Home » সরিষার আবাদ বাড়লেও ফলন নিয়ে হতাশ কৃষকরা

সরিষার আবাদ বাড়লেও ফলন নিয়ে হতাশ কৃষকরা

by নিউজ ডেস্ক
মোঃ জাহিদ হাসান মিলু: গতবছর ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় এবছর ঠাকুরগাঁওয়ে গতবারের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে সরিষার কিন্তু এবার সরিষা গাছের গ্রোথ ও ফুল ভালো আসলেও জেলায় অতিরিক্ত ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার জন্য গাছে ফল কম ধরায় ফলন নিয়ে হতাশ কৃষকরা। তবে এবিষয়ে চাষিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়ার কথা বলছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। 
 
দেখা যায়, জেলায় প্রায় প্রতিটি মাঠ ঘাটসহ আনাচেকানাচে দেখা মিলছে সবুজ সরিষা গাছের ডগায় ডগায় হলুদ ফুলের মনোমুগদ্ধকর ও নয়নাভীরাম দৃশ্য। ফুলের ঘ্রাণ ও হলুদ রঙের সমারোহ মনকারছে যেকারও। তবে এবার মাঠে ঘাটে সরিষার আবাদ বেশ শোভা পেলেও ফলন নিয়ে চমর হতাশায় পড়েছেন বেশিরভাগ চাষি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় এবার ১৯ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরিষার আবাদ হয়েছিল ১৫ হাজর ৯২৩ হেক্টর জমিতে। ওই বছর ফলন ও বাজার মূল্য ভালো পাওয়ায় এবার কৃষকরা বেশি করে চাষ করেন সরিষার।
জেলায় ফেব্রুয়ারি মাসে ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডার প্রকোপ কিছুটা কমলেও জানুয়ারি মাসে সরিষা গাছে ফুল আসার সময় অতিরিক্ত ঠান্ডা ও কুয়াশা থাকার কারণে গাছে ফল ধরেছে কম দাবি করে কৃষকরা বলছেন, শীতের জন্য নানা ঔষুধ ব্যবহার করেও মেলেনি প্রতিকার। এবার সরিষার ফলনে আবাদের খরচটুকুও উঠে আসবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামের ইসমাইল হোসেন। সরিষা চাষ করেছেন ৫০ শতকে বিঘার ৩ বিঘা জমিতে। তিনি বলেন, ‘গতবার সরিষার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় খরচ বাদে ৩ বিঘা জমিতে প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। এবারও সেই আশায় সরিষা করি। আল্লাহ দিলে গাছ পাত অনেক ভালো হয়েছে। কিন্তু এইবার হামরতি খুব কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে গাছত তেমন ফল আসেনি। ৩০ হাজার টাকা খরচ করে মনে হয় ধরা খাইলাম। এবার খরচটাও উঠে আসিবেনি। খালি মুইহে নাহায় হামারতি এইবার যারা যারা সরিষা করছে সবাই ধরা খাইছে। সবার ফসলের একই অবস্থা।,
দবিরুল ইসলাম নামে সরিষা চাষি বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এবার হামারতি কমবেশি সবাই সরিষা আবাদ করছে কিন্তু কুয়াশায় গাছত ফল ধরেনি।,
বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান বলেন, ‘গতবছর সরিষার ফলন খুব ভালো হয়েছিল। দামও পেয়েছিলাম খুব। তাই এবার এলাকার অন্যান্য কৃষকরা ব্যাপক সরিষা চাষ করছে। দুর্ভাগ্য এবার ঠাকুরগাঁওয়ে অতিরিক্ত ঠান্ডা ও কুয়াশার জন্য  গতবারের তুলনায় এইবার গাছে অর্ধেক ফল ধরেনি। চাষ করতে বিঘা প্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শুধু সেই টাকাটা এইবার তুলতে পারবো কিনা। এটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।,
সরিষা চাষি অখিল চন্দ্র বর্মন বলেন, ‘সরিষা ক্ষেতে এবার শীতের বিষ দেহেনেও কোন লাভ হয়নি। শীতের তাহেনে হামারতি অনেকের সরিষা গাছের ফুল নষ্ট হইগেছে। অনেকে আবার ক্ষেত কাটে গরু ছাগলোক খাওয়াচে। সরিষা করে এবার লসত পড়েগেইছি হামরা।,
তবে কিছু কিছু জায়গায় দেখা যায়, সরিষার ক্ষেতের গাছে বেশ ফল ধরেছে ও ফল ‍গুলো বেশ মোটাতাজাও হয়েছে।
এবিষয়ে কৃষকদের সার্বক্ষণিক নানা পরামর্শ দেওয়ার কথা জানিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘ভোজ্য তেল সয়াবিন এর দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা সরিষা আবাদ করে নিজেদের উৎপাদিত তেল তৈরিতে ঝুঁকছেন এবং সরিষার অপজাত খৈল ও গাছ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়। তাই জেলায় দিন দিন সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করনে তিনি।, এছাড়াও সরিষার চাষ আরও বৃদ্ধি করতে স্বল্প মেয়াদি আমন ধানের জাত চাষে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করছেন বলে জানান তিনি।

You may also like

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. সাকের উল্লাহ

স্বত্ব © ২০২৪ দৈনিক লোকায়ন