Home » গাছে গাছে দুলছে আমের শুভ্র মুকুল, ব্যাপক বাণিজ্যের স্বপ্ন চাষি ও ব্যবসায়ীদের

গাছে গাছে দুলছে আমের শুভ্র মুকুল, ব্যাপক বাণিজ্যের স্বপ্ন চাষি ও ব্যবসায়ীদের

by নিউজ ডেস্ক

মোঃ জাহিদ হাসান মিলু: ঠাকুরগাঁওয়ের আমের বাগান ও গাছ গুলোতে দোল খাচ্ছে শুভ্র সাদা লালচে ও সোনালী রঙের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে মুকুলে পাগল করা ঘ্রাণ। আর বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ মৌ গন্ধ। এখন থেকেই ছড়াচ্ছে মধুমাসের আগমনী বার্তা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর আমের গাছ গুলোতে বেশি মুকুল আশায় আমের ফলন বৃদ্ধিসহ ব্যাপক বাণিজ্যের স্বপ্ন দেখছেন জেলার আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা। আশা করছেন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে গত বছরের তুলনায় এবার আরও বেশি পরিমাণ বাইরের দেশে আম রপ্তানির।

রাস্তার ধারে, বাড়ির আঙ্গিনায়, মাঠ ঘাট ও আনাচে কাঁনাচের আম গাছ গুলোতে শোভা ও সমারোহ পেয়েছে মুকুল। আর গাছের কান্ড ও ডালে ডালে সাদা হলুদ ও সোনালী বর্ণের মুকুলের দৃশ্য আকৃষ্ট করছে মানুষকে। মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মাতোয়ারা ও মধু সংগ্রহে আকুল মৌ-মাছিরাও।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, হাড়ীভাঙ্গা, ফজলী, খিড়সাপাতি, আম্রপালী, মোহনা, রাজভোগ, রূপালী, গোপালভোগ, সূর্যপূরী, বান্দিগড়সহ বিদেশি জাত বানানা ম্যাংগো, কিং চাকাপাত, নাম দোকমাই, চিয়াংমাই, আলফান শো, রেডপালমারসহ বিভিন্ন জাতের আম গাছের মুকুল ধরে রাখতে এবং গাছের পরিচর্যা ও পোকা দমনে বিভিন্ন ধরণের কীটনাশক স্প্রে করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আম চাষী ও বাগানে কর্মরত শ্রমিকরা।
বিগত বছর গুলোতে এজেলায় বাণিজ্যিকভাবে আমের চাষ না হলেও গত কয়েক বছর ধরে আমের বাণিজ্যিকচাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেসব জমিতে অন্যান্য ফসল কম হয় সেসব জমিতে আমের বাগান করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। তাই দিন দিন আমের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ে।
জেলায় মোট ১ হাজার ৮৪৪টি আম বাগান রয়েছে। যার আয়তন প্রায় ৩ হাজার ২৩৬ হেক্টর জমি। বসত বাড়িরসহ ৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আম গাছ আছে। এসব গাছ থেকে এবার প্রায় ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
আবহাওয়া ভালো থাকলে গতবারের তুলনায় এবছর ব্যাপক আম উৎপাদন হবে ও আম থেকে ভালো আয়ের আশা করছেন বাগান মালিকরা।জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার করনাইট গ্রামের আম চাষি মো. রহিম উদ্দিন সাবু প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে বিভিন্ন প্রজাতের আমের বাগান করেছেন। তিনি বলেন, আমরা দুই ভাই মিলে ১০-১২ বছর আগে আমের এই বাগান করেছি। আগে বাগানের এই জমি গুলোতে তেমন ফসল হতো না। বিভিন্ন ফসল গম, সরিষা চাষ করতাম কিন্তু তেমন ফলন ভালো হতো না। তবে এখন এইসব জমিতে আম গাছ রোপনের ২-৩ বছর পর থেকেই ফল দেওয়া শুরু করেছে। তাতে আমরা ফসলের থেকে আম বাগান করে বেশি লাভবান হচ্ছি।

মকসেদুর রহমান ওরফে রাজু নামে বাগান মালিক বলেন, আগে আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলায় আমে বাগান তেমন ছিলনা। এখন বাণিজ্যিকভাবে আমের চাষ করছেন মানুষ। দিন দিন বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আম বাগান থেকে বছরে ভালো একটা টাকা পাওয়া যায়। তাই মানুষ আম চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
ঢাকা গাজিপুর থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে এসে বাগান ও জমি লিজ নিয়ে আম চাষ করছেন মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৯৯২ সাল থেকে আমি বিভিন্ন ব্যবসা করে আসতেছিলাম। ২০০১ সাল থেকে আমি আমের ব্যবসা শুরু করি। তখন থেকেই আমি জমি ও বাগান লিজ নিয়ে আম চাষ ও ব্যবসা করছি এজেলায়। ২০১৫-১৬ সালে আমের ব্যবসায় মোটামুটি বেশ লাভ হতো। এখন ব্যবসার গোমর ফাঁস হওয়াতে ও সার, কীটনাশকসহ অন্যান্য জিনিপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের মতো তেমন লাভ হয় না। লিজ নেওয়া আমার প্রায় ৭০০ বিঘা জমিতে দেশি ও বেদেশি প্রজাতির মিলে প্রায় ৬ হাজার আম গাছ আছে। তবে আল্লাহর রহমতে এবার বাগানের প্রতিটি গাছে যেভাবে মুকুল এসছে তাতে মনে হয় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর ফলন বেশ ভালো হবে এবং ব্যবসা ভালো হবে। যদি আল্লাহ সহায় থাকেন।
মো. শাহিনুর রেজা নামে এক আম চাষী বলেন, আগে আমাদের এইদিকে মানুষ খাওয়ার জন্য বাসা বাড়ির আঙ্গিনায় বা আশে পাশে আমের গাছ রোপন করতো। সেই গাছ থেকে যা ফল আসতো তা তারাই খেত। আর এখন বাণিজ্যিকভাবে আমের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু তাই নয় আমাদের জেলার উৎপাদিত বিভিন্ন জাতে আমর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরেও রপ্তানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমার ১৫ বিঘা জমিতে আমের বাগান আছে। গতবছর আমের দাম ও ফলনের কারণে তেমন ভালো আয় হয়নি। তবে এবার গাছে প্রচুর মুকুল এসছে। মুকুল দেখে মনে হচ্ছে ব্যাপক ফলন হবে। আশা করছি ফলনের দিক থেকে গতবছরের ক্ষতি এবছর পুষিয়ে যাবে আল্লাহর রহমতে ও আবহাওয়া ভালো থাকলে।
মো. ওহাব আলী নামে এক আম ব্যবসায়ী বলেন, গত বছরের থেকে এবার আম গাছে বেশ ভালো মুকুল দেখা যাচ্ছে। যদি গাছে আমের গুটি পরিমাণে বেশি থাকে তাহলে ফলন অনেক বেশি হবে এবার। আর ফলন বেশি হলে বাগান মালিকরা ও আমরা ব্যবসায়ীরা আম দেশের বিভিন্ন জেলায় ও বিদেশে রপ্তানি করে ভালো একটা বাণিজ্য করতে পারবো আশা করছি ইনশাআল্লাহ।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে আম চাষিদের কারিগরি বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করার পাশাপাশি রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের প্রদর্শনি ও কৃষকদের উৎসাহ প্রদান করছেন। এছাড়াও গতবছরের মতো এবারও ঠাকুরগাঁও থেকে ইউরোপ জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, গত বছর প্রথম ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে বিদেশে আম রপ্তানির উদ্বোধন করা হয়। প্রথম দিকে ইউরোপে, তার পর জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে আমরা আম্রপালী ও বানানা ম্যাংগো জাতের আম পাঠানো হয়েছিল। স্থানীয় বাজার দরের থেকেও সেগুলো আম প্রতিকেজিতে কমপক্ষে ৩০-৪০ টাকা বেশি দরে বিক্রয় করা হয়েছিল। আমরা আশা করছি এবার রপ্তানি যোগ্য আম উৎপাদনকারী নির্বাচিত চাষিদের মধ্যে প্রত্যেক চাষি কমপক্ষে ১ টন করে আম বাইরে রপ্তানি করতে পারে। এধরণের লক্ষনিয়ে আমরা কাজ করছি এবং কৃষকদের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মুলত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে আমের গাছে মুকুল আসে। জেলায় এবার জানুয়ারিতে নিম্ন তাপমাত্রার কারণে যে পরিমাণ মুকুল আসার কথা সে পরিমাণে মুকুল লক্ষকরা যায়নি। এজন্য প্রথমদিকে আমরা কিছুট হতাশ ছিলাম। তবে পর্যাক্রমে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে গাছ গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে মুকুল এসেছে। সেই হিসেবে আমরা আশা করছি লক্ষমাত্রার চেয়েও ফলন বেশি হবে।

You may also like

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. সাকের উল্লাহ

স্বত্ব © ২০২৪ দৈনিক লোকায়ন