Home » অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ- গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া গুলিবিদ্ধ ত্রিপাননের

অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ- গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া গুলিবিদ্ধ ত্রিপাননের

by নিউজ ডেস্ক

ফিরোজ আমিন সরকার ॥ অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে ১৯৭১ সালে ঠাকুরগাঁওয়ের জাঠিভাঙ্গা গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া গুলিবিদ্ধ ত্রিপানন চন্দ্র বর্মন। একযুগেরও বেশি সময় ধরে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে অর্ধাহারে অনাহারে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। বাকশক্তি হারিয়ে নিরব নিথর ত্রিপাননের চোখে মুখে এখন শুধুই বাঁচার আকুতি-মিনতি।
বাঙ্গালি জাতির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ অধ্যায় হলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলার মাটিতে যে নৃসংশতম হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল তা ছিল বিংশ শতাব্দির মধ্যে অন্যতম গণহত্যা। বাংলাদেশের এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা-নিযাতন চালায়নি। সারা দেশের ন্যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে গণহত্যা-নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট থেকে রক্ষা পায়নি ঠাকুরগাঁও জেলা। ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিলের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন ঠাকুরগাঁও শহরে আক্রমণ শুরু করে, তখন নিরস্ত্র বাঙ্গালিরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও এদেশীয় দোসরদের হাত থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দৌড়াতে থাকে। সকলের মতো সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের ত্রিপাননও ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ২২ এপ্রিল স্থানীয় দালালরা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ত্রিপাননসহ দুই হাজারেরও বেশি নিরীহ মানুষকে জাঠিভাঙ্গা নামকস্থানে নিয়ে যান। তাদেরকে পরেরদিন ২৩ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিলে ব্রাশফায়ার ও গুলি করে হত্যা করে। তাদের মধ্যে ত্রিপাননও গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হন। গুলিবিদ্ধদের মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে চলে গেলে, গ্রামবাসীর সহায়তায় ত্রিপানন কোমড়ে গুলি নিয়ে চলে যান পাশের দেশ ভারতে। ৯ মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলে শরীরে গুলি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন ত্রিপানন। কয়েক বছর সেই গুলি শরীরে বয়ে নিয়ে পরে অস্ত্রপাচারের করে তা অপসারণ করে। গত ১২ বছর আগে দুরারোগ্য ব্যাধি প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে একহাত ও পায়ের শক্তি হারিয়ে ফেললে লাঠির উপর ভর করে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছিল। সর্বস্ব খুইয়ে চিকিৎসা করলেও সুস্থ হয়ে ওঠেননি ত্রিপানন। পরে অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেলে পুরো শরীর শক্তিহীন হয়ে যায়। কথাও বলতে পারছেন না তিনি। এখন তার দু’চোখে ঝড়ছে অশ্রু, মুখে শুধুই বাঁচার আকুতি। কিন্তু কে বহন করবে তার সু-চিকিৎসার খরচ? যেখানে দিনে দু-বেলা দুমুঠো অন্ন ঠিকমত জোটেনা তার। ত্রিপাননের ছেলে কমল জানান, বাবা এখন আর কথা বলতে পারে না। চলাচলও করতে পারছেনা। দীর্ঘ দিন চিকিৎসা করে সর্বস্ব হারিয়েছি। এখন বিনা চিকিৎসায় শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছে।
প্রতিবেশী অলি মোহন রায় বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আবেদন করছি, যেন ত্রিপাননের সু চিকিৎসার বন্দবস্ত হয়। ইতোমধ্যে অনেকে এসেছে অনেক কিছু লিখে নিয়ে যায় কিন্তু এই পরিবারটি কোন সহযোগিতা আজো পায়নি।
জেলার লোমহর্ষক গণহত্যায় গুলিবিদ্ধ ত্রিপাননের এমন করুন খবরও কখনো ওঠেনি খবরের কাগজ কিংবা টেলিভিশনের পর্দায়। তাই নিরবে নিভৃতিতে ধুকে ধুকে মরতে বসেছে দেশের জন্য কষ্ট স্বীকার করা সত্তোরর্ধ এই ত্রিপানন। তাই আরো নজরে আসেনি দায়িত্বশীল কর্তাদের । খোঁজ নিয়ে তার সুচিকিৎসার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক মো: মাহবুবুর রহমান।
কোন আশ^াস নয়, স্বাধীন এই দেশে সু-চিকিৎসা নিশ্চিত হবে, নিশ্চিত হবে তাঁর মৌলিক অধিকারগুলো এমন দাবি ত্রিপাননের পরিবারের।

You may also like