স্টাফ রিপোর্টার: আগামী ২১ মে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে এই জেলায়। চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছে আওয়ামী লীগেরই চারজন নেতা। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ–সভাপতি ও একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অংশ নিয়েছে এই নির্বাচনে।
নির্বাচনে মানুষকে কাছে টানতে বিভিন্ন নির্বাচনের সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রার্থীরা। এরই মধ্যে দুইজন আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে নানা রকম মন্তব্য করছেন নেটিজনরা।
একটি বক্তব্যে দেখা যাচ্ছে, ঠাকুরগাঁও জেলা
ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি,
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুল হাসান খোকন বলছেন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অনেক কম, সারা নেই, মানুষদেরকে টেনেও আমরা ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারি না, কারন ভোটের উপরে যে বিশ্বাস মানুষের এটা উঠে গেছে, ভোটের প্রতি বিশ্বাস নেই। ভোট হচ্ছে কিন্তু ভোটকেন্দ্রে সারা দিনে দুই চারটা লোক ভোট দিতে যাচ্ছে, সারা দিনে দুইশত আড়াইশত ভোট কাস্ট হচ্ছে একটি সেন্টারে। ভোটার আছে ধরেন ২২শ থেকে ৩ হাজার। কিন্তু প্রিজাইডিং অফিসার যখন সমস্ত বাক্স এনে গুনছে তখন দেখা যাচ্ছে ভোট কাস্ট হয়েছে ৩১৬৬ ভোট। এতগুলো ভোট কোথা থেকে এলো। সারাদিন সাংবাদিকরা দাঁড়িয়ে আছে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন প্রতীকে যারা দাঁড়িয়েছেন তাদের পুলিং এজেন্ট। সারাদিন ভোটের দেখা নাই কিন্তু সন্ধ্যাবেলায় দেখা যাচ্ছে তিনি সর্বাধিক ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। এই কারণেই এইযে মিথ্যে চালাকি বাজি ধান্দাবাজি চালবাজি করে আমরা যে ভোটটা করছি এ কারণে ভোটের প্রতি মানুষের কোন আস্থা নাই। ভোট দিতে মানুষ যায় না। এই অবস্থা সৃষ্টির জন্য আমি নিজে আওয়ামী লীগ করি আমরা দায়ি মনে করি আমাদেরকে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। একটি গণতান্ত্রিক দেশের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ থাকবে, বিএনপি থাকবে, জাতীয় পার্টি থাকবে নানান দল থাকবে। কিন্তু আমরা এমনভাবে রাজনীতি করছি যে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ নেই।
সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতার বক্তব্যে সমালোচনা করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি শেখর কুমার রায় বলেন, এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত অযৌক্তিক বক্তব্য একেবারেই অপ্রত্যাশিত।কারণ হচ্ছে উনি ভালো করেই জানেন উনার পদবী টা কি উনি কোথা থেকে এসেছেন। উনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী কিনা বা প্রধানমন্ত্রীর আদর্শে বিশ্বাসী কিনা যদি। যদি হন তাহলে এরকম কথা তো মানায় না। নির্বাচন সুষ্ঠু ও সাবলীলভাবেই হয়েছে। জনগন ভোট দিয়েছে এবং ভোট গণনা হয়েছে ঠিকমতো। উনার মত ব্যক্তির কাছ থেকে এরকম বক্তব্য আশা করা যায় না। হয়তো বা ভুল বলেছে নয়তোবা আবেগের বসে এরকম বলে ফেলেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ইন্দ্রনাথ রায় বলেন, আমার কাছে মনে হয় তিনি হতাশার জায়গা থেকেই এই কথাগুলো বলেছেন। এটা নিঃসন্দেহে সমর্থনযোগ্য না। এবং বাস্তবতাও এর মধ্যে নাই। ৩০০ কে ৩০০০ দেখানো হয়েছে এটা আমার কাছে মনে হচ্ছে খুব বাড়াবাড়ি করে বলা হয়েছে। এটা হতাশা থেকে বলেছে এটার প্রতিবাদ করা উচিত। এটা অবশ্যই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে।
এ বিষয়ে কামরুল হাসান খোকন বলেন, ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে এটা আমি অস্বীকার করতে পারি না। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করতেই এমন বক্তব্য দিয়েছি।
অন্যদিকে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না ঠাকুরগাঁওয়ে আপনাদের ঠাঁই হবে না। ওই রমেশ সেনকে রুহিয়া থেকে এই টিটু দত্তই নিয়ে এসেছিল। আবার বিদায় করে দেব। ওই অটো পাস এমপি কারো সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেনি। ওই অটো পাশ এমপি কাউন্সিলরদেরকে হুমকি দিয়ে বিভ্রান্ত করে ফেলেছে । তার এই বক্তব্যও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এরই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁওয়ে রুহিয়া ও পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমপি রমেশ চন্দ্র সেন এর সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও হুমকির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বক্তারা অবিলম্বে ওই প্যানেল মেয়রকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।।
প্যানেল মেয়র আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, যারা আমাদের প্রিয় নেতা রমেশ চন্দ্র সেন এর বিপক্ষে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে আমরা তাদের প্রত্যাখ্যান করি। এবং এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল হক বাবু বলেন, আমরা প্যানেল মেয়র আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাই। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে গ্রেফতার না করা হলে আমরা আরো কর্মসূচি দেব।
এই বিষয়ে প্যানেল মেয়র আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, চারজন প্রার্থীই আমাদের দলীয় প্রার্থী। আমরা শুনেছি তিনি একজন প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। এ কারণে ক্ষোভ থেকে আমি এমন বক্তব্য দিয়েছি।