Home » পোষ্ট বক্সের সেকাল- একাল

পোষ্ট বক্সের সেকাল- একাল

by নিউজ ডেস্ক

হরিপুর (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ “যখন তোমার কেউ ছিল না তখন ছিলাম আমি, এখন তোমার সব হয়েছে পর হয়েছি আমি”। গত রবিবার প্রান্ত বিকালে বাদল নামে এক পথিক হরিপুর পোষ্ট অফিসের পার্শ্বে পোষ্ট বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলা দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল যে, সেখানে নির্ভিত্তে দাঁড়িয়ে থাকা পোষ্ট বক্সটি যেন পথিকের দিকে তাকিয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে এ কথাগুলি বলছে। অর্থাৎ এমন একদিন ছিল যে, চিঠিপত্রের মাধ্যমে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের স্বজনদের খোঁজ খবর নিতে আমরা সকলেই পোষ্ট অফিসের পোষ্ট বক্সটি ব্যবহার করতাম। এখন সে নিরবে দাঁড়িয়ে পথিককে বলছে, যখন তোমার কেউ ছিল না তখন ছিলাম আমি এখন তোমার সব হয়েছে পর হয়েছি আমি।

মনের ভাব আদান প্রদান, হৃদয়ের কথা বলতে ব্যাকুল এ ধরনের মনোভাব প্রকাশ করার একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠিপত্র। চিঠিপত্র ছাড়া কারো খোঁজ খবর নেওয়া যেত না, কারো খবর পাওয়া যেত না। সুখ-দুঃখ, আনন্দ বেদনার বহিপ্রকাশ ঘটতো চিঠিপত্রের মাধ্যমে। বিদেশ থেকে চিঠি পেতে প্রায় মাস খানিক সময় লেগে যেত। এতে প্রতিক্ষার প্রহর যেন শেষ হতো না। মা-বাবার কাছে সন্তানের, স্ত্রীর কাছে স্বামীর, প্রেমিকার কাছে প্রেমিকের, কিংবা যে কোন প্রয়োজনে চিঠির আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা ছিল ব্যাপক। স্মৃতিসৌধ মনোগ্রাম যুক্ত ডাক বিভাগের হলুদ খাম এবং পোষ্ট কার্ডে অনেকেই চিঠি লেখতো। আজ তা অনেকেরই অজানা। কালের বিবর্তনে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার যুগে তা আমরা ভূলতে বসেছি। অনেকেই তার ডাকঘরের নাম বা পোষ্ট কোড কত? তা জানে না। ছোট বেলায় আমরা অনেকেই কারণে অকারণে চিঠি লেখেছি। স্কুলে পিতার নিকট টাকা চেয়ে পত্র, বনভোজনের বর্ণনা দিয়ে বন্ধুর নিকট পত্র, বোনের বিবাহ নিমন্ত্রণ জানিয়ে বন্ধুকে পত্র লেখেছি। চিঠির মাঝে আবেগ আর অনুভূতি থাকতো। চিঠি পড়ার সময় মনে হতো সে যেন সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার প্রতিছবি মনের মাঝে দোলা দিত। এই চিঠি পাওয়ার জন্য ডাক পিয়নকে হাজার বার বিরক্ত করা হতো, আমার চিঠি এসেছে ভাই? গায়ক কামাল আহম্মেদ গেয়েছেন ডাক পিয়নের ‘হাজার চিঠির ভিড়ে তোমার চিঠি আসবে কি গো, আমার কাছে ফিরে?’ গায়ক মনির খান গেয়েছেন ‘চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে’। নব বিবাহিত দম্পত্তির স্বামী যখন কাজের জন্য বিদেশে বা অন্যে কথাও চলে যেত স্ত্রী চিঠির অপেক্ষায় প্রহর গুনতো, সে কেমন আছে, ভাল আছে তো? এ ধরনের নানা প্রশ্ন মনে উকি দিত। অনেক বধুই চিঠি লিখে প্রবাসী স্বামীকে গানের ভাষায় বলতো বিদেশ গিয়ে বন্ধু তুমি আমায় ভূইলা যেও না, চিঠি দিও পত্র দিও যানাইও ঠিকানা। এসব চিঠিপত্র আদান প্রদান হতো পোষ্ট বক্স আর পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে। রানার চিঠিপত্র নিয়ে নির্ঝুম রাতে ছুটে চলতো আপন গতিতে তার গন্তব্য স্থলে কেউ তাকে ছুতো না। আজকাল আর চিঠিপত্র লেখার প্রয়োজন পড়েনা। এখন চলছে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, মোবাইল এসএমএস এর যুগ। মুহুর্তের মধ্যেই সারা বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের খোঁজ খবর পাওয়া গেলেও আমাদের সকলের এই কৃতিমতা বর্জন করে চিঠিপত্র লেখে পোষ্ট অফিস ও পোষ্টবক্্র ব্যবহার করে মনের গভীরতা প্রকাশ করে নতুন প্রজন্মকে উৎসাহ জোগানো একান্ত প্রয়োজন।

You may also like