১৮২
নুর হাসান, পঞ্চগড় প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ে নিখোঁজের পর পৃথক ঘটনায় দুই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা দুজনেই হত্যার শিকার হয়েছেন। নুরল ইসলাম (৪২) নামে একজনের মরদেহ বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়া নদী থেকে হাত পা বাধা অবস্থায় এবং টাবুল বর্মন (৪৮) নামে আরেকজনের মরদেহ পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নে এক আম বাগানের ভিতরে ড্রেন থেকে মাটিচাপা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
এদের মধ্যে নুরল ইজিবাইক ছিনতাই চক্র আর টাবুল পরকিয়ার বলি হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য জানান পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা। এ ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও তিনি অবহিত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয় টাবুল। তারপর থেকে তার আর কোন খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। বৃহস্পতিবার তার পরিবারের লোকজন পঞ্চগড় সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তারপর পুলিশ তার খোঁজে শুরু করে অভিযান। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ টাবুলের সাথে তার প্রতিবেশি মন্টু বর্মনের স্ত্রী ললিতা বর্মনের (৪০) সাথে পরকিয়ার যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। পরে ললিতা, তার মেয়ে মনিকা রানী বর্মন (২০), মেয়ে জামাই প্রভাত চন্দ্র রায় (৩৩) কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়। ললিতার দেয়া তথ্য মতেই পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের ডোলোপাড়া এলাকার এক আম বাগানের একটি ড্রেনে খুঁড়ে পুলিশ টাবুলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ মরদেহ ময়নাতদন্তে প্রেরণ করে। হত্যায় ব্যবহৃত কুঠারটিও জব্দ করে পুলিশ।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ললিতা জানায়, টাবুলের সাথে তার দীর্ঘদিনের পরকিয়ার সম্পর্ক। তবে সম্প্রতি তিনি টাবুলের সাথে আর সম্পর্ক না রাখার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু টাবুল তাকে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে বাধ্য করছিল। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ললিতা টাবুলকে হত্যার জন্য ৩০ হাজার টাকায় সদর উপজেলার টুনিরহাট এলাকার রফিকুল ইসলাম ও ডোলোপাড়া এলাকার মোন্তাজ আলীকে ভাড়া করেন। ৩১ জানুয়ারি কৌশলে ললিতা টাবুলকে মেয়ে জামাইয়ের বাড়ি হাড়িভাসার জয়গুণ মার্কেটে ডেকে নেয়। সেখান থেকে ললিতা ও তার মেয়ে জামাই প্রভাত মোটরসাইকেলে করে টাবুলকে নিয়ে যায় ডোলোপাড়ার আম বাগানে। সেখানে নিজে যাওয়া মাত্রই রফিকুল ও মোন্তাজ ধারালো কুঠার দিয়ে টাবুলকে আঘাত করে হত্যা করে পরিকল্পিতভাবে ড্রেনের মধ্যে মাটিচাপা দেয়। এ ঘটনায় ললিতা ও তার জামাতা প্রভাতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সেই সাথে দুই ভাড়াটে খুনিকে ধরার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়া নদীর সাওতালপাড়া ঘাট এলাকায় নিখোঁজের ৫ দিন পর নুরল ইসলাম (৪২) নামে এক ইজিবাইক চালকের হাত পা বাধা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে নদীর ওই স্থানে মরদেহটি ভেসে থাকতে থেকে স্থানীয়রা পুলিশকে জানায়। নিহত নুরুল ওই ইউনিয়নের কাউয়াখাল এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ ও তার পরিবারের লোকজন জানায়, গত ২৭ জানুয়ারি সকালে বাড়ি থেকে ইজিবাইক নিয়ে বের হয়ে যায় নুরুল। রাতে বাড়ি না ফিরলে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরদিন দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা এলাকায় তার ইজিবাইকটি পাওয়া যায়।
তারপর পরিবারের লোকজন প্রায় নিশ্চিত হয় যে তিনি ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন। কিন্তু তারপরও তার কোন খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। ২৮ জানুয়ারি তার স্ত্রী শেফালি বেগম বোদা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ৩০ জানুয়ারি অজ্ঞাত ৪ থেকে ৫ জনের নামে অটো ছিনতাই এবং অপহরণের মামলা করেন তিনি।
মামলার পর আলম (২৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। শুক্রবার বিকেলে নদীর ওই স্থানে মরদেহটি দেখতে পেয়ে খবর দিলে পুলিশ ও তার পরিবারের লোকজন গিয়ে তার মরদেহ শনাক্ত করে। তবে তার সাথে লক্ষাধিক নগদ টাকা অক্ষত ছিলো।
পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা জানান, আলম তার গাইবান্ধার ভায়রা জালালকে সাথে নিয়ে যাত্রী বেশে ঘটনার দিন নুরুলের ইজিবাইক ভাড়া করে সাওতালপাড়া ঘাটে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাকে হত্যা করে হাত পা বেধে নদীতে ফেলে দিয়ে তার ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায়। জালাল ও তার ছোট ভাই চিহ্নিত ছিনতাইকারী। তাদের নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আমরা আলমকে গ্রেপ্তার করেছি। আদালতে তার রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। সেই সাথে অন্য হত্যাকারীদেরও গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।