ফিরোজ আমিন সরকার ॥ ভোরের আলো ফোটার আগেই দুর দুরান্ত থেকে খেজুরের বাগানে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। চড়া দামে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে খেজুরের রস, কাঁচা রস পান করছেন অনেকেই। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বাসিন্দারা বলছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। এমন দৃশ্য ঠাকুরগাঁওয়ের নারগুন বোচাপুকুর খেজুরের বাগানে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নিপা ভাইরাস নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত সতর্কবার্তা আর খেজুরের কাঁচা রস পান করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হলেও ঠাকুরগাঁওয়ে এর উল্টো চিত্র। সকাল হতে না হতেই শিশু-বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ দুরদুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন এই খেজুরের বাগানে। প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের নজরদারি না থাকায় প্রতিদিন দেদারসে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে খেজুরের রস। অজ্ঞতা আর অসচেতনতায় বেশির ভাগ মানুষই কাঁচা রসই পান করছেন এখানে। এতে নিপাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে এই এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা বলছেন, দুই-চারটি গাছে নেট বা জাল ব্যবহার করে রস আহরণ করা হলেও অধিকাংশ গাছই ফাঁকা, গাছে চারপাশে ঘুরছে বাদুরসহ নানা পাখি। নেই প্রশাসনের নজরদারি।
ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ইলিয়াস আলী বলেন, আমি পুরো বাগান ঘুরে দেখিছি। এখানে অল্প কিছু গাছে নেট ব্যবহার করলেও অধিকাংশই ফাঁকা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও বাগানে ঘুরছে বাদুরসহ বিভিন্ন ধরণের পাখি। তাই এই রস পানে নিপাভাইরাস ছড়িয়ে পরার শঙ্কা থেকে যায়। তাই অবিলম্বে প্রশাসনের নজর বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন এই শিক্ষক।
সদর উপজেলার শিবগঞ্জ থেকে আসা এক স্কুল ছাত্র জানায়, দুই লিটার খেজুর রস কিনেছেন এক হাজার টাকায়। সে কাঁচা রস খেয়ে স্বাদ নিয়েছেন বলে জানায়। জেলার বালিয়াডাঙ্গী থেকে আসা কহিনুর বেগম বলেন, বাগান ঘুরতে এসেছি। এখানে অধিকাংশ দর্শনার্থী কাঁচা রস খাচ্ছেন।
তবে রস উৎপাদনকারী যুবক মনিরুজ্জান মনিরও বলছেন এই রস খাওয়া নিরাপদ নয়। তবুও খাচ্ছেন কেউ কেউ।
খেজুরের কাঁচা রস পান করলে নিপাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পাওে এমন সতর্কবার্তা দিয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা: নুর নেওাজ আহমেদ বলছেন, নিষেধাজ্ঞা না মানলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা বাগানটি নজরদারিতে রেখেছি। খেজুরের রস সংগ্রহে সতর্কতা অবলম্বন করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয়দের সচেতন করার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের এই খেজুর বাগানটিতে গাছে সংখ্যা প্রায় সাত’শ। লীজ নেয়া এই বাগান থেকে প্রতিদিন রস আহরণ হচ্ছে আট’শ লিটার। এরমধ্যে ২০ হাজার টাকার খেজুুরের রস ও ২৫ হাজার টাকার খেজুর বিক্রি হচ্ছে প্রতিদিন।