বীজতলা রোপন না করেন এবং কৃষকদের প্রতি বর্গমিটারে প্রতি লিটারে ৭ গ্রাম করে ইউরিয়া ও ১০ গ্রাম জিপসাম স্প্রে করার পরামর্শের কথা জানান।
এছাড়াও ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, জেলার ৫৪ টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভায় এপর্যন্ত ৩৩ হাজার ৪৫০ পিস কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও চাহিদা অনুযায়ী আরও ৫০ হাজার কম্বল ও ২০ লাখ টাকা চাহিদা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। শীতে সরকারের পাশাপাশি তিনি বিত্তশালীদেরও শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।