নবীন হাসান : দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে বন্ধ ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর। সংস্কারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে রানওয়ে, ভবন ও মূল্যবান যন্ত্রপাতি। রানওয়ে পরিণত হয়েছে গোচারণ ভূমিতে। লিজ নিয়ে পরিত্যক্ত জমিতে হচ্ছে চাষাবাদ। এই বিমানবন্দরটি চালু হলে দেশ–বিদেশের উদ্যোক্তারা এই অঞ্চলে ভারী শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহী হবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা ।
দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি বিমানবন্দরের রানওয়ে। যেখানে বিমান ওড়ার কথা সেখানে চলছে ইজি বাইক, মোটরসাইকেল এবং বিভিন্ন যানবাহন। শুকানো হচ্ছে গোবর এবং খড়কুটো। চড়ানো হচ্ছে গরু, ছাগল। অথচ বিমানবন্দরটিতে এক সময় নিয়মিত উড়তো বিমান।
ঠাকুরগাঁওয়ের শিবগঞ্জে ১৯৪০ সালে ৫৫০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের সরকারি ও সামরিক কাজে ব্যবহার করতে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।১৯৬৫ সালে ভারত – পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনী এখানে হামলা চালালে বিমানবন্দরের রানওয়েটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপরে বিমানবন্দরটিকে ১৯৭৭ সালে সংস্কার করা হয়। মাত্র বছর দুয়েক ফ্লাইট পরিচালিত হলেও পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়া ও লোকসানের অজুহাতে ১৯৭৯ সালে বিমানবন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়। তার এক বছর পর পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় এই বিমানবন্দরটি। জেলাবাসীর দাবির মুখে ১৯৯৪ সালে বিমানবন্দরটি চালুর উদ্যোগ নেয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।তাই পুনরায় বিমানবন্দরটি চালুর দাবি এলাকাবাসীর।
ঠাকুরগাঁও শিবগঞ্জ এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির জানান, আমাদের বিমানবন্দরটির এত জায়গা, এত সুন্দর অবকাঠামো পড়ে আছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। অথচ বিমানবন্দরটি যাত্রী অভাবের অজুহাতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে । আমার বিশ্বাস এখন বিমানবন্দরটি চালু করলে আর যাত্রীর অভাব হবে না। ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের মানুষ এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তাই আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাই তিনি যেন আমাদের বিমানবন্দরটি চালু করে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করেন। এখান থেকে বিপুল পরিমাণ সরকার রাজস্ব আয় করতে পারবে।
স্কুল শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বলে, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের একটি অংশের মানুষ কে সৈয়দপুরে গিয়ে বিমানে উঠতে হয় এতে অনেক দুর্ভোগ হয়। অনেক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা বা ভারতে যেতে হয়। এসব রোগীর দুর্ভোগের সীমা থাকেনা। তাই আমরা চাই এই বিমানবন্দরটি চালু হোক।
ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স এর সাবেক পরিচালক এস এম রাজা বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় আমাদের এই অঞ্চলে মানুষ বিনিয়োগ করে না। স্থাপন হয় না বড় বড় কলকারখানা। তাই এই অঞ্চলের মানুষ পিছিয়ে রয়েছে। বিমানবন্দরটি চালু হলে ঠাকুরগাঁও , পঞ্চগড়ে গড়ে উঠবে বড় বড় শিল্পকারখানা। দূর হবে বেকারত্ব।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেলায়েত হোসেন বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি এই বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু হোক । এই বিমানবন্দরটি চালু হলে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন আসবে। এই বিমানবন্দরটি চালুর বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে চিঠি দেয়া হয়েছে । আশা করি এ বিষয় টি তাদের বিবেচনাধীন রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হবে।
বিমান বন্দরটি চালু হলে যাত্রী সেবার পাশাপাশি জেলার বাণিজ্যিক প্রসার ঘটবে।
নবীন হাসান
ঠাকুরগাঁও।