৬৭
শহর সংবাদদাতা: ঠাকুরগাঁয়ে ছাতার ব্যবহার এক দিনেই হয়ে উঠেনি। মানব সৃষ্টির শুরুর দিকে মানুষ কচু শাকের পাতা আর কলা গাছের পাতা দিয়ে ছাতার কাজ চালাতো। বৃষ্টি আর প্রচণ্ড রোদ হলেই প্রয়োজন হয় ছাতার। ঝমঝম আর টিপটিপ বৃষ্টি যেটাই বলেন, বৃষ্টিতে ছাতার কোনো জুড়ি নাই।
একসময় দেখা যেতো গ্রামে গ্রামে ফেরী করে ছাতা মেরামত করতে আসতো কারিগররা। আর মুহূর্তেই অস্থায়ী এই দোকানগুলোতে থাকতো উপচে পড়া ভিড়। এই পেশাতে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্ত সভ্যতার বিকাশের মাধ্যমে আজ আর চোখেই পরে না ছাতা মেরামত কারিগরদের। যেন পেশাটি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও শহরের এলাকায় ছাতা মেরামত করছিলেন সফিকুল। তিনি একটি দোকানের সামনে তার অস্থায়ী দোকান নিয়ে বসেছেন। হরেকরকমের ভাঙ্গা ছাতা মেরামত করছেন। আর কাজ বুঝে বেশ দামও নিচ্ছেন।
ছাতা মেরামত করতে আসা দুলাল বলেন, আমার বয়স ৪০বছর। ছোটবেলায় দেখতাম মোড়ে মোড়ে ছাতা মেরামতের মিস্ত্রি পাওয়া যেতো। কিন্ত এখন আর ছাতা মিস্ত্রিদের চোখেই পড়ে না। তাছাড়া, ছাতা মেরামত করতে যে টাকা লাগে, তার সাথে কিছু টাকা দিয়ে নতুন ছাতা কেনা যায়।
ছাতা মিস্ত্রি সফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়ি ভাউলারহাট গ্রামে। ছাতা মেরামত পেশা আমার বাপ দাদার রেখে যাওয়া পেশা। শহরের চোরাস্তা ও কালিবাড়ি এলাকায় ফুটপাতে থেকে কাজ করেন তিনি। বর্ষা মৌসুমে আমাদের কাজের হিড়িক পরে যেতো। আর এক মৌসুমে কাজ করেই চলতাম সারাবছর। কিন্ত আজকাল মানুষের রুচি বিদেশীদের মতো হয়ে গেছে।
ছাতার কোনো অংশ নষ্ট বা ছিঁড়ে গেলে এখন আর মেরামত করতে চান না। তবে, এখনো হাল ছাড়ি নি বাবা, ২মাস পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ছাতা মেরামত করি। আর বাকি সময় বাড়িতে ঘড়ির মিস্ত্রির কাজ করি।
ঠাকুরগাঁও বিভিন্ন এলাকায় কিছু মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগে মানুষ এতটা সৌখিন ছিল না। একটা ছাতা দিয়ে যুগ পার করে ফেলত। আর এখন মানুষ একটা ছাতা বেশী দিন ব্যবহার করে না। একটু থেকে একটু সমস্যা হলেই নতুন ছাতা কিনে নেয়।
যেখানে আগে মোরে মোরে ছাতা মেরামত করার কারিগর পাওয়া যেত, সেখানে এখন ৪ থেকে ৫ টা বাজার বা এলাকা ঘুরলে একজন ছাতা মেরামত করার কারিগর পাওয়া যায়। দিন যত যাচ্ছে ততই বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে এই পেশা