বিয়ের আট বছরের মাথায় স্মিথও মারা যান। সুতরাং দ্বিতীয়বার বিধবা হয়ে হানা আবার ফিরে আসেন। নিউটনকে বলেন, পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে যেন গ্রামে ফিরে আসে এবং চাষবাষে মন দেয়। বাধ্য হয়ে লেখপড়া ছেড়ে তাঁকে ফিরে আসতে হলো গ্রামে। কিছুদিনি কৃষিকাজ করলেন। কিন্তু ভবিষ্যতে যিঁনি মহাবিজ্ঞানী হবেন, তার কি কৃষিকাজে মন বসে! তাই নিউটন আসার পর জমিতে-খামারে ফলন তো হচ্ছিলই না, উল্টে বরং ক্ষতির অঙ্কটা বাড়ছিল দিনকে দিন।
নিউটনের মামা হানাকে পরামর্শ দিলেন ছেলেকে বাড়ি থেকে বিদেয় করে স্কুলে ভর্তি করানো হোক। কিন্তু হান্না ছেলের পেছনে টাকা খরচ করতে মোটেও রাজি নন তিনি। ঠিক সে সময় নিউটনের এক শিক্ষকের কাছ থেকে আসে লোভনীয় এক প্রস্তাব। স্কুলে ফেরৎ যদি পাঠানো নিউটনকে, খরচ সব ওই শিক্ষক দেবেন।
নিউটনকে স্কুলে ফের ভর্তি করানো হলো। কিন্তু বছরে মাত্র দশ পাউন্ড করে খরচ জোগাবেন হানা। বাকিটা নিউটনকেই জোগাড় করে নিতে হবে। আর হ্যাঁ, শিক্ষকের দানও নেওয়া চলবে না। নিউটন ভর্তি হলেন ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে। কিন্তু মায়ের দেওয়া টাকায় তো চলবে না। তখন ট্রিনিটি কলেজের সাবসাইজার ব্যবস্থা চালু ছিল। এই এ ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার জন্য কলেজে কোনো টাকা দিতে হত না। কিন্তু অনেকটা চাকরের মতো ফুট-ফরমায়েশ খাটতে হত শিক্ষার্থীকে। কলেজের একেকজন ফেলোর একজন করে এ ধরনের চাকর থাকত। এই ফেলোদের সহকারীর কাজ করতেই হতো এমনকী তাঁদের মল-মুত্রও পরিষ্কার করতে হত সাবসাইজারদের। অথচ নিউটনের মা বিশাল সম্পত্তির মালিক, বছরে তাঁরা আয় সাত শ পাউন্ডেরও বেশি!
এসব ঘটনা যেমন নিউটনকে রাগী-বদমেজাজী করে তুলেছিল। হিংসুটে ও বদমেজাজি হয়ে ওঠেন। গান, সিনেমা, নাটক, কবিতা ইত্যাদি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড তিনি ঘৃণা করতেন। তাই এসব থেকে নিজেকে সযত্নে সরিয়ে রাখতেন। কাউকে বিশ্বাস করতেন না, বন্ধু আর সহকর্মীদের সন্দেহের চোখে দেখতেন। ‘না’ শব্দটা একেবারেই পছন্দ করতেন না নিউটন। কেউ তাঁর বিরোধিতা করলেও খেপে যেতেন। তবে এই ব্যাপারগুলোই তাঁকে মহাবিজ্ঞানী হওয়ার পথেও বড় ভূমিকা রেখেছিল বলেই মনে করেন অনেকে।
সূত্র: বিট্রানিক