লোকায়ন ডেস্ক: বাংলাদেশ পুলিশের দিনাজপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের চারপাশ বদলে গেছে। একসময় যে জমিগুলো ছিল পরিত্যক্ত ও জঙ্গলে ঘেরা, সেখানে এখন আবাদ হচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, পটল, মুলা, গাজর, আলু, বেগুন, মরিচ, পালংশাক, ধনেপাতা, মটরশুটি, পুঁইসহ নানা রকমের শাক-সবজি। পাশাপাশি আবাদ হচ্ছে লেটুসপাতা, স্ট্রবেরি, চায়না কেভেজ, কালারকপির মতো বিদেশি সবজিও।
সেক্স ফেরোমনের (কীটপতঙ্গ দমনে এক ধরনের ফাঁদ) মাধ্যমে পোকা দমন ও জৈব সার দিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে আবাদ করা হয় এসব শাক-সবজি। এই চাষাবাদের মাধ্যমে ক্ষতিকর উপাদান ছাড়াই পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারছেন পুলিশ সদস্যরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, একসময় জমিগুলো ছিল পরিত্যক্ত ও জঙ্গলে ঘেরা। কার্যালয়ে কর্মকর্তা হিসেবে শেখ মো. জিন্নাহ আল মামুন যোগদান করার পর পুলিশ সদস্যদের অবসর সময়গুলো কাজে লাগিয়ে এসব জমি আবাদের উপযোগী করে তোলেন। এখন এই জমিতে উৎপাদিত এসব শাক-সবজি কার্যালয়ে কর্মরত সবার বাড়ির পুষ্টির চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখছে।
পুলিশ কনস্টেবল হারুন-অর রশিদ বলেন, মরুভূমির মতো এটা পরিত্যক্ত জায়গা ছিল। কোদাল দিয়ে কুপিয়ে এবং পরে বালু ও মাটি দিয়ে আমরা এটি জমিতে তৈরি করে এখানে সবজি আবাদ করি। এখানকার সবজি সব পুলিশ সদস্যের বাড়িতে পাঠানো হয়। এখানে কোনও কীটনাশক স্প্রে করা হয় না। রাসায়নিক সারও কম প্রয়োগ করা হয়। জৈব সার দিয়েই এসব শাক-সবজি আবাদ করি।
সোহেল রানা বলেন, এখানে জঙ্গল ছিল। ময়লা আবর্জনায় ভরা, পোকা-মাকড় ও শিয়ালের বসবাস ছিল। এখন এখানে শালগম, পেঁপেসহ নানান সবজি আবাদ করা হচ্ছে। চাকরির পাশাপাশি আমরা এটা করছি, দেখতেও ভালো লাগছে। মানুষজনও ভালো বলছে, যারা এখানে সেবা নিতে আসেন তারা বেশ আনন্দ পান এবং এই বাগানের প্রশংসা করেন। অনেক অফিসেই পরিত্যক্ত জায়গা আছে, যদি এমন উদ্যোগ নেওয়া হয় তবে অবশ্যই অনেক ভালো হবে।
মিন্টু বলেন, এখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নতুন স্যার আসার পর থেকে পরিচর্যা শুরু করি। স্যারের দিকনির্দেশনায় জঙ্গল কেটে বালু দিয়ে এবং মাটি দিয়ে গোবর সার ও জৈব সার মেশানো হয়। এখন এই মাটি উর্বর হয়েছে। এখানে শাক-সবজি আবাদ হচ্ছে। দেশি সবজির পাশাপাশি বিদেশি সবজিও রয়েছে। আমাদের সবার চাহিদা মেটে এই সবজি দিয়ে। কর্মকর্তাদেরও এখান থেকে সবজি দিই। এতে করে বাজার থেকে সবজি কেনায় যে অর্থব্যয় হতো তা অনেকাংশে সাশ্রয় হচ্ছে।
এই বাগানে প্রাথমিকভাবে ভালো ফলন হচ্ছে। আগামীতে আরও ভালো ফলন দেবে আশা করছি। আর দেখতেও বেশ ভালো লাগছে। প্রাকৃতিকভাবেও এসব গাছ আমাদের উপকার করছে, যোগ করেন তিনি।
উপপরিদর্শক গোলাম সামি বলেন, এখানে শিয়াল ও পোকা-মাকড়ের অভয়ারণ্য ছিল। মশা-মাছির উপদ্রব ছিল। এখন সেই পরিবেশ আর নেই। এখানে সবজির ভালো চাষ হচ্ছে। নিয়মিত এখানকার সবজি খেতে পারছি। একেবারে প্রাকৃতিকভাবে চাষ করা এসব সবজি অবশ্যই শরীরের জন্য ভালো।
দিনাজপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো. জিন্নাহ আল মামুন বলেন, এখানে প্রথম আসার পর দেখি চারপাশে বালু ও জঙ্গল। পরে সবাইকে এই সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করি। অবসর সময়ে আমরা এই সবজি চাষে সময় দিই। সবজি চাষে সবার অংশীদারত্ব রয়েছে। ৩৩ প্রজাতির শাক ও সবজি রয়েছে এখানে। দেশি শাক-সবজির পাশাপাশি বিদেশি সবজি রয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে এসব বীজ সংগ্রহ করে এই বাগান করা হয়েছে। হাতে-কলমে একটি বেসরকারি সংস্থা ও কৃষি দফতরের কর্মকর্তারা এসব ফসল উৎপাদনে আমাদের সহযোগিতা করছে।
তিনি আরও বলেন, একসময় রাস্তার দুই পাশে ফুলগাছ লাগাতাম। এবারে সবজি চাষ করেছি। এতে করে দেখতেও ভালো লাগছে। আবার পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। বিভিন্ন দফতরের পরিত্যক্ত জমিগুলো এভাবে শাক-সবজি আবাদ করলে পুষ্টির চাহিদা পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার্থেও ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।