১৪৯
লোকায়ন রিপোর্ট: গরম মেটাতে এসব দোকানে বেশি ভিড় করছে রিকশাচালক, দিনমজুর ও পথচারীরা।গত কয়েক দিনের তাপপ্রবাহে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্রখর রোদ আর তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছে না মানুষ। তাই তারা স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করছে ফুটপাতের শরবতে।
গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরবতের চাহিদা বাড়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন সড়কেও গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকান। দিন দিন সেই সংখ্যা বাড়ছে। তৃষ্ণা মেটাতে এসব দোকানে বেশি ভিড় করছে রিকশাচালক, দিনমজুর ও পথচারীরা।
বিভিন্ন রকমের শরবত বিক্রি হচ্ছে ভাসমান এসব দোকানে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এ সময় লেবুর শরবতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া রয়েছে ইসবগুলের ভুসি, অরেঞ্জ পাউডার, আখের রস এবং বেল, পেঁপে, মাল্টা, শাহিদানা ও উলটকম্বলের শরবত।
গরম থেকে বাঁচতে ও সাময়িক স্বস্তি পেতে স্বল্প আয়ের মানুষ এসব শরবতে ঝুঁকে পড়ছে। ক্ষতিকর নানা উপাদান দিয়ে তৈরি মুখরোচক এসব শরবত যে স্বাস্থ্যসম্মত নয়, তা বেশির ভাগ মানুষই জানে না। তাই যেখানে-সেখানে গড়ে ওঠা কিংবা ফুটপাতের এসব দোকান থেকে শরবত পানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়েও সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা।
গরমে অতিষ্ঠ হয়ে তৃপ্তিসহকারে তা পান করছে আগের রস
শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকালে ঠাকুরগাঁও পুরান বাস স্ট্যান্ড বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ও বিভিন্ন অলিগলিতে নানা ধরনের মুখরোচক শরবত বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। আর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে তৃপ্তিসহকারে তা পান করছে সাধারণ মানুষ।
ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে দুপুরে শরবত পান করছিলেন জব্বার আলী (৪০) নামের এক রিকশাচালক। সাংবাদিকে তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে অনেক ঘামছি, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। গরমের কারণে সব খ্যাপ নিতে পারছি না। একেকটা খেপ শেষ করে লম্বা সময় বিশ্রাম নিতে হয়। আজ সকাল ৯টায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। তখন থেকে এ পর্যন্ত সাত গ্লাস শরবত খেয়েছি। এখনই একসঙ্গে দুই গ্লাস খেলাম। রাত ১০টা পর্যন্ত রিকশা চালাবো। ততক্ষণ পর্যন্ত হয়তো আরও পাঁচ-সাত গ্লাস খাওয়া হবে।’
বিএনপি অফিসের সামনে লেবুর শরবত পান করছিলেন শিক্ষার্থী আফরান। তিনি বলেন, ‘গলা শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গেছে। যতই ঠান্ডা পানি পান করি কোনও কাজ হচ্ছে না।’ কিন্তু এসব শরবত স্বাস্থ্যসম্মত নয়, জানতে চাইলে বলেন, ‘বাইরের শরবত অস্বাস্থ্যকর ও ধুলাবালুযুক্ত, এটা জানি। কিন্তু তৃষ্ণা মেটাতে সহজলভ্য এই শরবতের বিকল্প কিছু নেই।’
ক্ষতিকর নানা উপাদান দিয়ে তৈরি মুখরোচক শরবত পান করছে পথচারীরা ঠাকুরগাঁও জজ কোটের সামনে সামনে বেলের শরবত পানরত পথচারী আরমান হোসেন বলেন, ‘কোটে এসেছি মামলার কাজে যে গরমে একেবারে ঘেমে একাকার হয়ে গেছি। জ্যামের কারণে আর্ট গ্যালারি থেকে হেঁটে এই পর্যন্ত এসেছি। হাঁটতে হাঁটতে দু-এক গ্লাস লেবুর শরবত এবং এক গ্লাস আখের রস পান করেছি। এখানে এসে এখন বেলের শরবত পান করছি।’ স্বাস্থ্যসম্মত না হলেও সাময়িক তৃপ্তির বিষয়ে বললেন তিনিও।
ঠাকুরগাঁও জজ কোর্টের সামনে দুই বছর ধরে এলাকায় শরবত বিক্রি করছেন শফিকুর রহমান। সাংবাদিকে তিনি বলেন, ‘গরমের সঙ্গে সঙ্গে এখন শরবতের দোকানও বেড়েছে। আগে এই এলাকাতেই দুই-তিনটি দোকান ছিল। এখন অন্তত ১০ থেকে ১২টি দোকান আছে। গরম বাড়ার সঙ্গে মানুষের শরবত পানের চাহিদাও বেড়েছে। তাই দোকানও বেড়েছে। তবে বেচাকেনা কমেনি, বেচাকেনাও বেড়েছে।’
শরবতের দাম ও উপকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগে পাঁচ টাকা করে প্রতি গ্লাস লেবুর শরবত বিক্রি করেছি। এখন ১০ টাকা রাখি। সবকিছুর দাম বেড়েছে। প্রতি জার পানি ৫০ টাকা করে কিনতে হয়। এ ছাড়া বরফ, লেবু, চিনি এসবের দামও আছে। দিনে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার শরবত বিক্রি হয়। ফুটপাতে বসার জন্য চাঁদা ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে লাভ থাকে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা। তবে গতবারের তুলনায় এবার লাভ কম হচ্ছে। কারণ দোকানের সংখ্যা বেড়েছে।’শরবতের পাশাপাশি চাহিদাও বেড়েছে ডাব, আনারস, তরমুজেরও।