বিশেষ প্রতিনিধি পঞ্চগড়:
পঞ্চগড় মকবুলার রহমান ডায়াবেটিক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ফজলে হাসান সিদ্দিকী নাঈমের উপর অর্তকিত হামলার প্রতিবাদে কালোব্যাজ ধারণ করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন জেলার চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ) পঞ্চগড় জেলা শাখার আয়োজনে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
গত বুধবার দুপুরে মকবুলার রহমান ডায়াবেটিক হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন মেডিকেল অফিসার ও ল্যাবরেটরি ইনচার্জ ডা. ফজলে হাসান সিদ্দিকী নাঈম। হঠাৎ করেই রাজনগর গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর ছেলে ও হোটেল কারিগর জাকির হোসেন রাজু তার চেম্বারে এসে ঘুমের ওষুধ না দেয়ার অভিযোগ তুলে হামলা চালান। এ ঘটনায় ডা. নাঈম পঞ্চগড় সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, জাকির হোসেন রাজু গত ১২ অক্টোবর চিকিৎসা নিতে ডা. নাঈমের কাছে আসেন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের প্রেসক্রিপশনও পান। তবে ১৬ অক্টোবর দুপুরে রাজু চেম্বারে এসে অভিযোগ করেন যে তাকে ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়নি এবং তিনি তিন দিন ধরে ঘুমাতে পারছেন না। কথা শেষ না করেই তিনি চিকিৎসকের গালে থাপ্পড় মারেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারের মানববন্ধনে অংশ নেন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও মকবুলার রহমান ডায়াবেটিক হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন পঞ্চগড়ের নেতৃবৃন্দ, জেলা মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ক্লাবের সদস্য এবং বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেন্টেটিভ এসোসিয়েশন (ফারিয়া) পঞ্চগড়ের নেতাকর্মী ও বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি মির্জা নাজমুল ইসলাম কাজল, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক আদম সুফি, বিএমএ পঞ্চগড় জেলা শাখার সহ-সভাপতি ডা. বাহারাম আলী, পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. এসআইএম রাজিউল করীম রাজু, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আবুল কাশেম, ডা. আমির হোসেন (সার্জারি), স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ পঞ্চগড়ের সাধারণ সম্পাদক ডা. মনসুর আলম (এনেস্থেশিয়া), এবং ডা. এমআর রাজু (গাইনী) প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সারা দেশে একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা মনঃপূত না হলে চিকিৎসকদের উপর হামলা করা হয়। এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং উদ্বেগজনক। একজন চিকিৎসক সর্বদা তার সেরাটা দিয়ে রোগীর সেবা করে থাকেন। অথচ সেবাদানের পরও চিকিৎসকদের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটছে, যা চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতা সৃষ্টি করছে।
তারা আরও উল্লেখ করেন যে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে মাত্র ১০ জন চিকিৎসক সহস্রাধিক বহির্বিভাগ ও তিনশত অভ্যন্তরীণ রোগীকে সেবা দিয়ে থাকেন। তাই চিকিৎসকদের প্রতি এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ করা অনুচিত।
মানববন্ধনে চিকিৎসক ও কর্মচারীরা নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।