ফিরোজ আমিন সরকার :
দৈনিক মজুরিতে কখনো মাটি কাটেন, কখনো বাড়িঘর মেরামতের কাজ করেন এনামুল হক। স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে ঠাকুরগাঁও শহরের বাহদুরপাড়ায় থাকেন। চারজনের পরিবারের মাসিক খরচ ১৫ হাজার টাকার মতো। অথচ গত চারদিন ধরে কাজ পাচ্ছেননা। শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার কাজের সন্ধানে এসে ঘুরে যাচ্ছেন।
এনামুল জানালেন, গেল ডিসেম্বর মাসে থেকে চলেছে এমন অবস্থা। আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশির কাছে ধারদেনা আর দোকানে বাকীতে খরচ করে কোনমতে দিন পার করছেন তিনি। এনামুল বলেন, তার নয় বছর বয়সী ছোট মেয়ে সাদিয়া গত দুই বছর ধরে অসুস্থ্য। তার পিছনে প্রতিমাসে দুই হাজার টাকার ওষুধ আর মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছেলের পিছনে মাসে সাত হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতিদিন ৬শ টাকার দৈনিক হাজিরায় কাজ করলেও, একই কাজ প্রতিদিন জোটেনা। তাই প্রতিমাসে অন্তত ১৫দিন বেকার বসে থাকতে হয় তাকে। শীত বেড়ে যাওয়ার কারণে কাজ জুটছেনা বলে জানান এনামুল।
তার আক্ষেপ, সরকার সামাজিক বেষ্টুনীর আওতায় অসহায়দের সহযোগিতা করলেও তার ভাগ্যে জোটেনি টিসিবি বা ১০টাকা কেজি চালের কার্ড। জনপ্রতিনিধিদের পিছনে ঘুরেও পায়নি সরকারের সেসব সুবিধা। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে মাছ, মাংস চোখে দেখেনা-তাই সন্তানদের মুখের দিতে তাকালে চোখে পানি আসে বলে জানান এই দিন মজুর।
রবিবার সকালে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এমন কষ্টের কথা জানালেন এনামুল হক। শুধু এনামুলই নয়, তার মতো শ্রম বিক্রি করতে এসেছেন কাজের আশায় বসে থাকছেন ভবেশ বর্র্মন, রবিন বর্মন, সুনীল চন্দ্র রায়সহ অন্তত ৫০জন শ্রমিক। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টায় এসে বসে থাকেন কাজের সন্ধানে। সাড়ে ১০টার পর কাজ না জুটলে ফিরে যান টুকরি, কোদাল সামনে রেখে বসে থাকা এই দিনমজুররা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মিলনপুর সংলগ্ন গ্রামের দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার দেউলী গ্রামের শুনীল চন্দ্র রায় বলেন, গত বৃহস্পতিবার ৬শ টাকা মজুরীতে মাটি কাটার কাজ পেয়েছিলাম। তারপর থেকে বসা। বাড়ি থেকে প্রায় ১৫কিলোমিটার দুরে শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এসে বসে থাকি কাজ পাওয়ার আশায় কিন্তু শীতের কারণে কেউ কাজে নিচ্ছেন না।
একই গ্রামের ভবেশ বর্মন বলেন, তার এক হাতের আয় দিয়ে চলে চারজনের সংসার। কাজ করে প্রতিমাসে ৯ হাজার টাকা আয় হলেও সংসারে খরচ হয় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তাই প্রতিমাসে বাড়ছে দেনার পরিমান।
আরেক শ্রমিক রবিন বলেন, প্রায় ৫০জন শ্রমিক এসে বসে থাকি কাজ পায় মাত্র ৫ থেকে ৭জন। অন্যরা প্রতিদিন ঘুরে যায়। তাহলে শ্রমিকরা কিভাবে চলাবে সংসার? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উদ্দেশ্য করে বলেন, নিজের জীবন বাজী রেখে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছি। এই সরকার কি আমাদের দিকে দেখবেন না? শ্রমিকদের জন্য বিশেষ কোন প্রকল্প নিয়ে বাস্তবায়ন করবেন না? তাহলে আমরা বাঁচব কিভাবে।