Home » ১৬ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে মায়ের কোলে সন্তান’ 

১৬ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে মায়ের কোলে সন্তান’ 

by নিউজ ডেস্ক

সুজন ভূল্লী প্রতিনিধিঃ পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ভূল্লী থানাস্থ আউলিয়াপুর  ইউনিয়নের বাসিন্দা সাবেক বিডিআর সদস্য মোতাহার হোসেন মানিক (৩৬)। দীর্ঘ ১৬ বছর পর গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে মায়ের কোলে ফেরেন তিনি। তাঁকে দেখতে ভিড় জমান আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীসহ বন্ধুবান্ধব।

এ সময় আবেগে আপ্লুত হন উপস্থিত সবাই। বাড়ির পাশে বাস থেকে নামলে গ্রামবাসী ফুলের মালা দিয়ে মোতাহারকে বরণ করে নেয়। এরপর তাঁকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। এ সময় তাঁর মা মুক্তা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বুকের ধন ফিরে পেয়েছি। আর যেন কোনো মাকে এভাবে কষ্ট ভোগ করতে না হয়।’

মোতাহার হোসেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ও কচুবাড়ী জোতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। বাড়ি ফিরে বাবাকে না পেয়ে মোতাহার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিন বছর আগে তাঁর বাবা মারা যান।

চাকরির ছয় মাস বয়সে পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় ১৬ বছর জেল খাটেন মোতাহার। ট্রেনিং শেষে বাড়ি ফিরলে বাবা তাঁকে বিয়ে করান পাশের জেলার ববি আক্তারকে। তিন দিন সংসার শেষে কর্মস্থলে ফিরে যান তিনি। ১৬ বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা স্ত্রীর কাছে ফিরলেন অবশেষে। স্বামীকে ফিরে পেয়ে কান্না আর থামছিল না তাঁর। ববি বলেন, ‘বিয়ের তিন দিনের মাথায় স্বামী ছুটি শেষে চাকরিতে ফিরে যান, ১৬ দিনের মাথায় কারাগারে চলে যান। তখন থেকে স্বামীর অপেক্ষায় ছিলাম। দিন গড়িয়ে বছর হয়েছে, বছর গড়িয়ে দশক হয়েছে, তবু তাঁর মুক্তি মেলেনি। ১৬ বছর পর সেই দিন এল।’

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া মোতাহার হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সম্পূর্ণ বিনা বিচারে আমি ১৬ বছর কারাগারে ছিলাম। যদি সঠিক বিচার হতো, তাহলে আমার কারাভোগ করতে হতো না।’ তিনি বলেন, ‘১৬ বছর পর মায়ের কোলে ফেরা অন্যরকম এক অনুভূতি। এটা বলে বোঝানো যাবে না। এ জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। মাত্র ছয় মাস চাকরির বয়সে বিনা অপরাধে ১৬ বছর জেলখানায় কেটে গেছে। কী থেকে কী হয়েছে, এটা সবাই জানে।’

মোতাহার হোসেন বলেন, ছয় মাস চাকরি আর ১৬ বছরের জেল। এই অল্প সময়ে কী অপরাধ করতে পারি বলেন? বাড়ি ফিরেছি, তবে একটাই চিন্তা, ১০ তারিখ কোর্ট আছে। প্রহসনের কোর্ট; মামলার বাদী বলেছেন, আমাদের ওপর প্রহসনের মামলা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার ইচ্ছা করলেই এটি ডিস্ট্রয়, বাতিল বা শেষ করতে পারে। জানি না আর কত দিন হয়রানি হতে হবে এই বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন তিনি।

সাবেক এই বিডিআর সদস্য বলেন, ‘আমাদের অনেক অসহায় ভাই এখনো ভেতরে আছেন। তাঁদের কোনো অপরাধ নেই। মিথ্যা মামলায় তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে। এই সরকারের উচিত তাদের ছেড়ে দেওয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিজম দূর হওয়ায় আমি মায়ের কোলে ফিরে আসতে পেরেছি।

You may also like