Home » নিউটন কেন বদমেজাজি ছিলেন?

নিউটন কেন বদমেজাজি ছিলেন?

by অনলাইন ডেস্ক
জ্ঞান-বুদ্ধিতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বলেই তাঁরা বিজ্ঞানী। তাঁদের অসাধারণ বুদ্ধির জোরেই পৃথিবী এত আধুনিক হয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষগুলোই মাঝে মাঝে অদ্ভুত সব কাণ্ড করে বসেন। কেউ কেউ খুব বিনয়ী হয়, কেউ খুব অহঙ্কারী ও বদমেজাজি হন।

নিউটন কত বড় বিজ্ঞানী, কত বড় মানুষ! কিন্তু তাঁর আচরণ ছিল হিংসুটের মতো। আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতো হয়নি তাঁর ছেলেবেলা। ছাত্রজীবনেই ভীষণ আত্মকেন্দ্রেকী আর বদরাগী ছিলেন।
বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া করেছেন, বন্ধুকে মেরে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার রেকর্ডও তাঁর আছে। বয়স যত বেড়েছে তত বেশি বদ হয়েছে নিউটনের মেজাজ। কিন্তু কেন এমন হলেন তিনি?খুব অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়েছিলেন আইজ্যাকের মা হানা নিউটন। পেয়েছিলেন স্বামীর অঢেল সম্পত্তি।

নিজে স্বামীহারা, অন্যদিকে স্মিথেরও সদ্য পত্নীবিয়োগ হয়েছে। দুজন নিঃসঙ্গ নর-নারী নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ করছেন। ধর্মের বাণী শোনাচ্ছেন, শুনছেন। একাকীত্ব আর কষ্টগুলোও ভাগ করে নিচ্ছেন। এ থেকেই পরস্পরের প্রতি একটা সহানূভতি তৈরি হবে, সেটাই নিয়ম। আর সেই সহানুভূতি প্রেমে রূপান্তরিত হতেও সময় নেয়নি। প্রথমে মন দেওয়া-নেওয়া, পরে বিয়ে। টাকা-পয়সার প্রতি একটু বেশিই লোভ ছিল হানার। বিয়ের সময় স্মিথের কাছ থেকে পণ হিসেবে নিয়েছিলেন চাষের জমি।হানা যখন স্মিথকে বিয়ে করছেন, তখন নিউটনের বয়স সবে চার। বিয়ের পর হানা স্মিথের সঙ্গে চলে গেলেন নতুন বাড়ি। আর শিশু নিউটনকে রেখে গেলেন তাঁর মা অর্থাৎ নিউটনের নানির জিম্মায়। মায়ের স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হলেন শিশু নিউটন। নানা-নানির পরিবারে অনেকটা নিভৃতে কাটছিল নিউটনের দিন। স্কুলে ভর্তি করানো হলো তাঁকে। কিন্তু তাঁকে ছেড়ে মায়ের চলে যাওয়টা মানতে পারেনি নিউটন। স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। পড়াশোনাও চলছিল বেশ। কিন্তু বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মিশতেন না। একাকী কী যেন ভাবতেন।

বিয়ের আট বছরের মাথায় স্মিথও মারা যান। সুতরাং দ্বিতীয়বার বিধবা হয়ে হানা আবার ফিরে আসেন। নিউটনকে বলেন, পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে যেন গ্রামে ফিরে আসে এবং চাষবাষে মন দেয়। বাধ্য হয়ে লেখপড়া ছেড়ে তাঁকে ফিরে আসতে হলো গ্রামে। কিছুদিনি কৃষিকাজ করলেন। কিন্তু ভবিষ্যতে যিঁনি মহাবিজ্ঞানী হবেন, তার কি কৃষিকাজে মন বসে! তাই নিউটন আসার পর জমিতে-খামারে ফলন তো হচ্ছিলই না, উল্টে বরং ক্ষতির অঙ্কটা বাড়ছিল দিনকে দিন।

নিউটনের মামা হানাকে পরামর্শ দিলেন ছেলেকে বাড়ি থেকে বিদেয় করে স্কুলে ভর্তি করানো হোক। কিন্তু হান্না ছেলের পেছনে টাকা খরচ করতে মোটেও রাজি নন তিনি। ঠিক সে সময় নিউটনের এক শিক্ষকের কাছ থেকে আসে লোভনীয় এক প্রস্তাব। স্কুলে ফেরৎ যদি পাঠানো নিউটনকে, খরচ সব ওই শিক্ষক দেবেন।
নিউটনকে স্কুলে ফের ভর্তি করানো হলো। কিন্তু বছরে মাত্র দশ পাউন্ড করে খরচ জোগাবেন হানা। বাকিটা নিউটনকেই জোগাড় করে নিতে হবে। আর হ্যাঁ, শিক্ষকের দানও নেওয়া চলবে না। নিউটন ভর্তি হলেন ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে। কিন্তু মায়ের দেওয়া টাকায় তো চলবে না। তখন ট্রিনিটি কলেজের সাবসাইজার ব্যবস্থা চালু ছিল। এই এ ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার জন্য কলেজে কোনো টাকা দিতে হত না। কিন্তু অনেকটা চাকরের মতো ফুট-ফরমায়েশ খাটতে হত শিক্ষার্থীকে। কলেজের একেকজন ফেলোর একজন করে এ ধরনের চাকর থাকত। এই ফেলোদের সহকারীর কাজ করতেই হতো এমনকী তাঁদের মল-মুত্রও পরিষ্কার করতে হত সাবসাইজারদের। অথচ নিউটনের মা বিশাল সম্পত্তির মালিক, বছরে তাঁরা আয় সাত শ পাউন্ডেরও বেশি!

এসব ঘটনা যেমন নিউটনকে রাগী-বদমেজাজী করে তুলেছিল। হিংসুটে ও বদমেজাজি হয়ে ওঠেন। গান, সিনেমা, নাটক, কবিতা ইত্যাদি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড তিনি ঘৃণা করতেন। তাই এসব থেকে নিজেকে সযত্নে সরিয়ে রাখতেন। কাউকে বিশ্বাস করতেন না, বন্ধু আর সহকর্মীদের সন্দেহের চোখে দেখতেন। ‘না’ শব্দটা একেবারেই পছন্দ করতেন না নিউটন। কেউ তাঁর বিরোধিতা করলেও খেপে যেতেন। তবে এই ব্যাপারগুলোই তাঁকে মহাবিজ্ঞানী হওয়ার পথেও বড় ভূমিকা রেখেছিল বলেই মনে করেন অনেকে।

সূত্র: বিট্রানিক

You may also like