স্টাফ রিপোর্টার, পীরগঞ্জ : সোহেল রানা নামে এক ব্যক্তি শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ভটভটি নিয়ে ডিজেল কেনার উদ্দেশ্যে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর থেকে পীরগঞ্জ হয়ে দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার সময় পীরগঞ্জ পৌর শহরে ঢুকলে পৌরসভা ও একটি শ্রমিক সংগঠনের নামে রশিদ ধরিয়ে দিয়ে তার কাছ থেকে ৬০ টাকা চাঁদা নেয় দুই ব্যক্তি। চাঁদা দিয়ে সেতাবগঞ্জ গিয়ে ডিজেল নিয়ে হরিপুরে ফেরার পথে পীরগঞ্জ পৌর শহরের পূর্ব চৌরাস্তায় পৌছালে তার ভটভটি থামিয়ে আবারো ৬০ টাকা চাঁদা দাবী ঐ দুই ব্যক্তি। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তারা সোহেল রানা ও তার গাড়িতে থাকা রুবেল নানে এক ব্যক্তিকে ভটভটি থেকে নামিয়ে মারপিট করে গাড়ির হ্যান্ডেল নিয়ে নেয়। এর পর পৌরসভার দুই কর্মচারী ঘটনা স্থলে এসে চাঁদা আদায়কারীদের পক্ষ নিয়ে সোহেল ও রুবেলকে পৌরসভায় তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পথচারীরা বাধা দেয় এবং এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং আহত সোহেল ও রুবেলকে চিকিৎসার জন্য পীরগঞ্জ হাসপাতালে পাঠায়। গত ২০ ফেব্রুয়ারী এ ঘটনা ঘটে। শুধু এটাই নয়, এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে পৌর এলাকায়। চাঁদাবাজদের চাঁদা বাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন পরিবহন চালকরা। কোন ভাবেই তাদের থামানো যাচ্ছে না। চাাঁদা না দিলে হামলা, মারপিট ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
সুলতানপুরের শরিফ নামে এক ভটভটি চালক জানান, পৌরসভা এলাকায় গাড়ি নিয়ে ঢুকলেই পৌরসভার নামে ৩০ টাকা এবং বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নামে ৩০ টাকা করে আরো অন্তত ৬০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। না দিলে দল বেধে হামলা করে চাঁদাবাজরা। মারপিট করে গাড়ি আটক করে রাখেন তারা। ঝামেলা এড়াতে বাধ্য হয়েই চাঁদা দিতে হয়।
নয়ন নামে এক সিএনজি চালক জানান, শহরে ঢুকলেই ৫০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এটা টাকা কি হয় তিনি তা জানেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌরসভার টোল ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নামে প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবহন থেকে অবৈধ ভাবে হাজার হাজার টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। পৌর শহরের শহরের বটতলা, সোনালী ব্যাংক চত্বর, পূর্ব চৌরাস্তা, গুয়াগাঁ মোড়, সরকারী কলেজ গেট, নেতার মোড়, জাবরহাট সড়কে হাজিপুর তহশীল অফিসের সামনে বিভিন্ন জন লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থেকে বিভিন্ন যান বাহন থামিয়ে চাঁদা আদায় করছেন। চাঁদা না দিলে মারপিট করা সহ গাড়ি আটক রেখে হেনস্থা করা হচ্ছে পরিবহন চালক ও সংশ্লিষ্টদের। পৌরসভা এলাকা ছাড়াও পৌর শহরের প্রবেশ দ্বাড় চাপোড় ও বাঁশগাড়ায় যান বাহন থেকে দল বেধে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
চাঁদাবজি বন্ধে এর আগে অটো রিক্্রা এবং সিএনটি ও থ্রি হুইলার শ্রমিকরা পৌর শহরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভাও করেছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। সুত্র জানায় পৌরসভা এলাকায় ট্রাক-ট্যাংক লড়িতে মালামাল লোড আনলোাড করার ক্ষেত্রে টোল আদায়ে নিয়োজিত ইজারাদার মিজানের লোকজন নিয়ম ভেঙ্গে সব পরিবহন থেকেই গনহারে চাঁদা আদায় করছেন। এর জন্য আলাদা রশিদও বানিয়েছেন তারা। তবে ইজারাদার মিজানের দাবী, অবৈধ কোন টোল বা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে না।
চাঁদা আদায় বিষয়ে মীর আব্দুল খালেক নামে এক শ্রমিক নেতা জানান, শ্রমিক সংগঠনের সদস্যদের কল্যানে রশিদ মুলে কিছু টাকা আদায় করা হয় এবং এটা শ্রমিকদের কল্যানেই ব্যয় করা হয়। তবে পৌরসভা এলাকায় কোন গাড়ি ঢুকলেই পৌরসভা টোল/চাঁদা নিতে পারে না। কেবল মাত্র লোড আন লোডের ক্ষেত্রে তারা টোল নিতে পারেন। কিন্তু শুনেছি গনহারে সব গাড়ি থেকেই টোলের নামে চাাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এ বন্ধ হওয়া দরকার।
যৌথ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাহেব আলী জানান, চাঁদাবাজি একটা খারাপ জিনিস। তারা এটার কোন অনুমোদন দেননি। তার পরেও শোনা যায়, কিছু কিছু শ্রমিক এটা করছেন। দেখি খোঁজ নিয়ে জানবো তারা এটা নিতে পারেন কিনা। অবৈধ হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে পৌরসভার প্রধান সহকারি নুর মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, পৌর শহরে ট্রাক-ট্যাংক লড়িতে মালামাল লোড আনলোাড করার ক্ষেত্রে টোল আদায়ের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে। পৌর শহরে প্রবেশ করলেই চাঁদা নেয়ার কোন নিয়ম নাই। যারা অবৈধভাবে নিচ্ছে, আমার জানান মতে এর সাথে পৌরসভার কোন কর্মচারী জড়িত নয়।
পীরগঞ্জ পৌর মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা ইকরামুল হক জানান, পৌর শহরে টোল আদায়ের বিষয় গুলি দেখভাল করার জন্য পৌরসভার প্রধান সহকারি নুর মোহাম্মদ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তকে কাউকে চাঁদাবাজি করার বৈধতা দেয়া হয়নি। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পীরগঞ্জ থানার ওসি খায়রুল আলম বলেন, চাঁদাবাজি নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।