নবীন হাসান : চাকরি নয় সেবা এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁওয়ে কোনরকম অনিয়ম ছাড়াই মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেল ৩৫ জন নারী পুরুষ।
আনন্দে আত্মহারা এসব নবনিয়োগ প্রাপ্ত সদস্যরা দেখছেন পরিবার নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন।
মাত্র ১২০ টাকায় চাকরি। অবিশ্বাস্য হলেও এমনটাই দেখা গেছে ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই পুলিশের চাকরি পেলেন ৩৫ জন নারী-পুরুষ।
১২০ টাকা দিয়ে আবেদন ফরম পূরণের পর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাদের আর কোনো অর্থ খরচ করতে হয়নি।এরপর ধাপে ধাপে মেধা আর যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়েই মিলেছে নিয়োগ পত্র। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিজেদের প্রমাণ করতে পেরে খুশি নবনিযুক্ত কনস্টেবলরা।
সদ্য নিয়োগ পাওয়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পূজার তিজ্ঞা বলেন, আমার বাবা একজন দিনমজুর। আমার বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল তার মেয়ে পুলিশে চাকরি করবে। আজ আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। মাত্র ১২০ টাকার বিনিময়ে আজকে আমি এতদূর আসতে পেরেছি। আজ আমার অনেক খুশি লাগছে। আমি সর্বপ্রথম ধন্যবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তারপরে ধন্যবাদ জানাই ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপারকে। কখনো কল্পনা করতে পারিনি আমি পুলিশে চাকরি পাব।
তমাল চন্দ্র রায় বলেন, আমার বাবা দ্বিতীয় সংসার করায় আমার মা অনেক কষ্ট করে আমাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। আমার মা মানুষের বাসায় কাজ করে আমাকে পড়াশোনা শিখিয়েছে। আমার মাকে আর মানুষের বাসায় কাজ করতে হবে না। আমার মায়ের স্বপ্ন আমিপূরণ করতে সক্ষম হয়েছি । আমার মা অনেক আনন্দিত কারণ আমি পুলিশ সদস্য হতে চলেছি।
নিয়োগ পাওয়া নয়ন হোসেন বলেন, আমার বাবা একজন হোটেল কর্মচারী। একজন হোটেল কর্মচারীর ছেলে কখনো পুলিশের চাকরি পাবে এটা কল্পনা করতে পারিনি। ধন্যবাদ জানাই ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপারকে । আমি একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান পুলিশ অফিসার হতে চাই। দেশের সেবা করতে চাই। এবং পুলিশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করতে চাই। ছোট থেকে অনেক কষ্ট করে মানুষ হয়েছি। স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরি করব। নিজ যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছি খুব ভালো লাগছে।
নিয়োগে কোনরকম তদবির এবং কোন টাকা-পয়সা ছাড়াই নিজ যোগ্যতায় সন্তানের চাকরি হওয়ায় খুশি অভিভাবকরাও। চাকরির খুশিতে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এক অভিভাবক হাবিবুর রহমান বলেন, আমি ভ্যান চালাই। ছোট থেকে অনেক কষ্ট করে আমার সন্তানকে লালন পালন করেছি পড়ালেখা শিখিয়েছি। আজ নিজের যোগ্যতায় আমার ছেলে পুলিশের চাকরি পেয়েছে এটি আমার কাছে স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। আমি আমার ছেলের জন্য দোয়া করি সে একজন সৎ নিষ্ঠাবান পুলিশ অফিসার হবে।
আরেক অভিভাবক সিরাজুল হক বলেন, কোন প্রকার ঘুষ ছাড়া কোন বাড়তি টাকা ছাড়াই মাত্র ১২০ টাকায় আমার ছেলে পুলিশে চাকরি পেল। স্যালুট জানাই ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার কে যোগ্য প্রার্থীদেরকে নির্বাচিত করার জন্য।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, তিনটি ধাপ পার হয়ে আমরা ৩৫ জনকে নিয়োগ দিতে পেরেছি।
মেধার ভিত্তিতে শুধুমাত্র যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদেরকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। বাংলাদেশ পুলিশের এই যে মহান সেবা তারাও আগামী দিনে তাদের ট্রেনিং শেষ করে এই সেবায় শরিক হবে। আমাদের আইজিপি স্যারের সরাসরি নির্দেশনা এবং আমাদের ডিআইজি স্যারের তত্ত্বাবধানে ঠাকুরগাঁও জেলায় আমরা ৩৫ জনকে নিয়োগ দিতে পেরেছি। পুরো প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত ছিল তাদেরকে সকলকে ধন্যবাদ জানাই। আজকে ফলাফল প্রকাশের পর অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়েছেন। তাদের আনন্দঅশ্রু আমরা দেখেছি। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিজেকে রাখতে পেরে গর্বিত মনে করি। আমি মনে করি এই টিম বাংলাদেশ পুলিশের জন্য আরো দক্ষতার সাথে কাজ করবে। পুলিশের ভাবমূর্তি আর উজ্জ্বল করবে।
ঠাকুরগাঁওয়ে ১৬৫০ জন আবেদনকারীর মধ্যে কয়েক ধাপের বাছাই পর্বে টিকে চাকরি পেলেন ৩৫ জন।