সোহেল রানা, ঠাকুরগাঁও: রিক্সা চালক, ভ্যানচালক ও পথচারী সহ সকল তৃষ্ণার্ত মানুষকে ডেকে ডেকে পানি পান করানো হচ্ছে। সঙ্গে দেয়া হচ্ছে একটি মিনি বিস্কুটের প্যাকেট। কেউ কেউ আবার শরবতও পান করছেন। গায়ের চামড়া পুড়া এই দাবদাহে একক্লাস পানি পান করার জন্য অনেকেই হাসিমুখে থামছেন এবং পানি পান করে সস্তির দম নিচ্ছেন।
সোমবার দুপুরে আব্দুল গফুর ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে ঠাকুরগাঁও রোড – পীরগঞ্জ মহাসড়কের দিঘিডাঙ্গী ভাউলারহাট মোড় এলাকায় সড়কের পাশে এভাবেই তীব্র গরমে মানুষকে ডেকে বিনামূল্যে এমন সেবা দিচ্ছেন কয়েকজন যুবক।
সরজমিনে দেখা যায় একটি টেবিলে স্বচ্ছ ঠান্ডা কিছু পানির বোতল, বিস্কুট, লেবু ও শরবত বানানোর যাবতীয় উপকরণ এবং কিছু স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাস। শরবত ও পানি পান করাতেই ব্যস্ত মাসুদ, রবিউল সহ আরও বেশ কয়েকজন যুবক। এদের মধ্যে কয়েজন তৃষ্ণার্ত মানুষকে ডাকছে- ভাই আসেন এক গ্লাস পানি পান করে যান। মানুষগুলো আসছে এবং তাদের বানানো শরবত পান করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।
দীর্ঘক্ষণ ধরে হাঁটছেন পথচারী লিয়াকত আলী। তৃষ্ণায় দূর্বল হয়ে পড়েছেন। হঠাৎ দেখলেন সড়কের পাশে পানি। প্রথমে তিনি পানি বিক্রির দোকান ভাবলেও পরে তাকে ডাকা হয় পানি পানের জন্য। তিনি জানান, অর্থ সংকটোর কারনে কোন বাহনে উঠিনি। তৃষ্ণা নিয়ে হাঁটছিলাম। পানি শরবত আর বিস্কুট দেখে প্রথমে দোকান ভেবেছিলাম। কাছে যেতেই তারা আমাকে ডাকে এবং বিস্কুট দেয়, শরবত ও পানি পান করায়। এমন উদ্যোগ সত্যি মহৎ।
ভ্যান চালক রফিক ইসলাম বলেন, প্যাডেল চালিত ভ্যানগাড়ি চালাই। এই তীব্র গরমে খুব কষ্ট হয়। অনেক হোটেলে পানি পান করি। কিন্তু এই সড়কের পাশে তেমন কোন হোটেল নাই। এসব স্থানে যারা পানি সরবরাহ করছে আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমেরিকান প্রবাসী কোন এক ব্যক্তি আব্দুল গফুর ফাউন্ডেশন পরিচালনা করেন। তীব্র দাবদাহে মানুষের আপ্যায়নের জন্য এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজেও এ ফাউন্ডেশন এগিয়ে আসেন যথাসাধ্য অনুযায়ী।
পানি সরবরাহকারী মাসুদ রহমান বলেন, সারাদিন যতক্ষণ রোদের তীব্রতা থাকে আমরা পানি সরবরাহ করে থাকি। যতদিন এই গরম থাকবে আমাদের সেবা অব্যাহত রাখার নির্দেশনা আছে। আমরাও কাজটি করতে পেরে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছি।
এ বিষয়ে আব্দুল গফুর ফাউন্ডেশনের স্থানীয় তত্বাবধায়ক ব্যবসায়ী মাহমুদ হাসান রাজু বলেন, এ ফাউন্ডেশন আমেরিকান প্রবাসী তার কোন এক পরিচিত ব্যক্তির। তাদের ইচ্ছা ও আগ্রহে এখাসে এমন বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এটা মূলত সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। মানুষজন তৃপ্তি পাচ্ছে একটু সস্তি পাচ্ছে এটাই আসলে স্বার্থকতা। এমন উদ্যোগ এই দাবদাহে অনেকের অনেক উপকারে আসতে পারে।